ঈদের বিকেলে ঘোরাঘুরিতে আনন্দ নগরবাসীর

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ্-দৌলাহ্ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪ | 2023-08-31 02:48:11

'আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে
জানি নে, জানি নে'

এই রবীন্দ্র সঙ্গীত যে কোনো প্রকৃতিপ্রেমীর মননে বেজে ওঠে। কিন্তু এবার সেটি কিছুটা আগেই ধরা দিল। ঈদের দিন যেখানে বেজে ওঠার কথা নজরুলের সেই বিখ্যাত গান ‘রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’ সেখানে মানুষের মনে ঠোঁটে জায়গা করে নিয়েছে রবীন্দ্র সঙ্গীত। আর এ জন্য অবশ্য দোষ দিতে হবে প্রকৃতিকেই। রবীন্দ্র-নজরুল চিরায়ত বিতর্কে আমরা না যাই। কেননা বৃষ্টি ভেজা ঈদের দিন, মানুষের ঈদ আনন্দকেও শীতল করে দিয়েছে।

সকাল থেকেই আকাশের ছিল মন খারাপ, ছবি: বার্তা২৪

 

দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর বাংলাদেশে আজ মঙ্গলবার (৫ জুন) উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। ঈদের চাঁদ দেখা নিয়ে রাতভর চলে বিভিন্ন নাটকীয়তা। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুসারে সপ্তাহজুড়েই দেশের আকাশসীমায় ছিল কালো মেঘের আনাগোনা। কখনো ছিল ভারী বৃষ্টি, আবার পরক্ষণেই ভ্যাপসা গরম, সেই সঙ্গে সূর্যের ক্ষিপ্ততা। মঙ্গলবার সারাদিন আকাশের মন খারাপ ছিল। কিন্তু তাতে যে চাঁদ দেখা যাবে না সেটা কারো ভাবনাতেও ছিল না। তাই মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে চাঁদ দেখার খবর না পাওয়ায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি ঘোষণা দিল, বৃহস্পতিবার ঈদ। কিন্তু ততক্ষণে কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারি, নাগেশ্বরী থেকে চাঁদ দেখার খবর ঢাকা এসে পৌঁছে।

এদিকে, পার্শ্ববর্তী ভারত পাকিস্তানেও চাঁদ দেখা গেছে। দুই ঘণ্টা পর কমিটির আবারো মিটিং! এবার ঘোষণা পাল্টে জানিয়ে দিল বুধবারই পালিত হবে ঈদ। অবসান হয় চাঁদ দেখা নিয়ে নাটকীয়তা।

আকাশের মন ভালো হতেই হাতিরঝিলে মানুষের ঢল নামে, ছবি: বার্তা২৪

 

অন্যদিকে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত থেকেই ভারী বর্ষণ শুরু হয় রাজধানীসহ কয়েকটি জেলায়। সকাল থেকে বৃষ্টি আরও তীব্রতর হয়। বৃষ্টির তীব্রতায় ঈদের নামায পড়তে গিয়েও জনদুর্ভোগে পড়ে মুসল্লিরা।

সড়কগুলো পানি ওঠায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। ঈদের নামাজ শেষ হলেও দিনভর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি রাজধানীবাসীকে অঘোষিত গৃহবন্দী করে রাখে। টেলিভিশন দেখে কিংবা বই পড়ে, পরিবারের সঙ্গে গল্প করেই গৃহবন্দীর সময়টা উপভোগ করেন নগরবাসী। কারও কারও বাসায় পোলাও মাংসকে অঘোষিত এক যুদ্ধে হারিয়ে ডাইনিং টেবিলের জায়গা দখল করে নেয় খিচুরি,মাংস।

সোহরাওয়াদী উদ্যানে কেউ দল বেঁধে আড্ডা দিচ্ছেন, কেউ এসেছেন পরিবার নিয়ে, ছবি: বার্তা২৪

 

তবে, বিকেলের পর থেকে ভালো হতে থাকে আকাশের মন। কমতে থাকে কান্না। সেই সুযোগে প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে মানুষজন ঘর থেকে বের হতে শুরু করেন। ভাঙে অঘোষিত কারাবন্দীর সাজা!

বিকেল থেকে রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সোহরাওয়াদী উদ্যান, রমনা, শাহবাগ, হাতিরঝিল এলাকা ঘুরে দেখা যায় অনেক মানুষ বের হয়েছেন। ঘুরে বেড়াতেই তাদের আনন্দ। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী রং বেরংয়ের নতুন পোশাক পড়ে মুক্ত পরিবেশের শীতল হওয়া গায়ে মাখিয়ে দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সেলফি বন্দী করে রাখছেন নিজেদের।

ঘুরতে এসে পরিবার নিয়ে একটি সেলফি না হলে যে ঈদটাই পানসে লাগবে, ছবি: বার্তা২৪

 

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দেখা যায়, খোলা মাঠে লাল-নীল দুই দলে বিভক্ত হয়ে ফুটবল খেলায় মেতে উঠেছেন কয়েকজন। বিবাহিত-অবিবাহিতদের মধ্যকার এই খেলা অনেকে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছেন। উদ্যানের স্বাধীনতা চত্বরের পাশে সারি সারি বেঞ্চ। বেঞ্চগুলোতে মানুষজন বসে আছেন, আড্ডা দিচ্ছে। একটা বেঞ্চও খালি পাওয়া ছিল দুষ্কর। বেঞ্চে যারা জায়গা পায়নি তারা গিয়ে উঠেছেন স্বাধীনতা চত্বরের বেদীতে। সেলফি ও ছবি তোলাতেই তাদের মূল আকর্ষণ। কেউ কেউ আবার টিকেট কেটে স্বাধীনতা জাদুঘরের ভেতরেও ঢু মেরে আসছেন।

এখানেই কথা হল চাকরিজীবী রানা আহমেদের সঙ্গে। স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বিকেল বেলা ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ঘুরতেই আনন্দ। কিন্তু সারাটা দিন বেরসিক বৃষ্টির কারণে মাটি হয়ে গেছে সব।’

নিজ পরিবারের তিন রাজকন্যা নিয়ে ঘুরতে এসেছেন বাবা-মা, ছবি: বার্তা২৪

 

পাশেই কিছু মানুষ ভিড় করেছেন উদ্যানের শিখা চিরন্তন অংশে। জ্বলন্ত অগ্নিশিখার সামনে দাঁড়িয়ে তারা ছবি তুলে ফ্রেমবন্দী করছেন ঈদের বিকেলকে।

উদ্যান থেকে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে গেলে দেখা যায় কিছুটা ভিড় রয়েছে সেখানে। ঈদের দিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা। তাই ছুটির দিনে পরিবার পরিজন নিয়ে জাদুঘরে ঘুরতে এসেছেন।

এখানে কথা হল আব্দুল মালেক দম্পতির সঙ্গে। মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছেন তারা। তারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘এবার ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয়নি। তাই শহরে ঈদ করছি। মেয়েকে নিয়ে জাদুঘর ঘুরতে এসেছি।’

জাতীয় জাদুঘরে এসেছেন অনেকেই, ছবি: বার্তা২৪

 

শাহবাগ থেকে হাতিরঝিলে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। তবে সেখানে মানুষের উপস্থিতি ছিল আরও বেশি। হাতিরঝিলের এফডিসি মোর থেকেই ঘুরতে বের হওয়া মানুষের সরব উপস্থিতি। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারে চড়ে কিংবা পায়ে হেঁটেই তারা এসেছেন হাতিরঝিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিছুটা সময় একান্তে কাটাতে। হাতিরঝিলের মধুবাগ ও মহানগর ব্রিজেও ছিল মানুষের ঢল।

হাতিরঝিলে কথা হয় দুই বন্ধু আসিফ ও শাহানের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘আমরা এমনিতেই হাতিরঝিলে ঘুরতে আসি। আড্ডা দেওয়ার জন্য এটা অনেকের প্রিয় জায়গা। আর ঈদের দিন বিকেলে আড্ডা আর ঘোরাঘুরি তো করতেই হয়।’

বৃষ্টি থামতেই ঈদকে উপভোগ করতে বেড়িয়ে পড়েন অনেকেই, ছবি: বার্তা২৪

 

ঈদের খুশিতে সবকিছুর দাম দ্বিগুণ!

ঈদের দিনে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালারা ঈদের খুশিতে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। যেন দাম বাড়ানো হচ্ছে ঈদের আনন্দ! অনেক ক্রেতা হাসিমুখে সে দাম মেনে নিলেও, কারো কারো মধ্যে ছিল অস্বস্তি।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলুনের দামাদামি করছিলেন কয়েকজন অভিভাবক। প্রতিটি ৩০ টাকায় বিক্রি করছিলেন ফেরিওয়ালা। কয়েকজন অভিভাবক জানালেন, দাম প্রায় দ্বিগুণ। শুধু বেলুনই নয়, উদ্যানের চায়ের দোকানে লাল কিংবা দুধ চায়ের জন্য দাম গুনতে হয়েছে ১০ টাকা করে। রিকশা ভাড়াও ছিল বেশি বেশি।

ঈদের খুশিতে দাম বাড়িয়ে ভালোবাসার বেলুন বিক্রি করছেন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা, ছবি: বার্তা২৪ 

 

একই চিত্র ছিল হাতিরঝিলেও। সেখানে হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করছিল রাসেল। স্বাভাবিক দাম ১০ টাকা হলেও আজকে দিন ২০ টাকায় বিক্রি করছিল সে। জানালো, ঈদের দিন হিসেবে বেচাকেনা খারাপ। বৃষ্টির দিন মানুষ কম বের হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর