লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ার উপকূলবর্তী ভূমধ্যসাগরে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে নৌকাডুবির পর জীবিত উদ্ধার হওয়া সিলেটের রুবেল আহমদসহ ১৫ তরুণ দেশে ফিরেছেন।
মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তারা পৌঁছান। রুবেল আহমদের ছোট ভাই রাসেল আহমদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাও ইউনিয়নের ঘোপাল গ্রামের চমক আলীর ছেলে রুবেল আহমদ।
রাসেল আহমদ জানান, তার বড় ভাই রুবেল আহমদ সকাল সাড়ে ছয়টায় অন্য একজনের মোবাইল দিয়ে ফোন দিয়ে জানান, তারা ১৫ জন ঢাকায় পৌঁছেছেন। বিমানে বসা আছেন, কিছুক্ষণের মধ্যে নামবেন। তবে সিলেট ফেরার উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠার আগে ফোন দেয়ার কথা থাকলেও এখনো তিনি জানান নি।
সোমবার (২০ মে) দুপুরে রুবেল বাড়িতে ফোন করে জানিয়েছিলেন বাঙালি ১৫ জন অভিবাসীকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারা বিমানবন্দরে অবস্থান করছেন। রাতে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছাবেন।
রুবেলের মামা আবুল হোসেনের বলেন, ‘২০১৮ সালের জুন মাসে বিশ্বনাথ উপজেলার কাঠলীপাড়া গ্রামের চমক আলীর ছেলে আদম বেপারী রফিকুল ইসলাম রফিকের মাধ্যমে রুবেলকে লিবিয়া পাঠানো হয়। রফিক লিবিয়ায় থাকা তার ছেলে পারভেজের মাধ্যমে ইতালি পাঠানোর ব্যবস্থা করে। লিবিয়ার পৌঁছার আগে সাড়ে ৫ লাখ টাকা নেয় রফিক। এরপর গত ৯ মে লিবিয়া থেকে ইতালি পাঠানোর আগে তাদের কাছ থেকে আরও সাড়ে তিন লাখ টাকা নেয় তারা।’
আবুল হোসেনের দাবি, দালাল রফিক তাদের কথা রাখেনি। কথা ছিল বাংলাদেশ থেকে বিমানে লিবিয়া এবং সেখান থেকে মাছ শিকারের জাহাজে করে তাদের ইতালি পাঠানোর।
রুবেলের বরাত দিয়ে আবুল হোসেন বলেন, ‘রুবেলকে যখন প্লাস্টিকের বেলুনধর্মী নৌকায় তুলে দিতে চায় দালালচক্র তখন সে উঠতে চায়নি। জোর করে তারা ওই প্লাস্টিকের নৌকায় তুলে দেয়। তখন একসঙ্গে দুটি নৌকা ছেড়ে যায়। এরমধ্যে তাদের নৌকায় বিভিন্ন দেশের ৫৭ জন তরুণ ছিল। বাঙালি ছিল ১৫ জন। এরমধ্যে ১৩ জনই দালাল রফিকের মাধ্যমে লিবিয়া থেকে ইতালি যেতে চেয়েছিল। দু’দিন দু’রাত সাগরে ভাসার পর তারা তিউনেশিয়া উপকূলে পৌঁছালে কোস্টগার্ডরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। অন্যদিকে লিবিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া অপর নৌকা ডুবে গিয়ে যাত্রীরা নিখোঁজ হন বলে তারা জানতে পেরেছিল।’
রুবেলের মামা জানান, পরিবারের সদস্যরা নিঃস্ব হলেও কোনোরকম প্রাণ নিয়ে দেশে ফিরছেন রুবেল আহমদ। এটাই সান্ত্বনা।
দালাল রফিকের বিরুদ্ধে তারা মামলা করবেন বলেও জানান তারা।
উল্লেখ্য, গত ৯ মে সন্ধ্যায় লিবিয়া থেকে নৌকা পথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের লক্ষ্যে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে একটি বড় নৌকা যাত্রা করে। বড় নৌকা থেকে ছোট নৌকায় স্থানান্তরের সময় নৌকাটি ডুবে যায়। নৌকাডুবিতে নিহতদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সিলেটের ২২ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর উদ্ধার হওয়া ১৫ জনকে দেশে পাঠানো হচ্ছে।