গরিবের ঈদ আছে, আনন্দ নেই!

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 04:14:51

সকাল থেকে রাজধানীতে মেঘলা আকাশ আর থেকে থেকে ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি। এর মধ্যেই পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে গন্তব্যের দিকে ছুটছেন ঘরমুখো মানুষ। অধিকাংশ মানুষ ঘরমুখো হলেও ব্যতিক্রম ঢাকায় খেটে খাওয়া ভাসমান মানুষেরা। তাদের ঘরে ঈদ আসে ভিন্নভাবে।

এদের মধ্যে কারো কারো জীবনে ঈদ কখনোই উৎসবের আমেজে আসেনি, আবার কেউ কেউ ঈদ উৎসবের আনন্দ উপেক্ষা করে বাড়তি আয়ের আশায় ছুটে এসেছেন রাজধানীতে। তারা ঈদের নামাজ আদায় করেই নেমে পড়বেন রুটিরুজির সন্ধানে।

মঙ্গলবার (৪ জুন) রাজধানীর শাহবাগ, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, হাইকোর্ট মোড় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে ভাসমান শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।

গাইবান্ধার রিকশাচালক আকবর হোসেন ঈদ উপলক্ষে ঢাকায় এসেছেন গত পরশু, একটু বাড়তি আয় করার জন্য। বার্তা২৪.কম’কে তিনি বলেন, গরিবের ঈদ আছে, আনন্দ নেই! ঢাকায় ঈদ করবো, কাজের মধ্যেই আমাদের আনন্দ।

আকবর হোসেন জানান, তার দুই ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করে, তাদের বাড়তি খরচ যোগাতে রিকশা চালাচ্ছেন ঈদের সময়। দশ দিন রিকশা চালিয়ে যা আয় হবে তা নিয়ে বাড়িতে ফিরতে চান তিনি।

সবাই ঈদ করতে বাড়িতে যাচ্ছে আপনি ঢাকায় আসলেন জানতে চাইলে আকবর হোসেন বলেন, ঈদ সবার একরকম না, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ; আয়-ইনকাম একটু বেশি হলে সেটাই আমাদের ঈদ।

আকবরের মতো ঢাকায় রিকশা চালান মো. রেজাউল। বাড়ি তার ফরিদপুর, থাকেন ঢাকার মুগদার মান্ডায়। বার্তা২৪.কম’কে তিনি বলেন, ঈদের সময় ঢাকায় ইনকাম বেশি হয়। ঈদের নামাজ পড়ে রিকশা নিয়ে বের হবো, সন্ধ্যা পর্যন্ত চালালে ১৫০০ টাকার মতো আয় করা যাবে।

হাইকোর্ট মোড়ের কাছে দেখা যায় খোদেজা ও ফাতেমা নামে দুই কিশোরী মালা কিনছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে মা মরিয়ম। জাতীয় ঈদগাহ ময়দানের পাশের রাস্তায় পলিথিনের ছাউনিতে এই পরিবার।

খোদেজা ও ফাতেমার হাতে মেহেদির আলপনা; চুড়িও পরেছে তারা। এটাই দুই বোনের ঈদের সাজ। দুজনেরই গলায় রয়েছে ফুলের মালা। মালা কিনে দিয়েছেন তাদের মা মরিয়ম বেগম।

তিনি জানান, খোদেজা-ফাতেমার বয়স চৌদ্দ-পনেরো। দুজনেরই জন্ম হাইকোর্ট মোড়ে; বড় হয়েছে এখানেই।

বার্তা২৪.কম’কে ফাতেমা বলে, মালা কিনবো। জামা কাপড় আছে। দুজনই নতুন জামা পেয়েছি। রাস্তায় নতুন জামা-কাপড় দান করছিলো; সেখান থেকে দুই দিন আগে দুই দুটি জামা পেয়েছে বলে জানায়।

অন্যদিকে মালা বিক্রির টাকায় ঈদের শাড়ি কিনেছে নিপা। সে থাকে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে। নিপা বলে, ঈদের দিন সকাল থেকে মালা গেঁথে বিক্রি করবো, ঈদের দিন মালা বেশি বিক্রি হয়। এটাই আমাদের ঈদ।

নিপার মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১০-১৫ জন শিশু-কিশোর সারাবছরই ফুলের মালা গেঁথে বিক্রি করে। ঈদ উৎসবের সময়েও সে কাজে বিরতি নেই তাদের।

প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকাল থেকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফুল বিক্রি করা পথশিশুদের ছোটাছুটি দেখা গেছে। ঈদে নতুন জামা কেনার টাকা তুলতেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছে তারা। ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসব শিশু-কিশোরদের মাঝে নতুন নতুন জামা-কাপড় বিতরণ করে থাকে।

মঙ্গলবার দুপুরের দিকেও টিএসসির স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে পথশিশুদের ঈদের জামা কাপড় দিতে দেখা গেছে পজিটিভ বাংলাদেশ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের।

সংগঠনটির এক সংগঠক জাকিরুল ইসলাম বার্তা২৪.কম’কে বলেন, আজকে পথশিশুদের জামা-কাপড় দিচ্ছি; এর আগে সাত জেলায় ঈদ সামগ্রী বিতরণ করেছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর