রংপুরে ৫ বছরে কমেছে প্রায় ৪৪ হাজার হেক্টর কৃষি জমি

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-22 09:05:47

এক সময়ের খাদ্য শস্য ভাণ্ডার খ্যাত রংপুরে দিন দিন কমে আসছে কৃষি জমির পরিমাণ। প্রতি বছরই হাজার হাজার হেক্টর জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। আবাসন আর শিল্পায়নের জালে হুমকিতে পড়তে যাচ্ছে উত্তরের কৃষি অর্থনীতি।

প্রতি বছর সারাদেশে মোট আবাদি জমির ৬৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে শুধু রংপুর বিভাগেই কমছে আট হাজার ৭৮১ হেক্টর জমি। অকৃষি খাতে চলে যাওয়া জমিতে গড়ে উঠছে শিল্প কলকারখানা, বিভিন্ন নামিদামি প্রতিষ্ঠান। সঙ্গে জনসংখ্যার বৃদ্ধির সাথে বাড়ছে চাহিদানুযায়ী বসত ভিটার সংখ্যাও।

আইনের বাস্তবায়ন না থাকায় এ পরিস্থিতি দিন দিন হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে কৃষি নির্ভর উত্তর জনপদের সাধারণ মানুষকে। এতে করে উত্তরের কৃষি অর্থনীতির বিপর্যয়ের সাথে দেখা দিতে পারে চরম খাদ্য সংকটও।

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার সেরুডাঙ্গা এলাকার আবু বকর সিদ্দিক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, '১০-১৫ বছর আগেও এই উপজেলায় কৃষি জমির পরিমাণ ছিল ঈর্ষণীয়। সেসময় দিগন্ত জোড়া কৃষি জমি আর ক্ষেতের পর ক্ষেত চোখে পড়ত। এখন সেই চেনা সবুজের ক্ষেতে শিল্প মালিকরা কলকারখানা তৈরি করেছে। কৃষি জমি আর কৃষি ক্ষেতে নেই।'

পীরগঞ্জের সংবাদকর্মী শরিফুল ইসলাম সুমন বলেন, 'আগে মহাসড়কের দুপাশ জুড়ে শুধু কৃষি জমি দেখা যেত। এখন সেই জমিতে অনেক সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান ও বসত বাড়ি গড়ে উঠেছে। দিন দিন রংপুর অঞ্চলে কৃষি জমি চলে যাচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠান আর অকৃষি খাতে। এটা আমাদের আগামী প্রজন্মের খাদ্য নিরাপত্তার দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।'

এ অবস্থায় কৃষি আন্দোলনকারীরা বলছেন, 'জমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইনের প্রয়োগ না থাকায় হারিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি। এতে করে কৃষি ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত উত্তরাঞ্চলে খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।'

রংপুরের সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন বাবলু বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'এসআরডিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী গত ৫ বছরে শুধু রংপুর বিভাগেই আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে ৪৩ হাজার ৯০৫ হেক্টর। আর প্রতি বছর রংপুর বিভাগের প্রায় আট হাজার ৭৮১ হেক্টর কৃষি জমি চলে যাচ্ছে শিল্প কলকারখানা আর বসত ভিটায়। এতে করে উত্তরাঞ্চলে অচিরেই খাদ্য নিরাপত্তা হুমকি প্রকট আকার ধারণ করবে। ঝুঁকির মধ্যে পড়বে এই জনপদের জীবন ও জীবিকা।'

আবাসন ও শিল্পায়নের ক্ষেত্রে কি ধরনের ভূমি ব্যবহার করা দরকার সে বিষয়ে ভাববার সময় এসেছে বলেও মন্তব্য করেন এই কৃষক নেতা।

এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দাবি, কৃষি জমি কমলেও উৎপাদনে ঘাটতি সৃষ্টি হয়নি। বরং মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদে উৎপাদন বাড়িয়ে আবাদি জমির ঘাটতি পূরণ করতে পারছে।

এ ব্যাপারে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'এক সময় কৃষি জমি পড়ে ছিল। এখন কিন্তু তা হচ্ছে না, বরং একই জমিতে দুই থেকে তিনবার করে চাষাবাদ হচ্ছে। আমাদেরকে অল্প জমিতে বেশি ফলন ও উৎপাদনের ধারাবাহিকতা ধরে প্রযুক্তি নির্ভর চাষাবাদ করতে হবে। তবেই কৃষি জমির ঘাটতি মোকাবিলা সম্ভব হবে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর