মুক্তি পাচ্ছেন সেই ছোট ভাই, ওসিকে শোকজ

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-09-01 15:24:37

রাজশাহীতে বড় ভাই সেলিম হোসেন ওরফে ফজল মিয়ার (৪৫) যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে জেলে পাঠানো ছোট ভাই সজল মিয়াকে (৩৫) মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে কারামুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে সাজাপ্রাপ্ত বড় ভাইকে গ্রেফতার না পেয়ে ছোটভাইকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানোর দায়ে নগরীর শাহ মখদুম থানার ওসিকে সাত দিনের মধ্যে আদালতে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

বুধবার (১২ জুন) বিকেলে ভুক্তভোগী সজল মিয়ার আবেদনের প্রেক্ষিতে দীর্ঘ শুনানি শেষে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মো. মনসুর আলম এই আদেশ দেন। ফলে বিনা দোষে দেড় মাস জেল খাটার পর মুক্তি পাচ্ছেন পেশায় ডাব বিক্রেতা সজল মিয়া।

শুনানিতে অংশ নেওয়া রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোজাফফর হোসেন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে ওসির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।'

সজল মিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহন কুমার সাহা বলেন, 'বিনা অপরাধে প্রায় দেড় মাস জেল খাটানোর জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে আদালতে আরেকটি আবেদন করা হবে।'

গত ৩০ এপ্রিল মহানগরীর ছোটবন গ্রাম থেকে সেলিম হোসেন ওরফে ফজল মিয়া দেখিয়ে ছোট ভাই সজল মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেল থেকে মুক্তি পেতে গত ২৬ মে কারাগার থেকেই আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আবেদন করেন সজল। আবেদন আমলে নিয়ে উপযুক্ত প্রমাণ দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত।

আরও পড়ুন: বড় ভাইয়ের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে ছোটভাইকে জেলে পাঠাল পুলিশ!

রায়ে আদালত বলেন, 'জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী- কারাভোগ করা সজল মিয়ার জন্মতারিখ ২৭ মে ১৯৮৪ এবং পিতার নাম তোফাজ উদ্দিন। ২০০১ সালে দায়ের করা মামলার এজাহারে সেলিম হোসেন ওরফে ফজল মিয়ার বয়স লেখা রয়েছে ২৭ বছর। ২০০১ সালে ফজলের বয়স ২৭ হলে, বর্তমানে তার বয়স ৪৫ বছর হবে। কিন্তু জন্মতারিখ অনুযায়ী গ্রেফতার সজল মিয়ার বর্তমান বয়স ৩৫ বছর। যা অসামঞ্জস্য।'

আদালত আরও উল্লেখ করেন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ফজলের শারীরিক বর্ণনার সঙ্গে সজলের শারীরিক বর্ণনার মিল নেই। সজলের ভাই ও বোনদের দেওয়া এফিডেফিটের তথ্য মতেও আটক সজল ও দণ্ডপ্রাপ্ত ফজল তাদের সহোদর। কিন্তু একই ব্যক্তি নয়।

আদালত সার্বিক তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা শেষে সজল মিয়া এই মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে দ্রুত মুক্তির আদেশ দেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, মহানগরীর ছোটবন গ্রামের বাসিন্দা তোফাজের চার ছেলের মধ্যে সেলিম হোসেন ওরফে ফজল মিয়া তৃতীয়। ২০০১ সালের ২০ মে শিশু পাচারের দায়ে ফজল মিয়ার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা হয়। মামলার পাঁচদিন পরই গ্রেফতার হন ফজল মিয়া।

বেশ কিছুদিন পরে জামিনে বেরিয়ে গা ঢাকা দেন তিনি। এরপর থেকে তার কোনো হদিস পায়নি পুলিশ এবং পরিবারের সদস্যরাও। ফলে তার অনুপস্থিতিতেই চলে বিচারকার্য। ২০০৯ সালের ২৮ আগস্ট ওই মামলার রায়ে ফজলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

তবে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েও পলাতক ফজল মিয়াকে গ্রেফতারে ব্যর্থ হয় পুলিশ। মাঝেমধ্যেই ছোটবন গ্রামে ফজল মিয়ার পৈতৃক বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আসছিল শাহ মখদুম থানা পুলিশ। সবশেষ চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল অভিযানকালে ফজলকে না পেয়ে ছোট ভাই সজলকে ধরে ‘ফজল’ সাজিয়ে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

আদালতের রায়ের পর এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগরীর শাহ মখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ কোনো মন্তব্য করেননি। তবে গত ৩০ মে ওসি বার্তা২৪.কম-কে বলেছিলেন, 'আমরা ঠিক আসামিকেই ধরেছি। মামলার সাক্ষীরা আসামিকে শনাক্ত করেছেন। এ নিয়ে তারা এফিডেফিটও করে দিয়েছেন। সেটি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর