বিয়ে ভেঙে দেওয়ার অভিযোগে হাতুড়ি পেটায় হত্যা

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 04:17:05

রাজধানীর বারিধারায় যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথে ডিউটিরত সিকিউরিটি গার্ড মোঃ শামীম হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটনসহ হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রো।

রোববার (১৯ মে) বার্তা২৪.কম-কে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনা্য় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি হলেন মোঃ কফিল। বুধবার (১৫ মে) কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি থানায় তার নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।’

পিবিআই সূত্রে জানা যায়, তদন্তকালে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, গুপ্তচর নিয়োগ ও ঘটনাস্থলের এটিএম বুথের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে মোঃ কফিলকে হত্যাকারী হিসেবে শনাক্ত করে। মোঃ কফিল এলিট ফোর্স সিকিউরিটি কোম্পানিতে গার্ড হিসেবে ভিকটিম শামীমের সাথে কর্মরত ছিলেন। হত্যার দিন শামীম বারিধারা জে-ব্লকের যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথে ও মোঃ কফিল একই ব্লকে ইউসিবি ব্যাংকের এটিএম বুথে রাত্রীকালিন ডিউটি করছিলেন।

আসামির কাছ থেকে উদ্ধারকৃত হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত জিনিসপত্র/ ছবি: বার্তা২৪.কম

 

পিবিআই জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মোঃ কফিল ও শামীম সম্পর্কে প্রতিবেশী ভাই। শামীম এলিট ফোর্সে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২০১৮ সালে কফিলকে ঢাকা নিয়ে আসেন এবং চাকরি দেন। কফিল ঢাকা এসে শামীমের বাসায় একমাস থাকেন। শামীমের বাবা-মা কফিলকে বাসায় থাকতে নিষেধ করলে তিনি বাসা ছেড়ে চলে যান।

পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসকালে সাবিনা নামের এক মহিলার সাথে পরিচয় হয়। পরে কফিলকে সাবিনা তার বোনকে বিয়ের করার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবে কফিল রাজি হয়ে বিয়ে ঠিক করলে এক পর্যায়ে সাবিনার স্বামী কফিলের সম্পর্কে খোঁজ খবর নিতে যান। কফিল সম্পর্কে ভালো কিছু না পেয়ে সাবিনা বিয়ে ভেঙে দেন। আর এই বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পেছনে কফিল মনে করতেন শামীমের হাত রয়েছে।

পিবিআই বলছে, বিয়ে ভেঙে দেওয়া, কফিলের ব্যক্তিগত কথা সিকিউরিটি কোম্পানির জোন কমান্ডারকে বলে দেওয়া ও ধারকৃত দুই হাজার টাকা ফেরত না দেওয়ায় কফিল শামীমের উপর ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

ঘটনার দুই-তিন দিন আগে কফিল ভাটারার নতুন বাজার থেকে হাতুড়ি, সাদা প্যান্ট, সোয়েটার (জ্যাকেট) ও মুখোশ কিনে একটি ব্যাগের ভেতর লুকিয়ে রাখেন। ঘটনার দিন ২০ জানুয়ারি (২০১৯) ইউসিবি ব্যাংকের এটিএম বুথের ছাদ থেকে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক রাখা ব্যাগটি নিয়ে সামনে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করেন কফিল।

ব্যাগ রাখার পর কফিল বারিধারার জে-ব্লকের যমুনা ব্যাংকের বুথে যান। গিয়ে দেখেন, শামীম চাদর মুড়িয়ে শুয়ে আছেন। তখন কফিল পকেট থেকে হাতুড়ি বের করে ঘুমিয়ে থাকা শামীমের মাথায় পাঁচটি আঘাত করেন এবং মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তারপর কফিল যমুনা ব্যাংকের ভেতরের ক্যামেরা ভেঙে বের হয়ে যান।

যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথ/ ছবি: সংগৃহীত

 

এরপর অন্য রাস্তা দিয়ে কফিল তার ডিউটিরত পোস্ট ইউসিবি বুথের ছাদ থেকে ব্যাগটি নিয়ে খুনে পরিহিত পোশাক পরিবর্তন করে এলিট ফোর্সের পোশাক পরেন এবং খুনে ব্যবহৃত পোশাক, মুখোশ ও হাতুড়ি তার ব্যাগের ভেতর রাখেন। এরপর ব্যাগটি নিয়ে বাসায় চলে যান। পরবর্তীতে কফিল শামীমের আত্মীয়-স্বজনের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করেন এবং শামীমের লাশ ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামে নিয়ে যাওয়া,দাফন করাসহ যাবতীয় কাজে ভিকটিমের পরিবারকে সহযোগিতা করেন।

এই হত্যাকাণ্ডের পর আসামি কফিল এলিট ফোর্সের চাকরি ছেড়ে দেন, এমনকি বকেয়া বেতন ও বোনাসের টাকা নেওয়ার জন্য পর্যন্ত ঢাকা আসেননি।

প্রসঙ্গত, বারিধারায় যমুনা ব্যাংকের এটিএম বুথের প্রহরী মোঃ শামীম ২০ জানুয়ারি (২০১৯) রাতে বুথে ডিউটি করছিলেন। এ সময় এটিএম বুথের ভেতরে শামীমকে মাথাসহ মুখ মণ্ডলে শক্ত লোহার রড বা হাতুড়ি দিয়ে জখম করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় শামীমের বাবা নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ভাটারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর