এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ২৩০টি নৌকায় সাত হাজার কেজি মাছের ডিম পেয়েছেন জেলেরা। শনিবার (২৫ মে) সাড়ে ১১টা থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত আহরণকারীরা ডিম সংগ্রহ করছেন।
হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারী সুনীল জলদাস বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'রাতে পাঁচ বালতির মতো ডিম পেয়েছি। ডিম গুলো রেণু ফুটানোর প্রক্রিয়া করা হবে সকাল থেকে।'
হালদা নদীর রামদাশ হাট ঘাটের রতন মাঝি বলেন, 'আমার দুটি নৌকায় চার বালতি করে ডিম পেয়েছি।'
রাতে হালদায় মা ও মাছের ডিম সংগ্রহের তদারকি করেছেন ইউএনও রুহুল আমিন। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'রাতে ডিম পাচ্ছেন জেলেরা। তবে শুরুতে একটু কম পরিমাণে পেয়েছেন। রাত ২টা থেকে ৩টায় এই এক ঘণ্টায় প্রচুর ডিম পেয়েছেন তারা।'
রুহুল আমিন বলেন, 'মা মাছ ডিম ছাড়বে এই একটি দিনের জন্য আমরা বিগত ৮ মাস কাজ করেছি। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বালু উত্তোলন বন্ধ করেছি, জাল জব্দ করেছি, ইঞ্জিন চালিত নৌযান বন্ধ করেছি। জেলেদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। হ্যাচারি ও কুয়া সংস্কার করেছি। ফলে কাঙ্ক্ষিত ডিম পেয়েছি বলে আমি মনে করি।'
হালদার গবেষক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়াও সেখানে পরিদর্শনে যান। তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'আমি রাতে হালদা নদীতেই রয়েছি। ডিম সংগ্রহকারীরা প্রত্যেকেই কম বেশি ডিম পেয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ভাল রেণু পাওয়া যাবে।'
মোট ২৩০টি নৌকা ডিম সংগ্রহের জন্য নদীতে নেমেছিল। প্রত্যেকে মিলে প্রায় সাত হাজার কেজি ডিম পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
হাটহাজারী মৎস্য কর্মকর্তা আহজার উদ্দিন জানান, হালদা নদীর পাড়ে ৪০০ নৌকায় ডিম সংগ্রহকারীরা প্রস্তুত ছিল। কিন্তু গত দুইবার জু নষ্ট হয়ে যায়। এতে ডিম না ছাড়ায় জেলেরা হতাশ হয়েছিল। ফলে এবার ডিম না পাওয়ার সন্দেহে অনেক জেলে পানিতে নামেননি। ২৩০টি নৌকা নিয়ে যারা নেমেছে তারা সকলেই ডিম পেয়েছেন।
শুক্রবার (২৪ মে) সন্ধ্যার পর থেকে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণ শুরু হলে নদীর পাড়ে অবস্থান নেন ডিম আহরণকারীরা। বর্ষণের ফলে হালদার সঙ্গে সংযুক্ত খাল, ছরা ও নদীতে ঢলের সৃষ্টি হয়।
সাধারণত, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে প্রবল বর্ষণ হলে মা মাছ ডিম ছাড়ে। কিন্তু এবার বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকায় ঢলের প্রকোপ হয়নি। বৈশাখ মাসের মাঝামাঝিতে নদীতে মা মাছ নগণ্য পরিমাণ ডিম ছেড়েছিল। মা মাছ সাধারণত অমাবস্যা, অষ্টমী ও পূর্ণিমা তিথিতে নদীতে ডিম ছাড়ে।
এদিকে, মাছুয়া ঝর্ণা, শাহ মাদারি এবং মদুনা ঘাটসহ ৩টি হ্যাচারির ১০৮টি কংক্রিট ও ১০টি প্লাস্টিকের কুয়ায় হালদার ডিম সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এখানেই ডিম থেকে ফুটবে রেণু।
হালদা থেকে ২০১৮ সালে ২২ হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৭ সালে এক হাজার ৬৮০ কেজি, ২০১৬ সালে ৭৩৫ (নমুনা ডিম) কেজি, ২০১৫ সালে দুই হাজার ৮০০ কেজি এবং ২০১৪ সালে ১৬ হাজার ৫০০ কেজি ডিম সংগ্রহ করা হয়।