চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে পতেঙ্গা ও আনোয়ারাকে সংযুক্ত করতে যাওয়া ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ৩৬ শতাংশ এগিয়েছে। নদীর তলদেশে বোরিংয়ে কাজ হয়েছে ১৫০ মিটার। মূলত চট্টগ্রামের পতেঙ্গা অংশে মাটির নিচে দৃশ্যমান হচ্ছে সুরঙ্গপথ।
এর আগে ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করা হয়েছে। পতেঙ্গা ও আনোয়ারায় ভূমির মালিকদের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা গেছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানলের নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রাম শহর থেকে চাপ কমাতে 'ওয়ান সিটি টু টাউন' করার প্রত্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে এ টানেল। ফলে চট্টগ্রাম শহরের দক্ষিণাঞ্চল আনোয়ারা উপজেলায় শহর গড়ে তোলা হচ্ছে।
জানা গেছে, তিন দশমিক চার কিলোমিটার দীর্ঘ ও চার লেনের টানেল নির্মাণে বর্তমানে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৮০ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে চীন। বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে বহন করছে।
টানেল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দ্রুত গতিতে চলছে বোরিং মেশিন (টিবিএম) স্থাপনের কাজ। পতেঙ্গা অংশে মাটির নিচে ১৫০ মিটার দেখা যাচ্ছে সুরঙ্গ। কাজের সুবিধার্থে পতেঙ্গা প্রান্তে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা সর্বসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে নির্মাণ কাজ করছে চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি)। বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্প কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'প্রকল্পের কাজ ৩৬ শতাংশ শেষ হয়েছে, প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সাল পর্যন্ত। চার বছর মেয়াদের কাজ দ্রুত এগুনো যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে কাজ করতে হচ্ছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।'
২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে ঋণ চুক্তি সই হয়। ঐ সময় শি জিনপিং ও শেখ হাসিনা যৌথভাবে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করেন।
প্রথমদিকে এই প্রকল্পের ব্যয় প্রায় আট হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ধরা হলেও দেরিতে কাজ শুরু হওয়ায় ব্যয় এক হাজার ৪৩৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বেড়েছে। নির্মাণ ব্যয়ের বাইরে টানেলের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন বাবদ দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। টানেল নির্মাণকালীন চার বছরে সুদ বাবদ আরও ৪২৯ কোটি টাকা লাগবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রামের চিত্র বদলে যাবে। গড়ে উঠবে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের নিরবিচ্ছিন্ন ও যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগ। সংযোগ স্থাপন হবে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে। যুক্ত করা হবে কর্ণফুলী নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা শহরের সঙ্গে ডাউন টাউনকে। দুই টিউব সম্বলিত টানেলটির মোট দৈর্ঘ্য পতেঙ্গা ও কর্ণফুলী প্রান্তের পাঁচ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও ৭২৭ মিটার ওভার ব্রিজসহ ৯ দশমিক ২৭ কিলোমিটার।