রাজশাহী বোর্ডে মাধ্যমিকে ঝরে গেল ২৭ হাজার শিক্ষার্থী

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-27 06:18:01

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বছরের শুরুতে বিনামূল্যে নতুন বই, উপবৃত্তিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে সরকার। তবুও লেখাপড়ায় মনোযোগী রাখা যাচ্ছে না শিক্ষার্থীদের। রাজশাহী বোর্ডের অধীনস্থ উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় আশঙ্কাজনকহারে ঝরে পড়ছে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী। নবম শ্রেণিতে সফলভাবে রেজিস্ট্রেশন করলেও তারা অংশ নিচ্ছে না এসএসসি পরীক্ষায়।

তবে বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন- নতুন চালু হওয়া স্কুলগুলো ভুয়া শিক্ষার্থীদের নাম রেজিস্ট্রেশন করিয়ে নিজেদের স্কুলের সক্রিয়তা দেখানোর চেষ্টা করছে। ফলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে কম পরীক্ষার্থী। আর রাজশাহী অঞ্চলে এখনও উল্লেখযোগ্য হারে বাল্যবিবাহ হওয়ায় মেয়েরা ঝরে পড়ছে বেশি।

তবে বোর্ড কর্তৃপক্ষ মুখে এমন দাবি করলেও ঝরে পড়া ঠেকাতে স্কুলভিত্তিক মনিটরিং কমিটি গঠনের তোড়জোড় শুরু করেছে তারা। আর শিক্ষাবিদরা বলছেন- সরকার ঝরে পড়া ঠেকাতে যে উদ্যোগগুলো হাতে নিয়েছে, তা প্রত্যন্ত অঞ্চলে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে।

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করে ২ লাখ ৬ হাজার ৯৭০ জন শিক্ষার্থী। তবে ২০১৯ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৯০৯ জন। ফলে এক শিক্ষাবর্ষেই ঝরে পড়েছে ২৭ হাজার শিক্ষার্থী। গত বছর রাজশাহী বিভাগে স্কুল বেড়েছে ৩৩টি। আর শিক্ষার্থী বেড়েছে সাড়ে ৩৪ হাজার।

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. আনারুল হক প্রামাণিক বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, এই অঞ্চলে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় এখনও ব্যাপকহারে বাল্যবিবাহ হচ্ছে। ফলে গ্রামের বেশিরভাগ মেয়েদের ১৮ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তারা রেজিস্ট্রেশন করলেও চূড়ান্ত পরীক্ষায় আর অংশ নিচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, আরেকটি উল্লেখ করার মতো কারণ হলো- চলতি বছর টেস্ট পরীক্ষায় যারা পাস করেনি, তাদের পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। আর নতুন স্কুলগুলো পাঠদানের অনুমোদন পাওয়ার জন্য ভুয়া শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন দেখায়। ফলে কাগজে-কলমে এতো ভয়াবহ অবস্থা উঠে আসছে।

রাজশাহী জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলোতে আসলে পড়াশোনা নিয়ে কী হচ্ছে, তা দেখভালের কেউ নেই। শিক্ষা অফিসের পক্ষে তা মনিটরিং করাও সম্ভব হয় না। আমি মনে করি- দ্রুত এলাকাভিত্তিক সমাজের সচেতন ব্যক্তিদের নিয়ে স্কুল স্কুলে মনিটরিং কমিটি গঠন করা জরুরি।

জানতে চাইলে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, খবরের কাগজে পড়ি সরকার এই সুবিধা, সেই সুবিধা দিচ্ছে। হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য। আমি বলি- তা কী যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছাচ্ছে? যদি তা না হয়, তবে জেলা, উপজেলা প্রশাসন কী করছে?

তিনি আরও বলেন, ঝরে পড়ার দায় তো শুধু শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষকদের ওপর বর্তায় না। সরকারের প্রণোদনা পৌঁছানো, বাল্যবিবাহ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ ও সচেতন করার দায়িত্ব সরকারি পয়সায় বেতন নেওয়া কর্মকর্তাদের দায়িত্ব নিয়ে করতে হবে। তবেই সবাই সচেতহন হবে, ঝরে পড়া কমবে বলে আমি মনে করি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর