পুরাতন কাপড়েই ঈদ করবেন পত্রিকাপ্রেমী মোসলেম

ময়মনসিংহ, জাতীয়

রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ), বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 06:52:29

সব জায়গায় ঈদের আনন্দ। ঘরে ঘরে নতুন কাপড়ের ঘ্রাণ। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় আনন্দে কিছুটা ভাটা পড়েছে। তারপরও খুশি সবাই। কিন্তু গৌরীপুরের বেকারকান্দা গ্রামের বাসিন্দা পত্রিকাপ্রেমী ও প্রতিবন্ধী মোসলেহ উদ্দিন ওরফে মোসলেমের ঘরে নতুন কাপড়ের ঘ্রাণ পৌঁছায়নি। ঈদে নতুন কাপড় তার কাছে আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতোই। এবার ঈদে সেই চাঁদ ধরা দেয়নি। তাই ঘরে থাকা পুরাতন কাপড়েই ঈদ উদযাপন করতে হবে তাকে। তবে এসব নিয়ে মনে কোনো দুঃখ নেই তার।

জানা গেছে, বেকারকান্দা গ্রামের বাসিন্দা মোসলেম। থাকেন একটি কুঁড়েঘরে। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। একজন সৎ শিক্ষক ও পত্রিকাপ্রেমী হিসাবে এলাকায় তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কিন্তু সহজ সরল হওয়ায় তিনি যেখানেই শিক্ষকতা করতে গেছেন সেখানেই ঠকেছেন। তারপরও টিউশনি করে জীবিকা নির্বাহ করলেও এখন বয়সের কারণে কোনো কাজ করতে পারেন না। তাই প্রতিবন্ধী ভাতার টাকাটাই তার একমাত্র সম্বল।

মঙ্গলবার (৪ জুন) সকালে গৌরীপুর পৌর শহরের ধান মহাল এলাকার সোনার বাংলা লন্ড্রির সামনে এই প্রতিবেদকের সাথে দেখা হয় মোসলেমের। এ সময় তার হাতে ছিল ধূসর রঙের পুরাতন একটি শার্ট। কিন্তু বিদ্যুৎ না থাকায় অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘ঈদের আগে প্রতিবন্ধী ভাতার কিছু টাকা পেয়ে ভেবেছিলাম নতুন কাপড় কিনবো। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টিতে আমার কুঁড়েঘরটা খুব নড়বড়ে হয়ে গেছে। ধসে পরলেই ৬০ বছরের সংগ্রহে থাকা পত্রিকাগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ভাতার টাকাটা জমিয়ে রেখেছি ঘর সংস্কারের জন্য। এজন্য ঈদে নতুন কাপড় কেনা হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিবছর ঈদ আসলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে নতুন কাপড় উপহার পাই। কিন্তু এবার কেউ দেয়নি। তবে এসব নিয়ে আমার কোনো দুঃখ নেই। কারণ নতুন কাপড়ে ঈদ করার অভিজ্ঞতা অনেকবার হয়েছে। এবার না হয় পুরনো কাপড়ের অভিজ্ঞতাটাও হবে।’

মোসলেম বলেন, ‘বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারি না। বৃদ্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীরাও এখন আমার কাছে পড়তে আসে না। আগে ঈদ আসলে অনেকেই উপহার দিতো। এখন সেটাও পাই না। গরিব মানুষ তো তাই আমার খবর এখন আর কেউ নিতে চায় না।’

মোসলেমের সাথে কথা বলতেই হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে আসে। কাপড় ইস্ত্রি করতে করতে লন্ড্রিওয়ালা বলেন, ‘মোসলেম ভাই, শার্টটা তো এক্কেবারে কুচুরি-ভুচুরি হইয়্যা গেছে। এইডা ইস্ত্রি কইরা কী করবেন?’

মোসলেম উত্তর দেন, ‘ভালো করে ইস্ত্রি করো, ‘এই শার্ট পড়েই ঈদের নামাজ পড়তে যাবো।’

গত ১০ জানুয়ারি মোসলেহ উদ্দিনকে নিয়ে বার্তা২৪.কমে ‘প্রতিদিন তিন মাইল পথ হেঁটে শহরে যান পত্রিকা পড়তে’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর