নুসরাতকে যেভাবে হত্যা করা হয়

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 10:20:43

ফেনী সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার চার্জশিট আগামীকাল বুধবার (২৯ মে) দাখিল করা হবে। চার্জশিটে ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই ১৬ আসামিরই মৃত্যুদণ্ড চেয়েছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

মামলায় মোট ৯২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর মধ্যে সাত জন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

ওইদিন নুসরাতের সঙ্গে কি ঘটেছিল জানতে চাইলে পিবিআই তদন্তকারী কর্মকর্তারা চার্জশিট অনুযায়ী বলেন...

অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদদৌলার নির্দেশে ঘটনার দিন (৬ এপ্রিল) সকাল ৭টার দিকে আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম, নুরুদ্দিন, হাফেজ আব্দুল কাদের মাদরাসা প্রাঙ্গণে আসেন এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী ৮টা থেকে ৯টা ২০ মিনিটের মধ্যে আসামিরা যার যার অবস্থানে চলে যান।'

আসামি শাহাদাত হোসেন শামীম পলিথিনে করে নিয়ে আসা কেরোসিন তেল ও অধ্যক্ষের কক্ষের সামনে থেকে একটি কাঁচের গ্লাস নিয়ে ছাদের বাথরুমের পাশে রেখে দেন। কামরুন্নাহার মনির কেনা দুইটি ও বাড়ি থেকে নিয়ে আসা একটিসহ মোট তিনটি বোরকা ও চার জোড়া হাত মোজা নিয়ে সাইক্লোন সেন্টারের তৃতীয় তলায় রাখেন।

শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ ও জোবায়ের ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে বোরকা ও হাত মোজা পরিধান করে তৃতীয় তলায় অবস্থান করেন। নুসরাত পরীক্ষা দিতে আসলে পরিকল্পনা অনুযায়ী পূর্বে অবস্থান করা উম্মে সুলতানা পপি নুসরাতকে বলেন, ছাদে তার বান্ধবীকে মারধর করা হচ্ছে।

নুসরাত দৌড়ে ছাদে যেতে থাকেন। দ্বিতীয় তলায় পৌঁছালে উম্মে সুলতানা পপি নুসরাতকে হুজুরের বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে বলেন ও ভয় দেখান, নুসরাত মামলা তুলবে না বলতে বলতে পপির সাথে ছাদে উঠলে আসামি কামরুননাহার মনি, শাহাদাত হোসেন শামীম, জোবায়ের, ও জাবেদ নুসরাতের পেছনে ছাদে যায়।

ছাদে তারা নুসরাতকে মামলা তুলে নিতে হুমকি প্রদান করে কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর দিতে বলেন। কিন্তু সে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়।

শাহাদাত হোসেন শামীম বাম হাত দিয়ে নুসরাতের মুখ চেপে ধরে এবং ডান হাত দিয়ে নুসরাতের হাত পেছনের দিকে নিয়ে আসে। উম্মে সুলতানা পপি নুসরাতের গায়ের ওড়না খুলে জোবায়েরকে দিলে জোবায়ের ওড়না দুভাগ করে ফেলেন। ওড়নার এক অংশ দিয়ে পপি ও মনি নুসরাতের হাত পেছনে বেঁধে ফেলেন, অন্য অংশ দিয়ে আসামি জোবায়ের নুসরাতের পা পেঁচিয়ে ফেলেন।

আসামি জাবেদ পায়ে গিট দেয়। সকলে মিলে নুসরাতকে ছাদের ফ্লোরে ফেলে দিলে শাহাদাত নুসরাতের মুখ ও গলা চেপে রাখেন। কামরুন নাহার মনি নুসরাতের বুকের উপর চাপ দিয়ে ধরে এবং উম্মে সুলতানা পপি ও জোবায়ের পা চেপে ধরেন। জাবেদ পাশের বাথরুমে লুকানো কেরোসিনের পলিথিন থেকে কাঁচের গ্লাসে কেরোসিন নিয়ে নুসরাতের পুরো গায়ে ঢেলে দেন।

শাহাদাতের ইশারায় জোবায়ের ম্যাচ দিয়ে নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন ধরিয়ে প্রথমে জোবায়ের ছাদ থেকে নামেন, এরপর উম্মে সুলতানা পপি ছাদ থেকে নেমে যেতে যান। ঐ সময় পূর্বের শেখানো মতে কামরুন নাহার মনি উম্মে সুলতানা পপিকে ‘কাম কাম চম্পা/শম্পা’ বলে ডেকে নিচে নেমে যান।

কামরুন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা পপি নিচে নেমে পরীক্ষার হলে ঢুকে যায়। আসামি জাবেদ ও শাহাদাত হোসেন শামীম সাইক্লোন সেন্টারের তৃতীয় তলায় গিয়ে বোরকা খুলে ফেলেন। জাবেদ শাহাদাতকে তার বোরকা দিয়ে দ্রুত নেমে পরীক্ষার হলে ঢোকেন।

শাহাদাত হোসেন শামীম নিচে নেমে মাদরাসার বাথরুমের পাশ দিয়ে চলে যান ও মাদরাসা পুকুরে বোরকা ফেলে দেন। আসামি জোবায়ের সাইক্লোন সেন্টার থেকে নেমে মাদরাসার মূল গেট দিয়ে বের হয়ে যান এবং বোরকা ও হাত মোজা সোনাগাজী কলেজের ডাঙ্গি খালে ফেলে দেন।

আসামি নুরু উদ্দিন সাইক্লোন সেন্টারের নিচে থেকে পুরো ঘটনার তদারকির দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া আসামি মহিউদ্দীন শাকিল ও মোহাম্মদ শামীম সাইক্লোন সেন্টারের দুই সিঁড়ির সামনে পাহারারত ছিলেন।

মাদরাসার মূল গেইটের পাশে ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন মামুন, আব্দুর রহিম শরীফ ও হাফেজ আব্দুল কাদের পাহারারত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করার পর আসামিরা নিরাপদ স্থানে সরে গিয়ে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালাতে থাকেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, নুসরাত জাহান রাফি অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় নিচে নেমে আসতে থাকলে কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল ও নাইটগার্ড আগুন নেভান।

ঐ সময় আসামি নুর উদ্দিনও নুসরাতের গায়ে পানি দেন এবং আসামি হাফেজ আব্দুল কাদের নুসরাতের ভাই নোমানকে ফোনে সংবাদ দেন। পরবর্তীতে নুসরাতকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। নুসরাত জাহান রাফি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুকালীন জবানবন্দী প্রদান করেন।

জবানবন্দীতে তাকে অগ্নিদগ্ধ করার ঘটনাটি একইভাবে বর্ণনা দেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর