যে কারণে পিছিয়ে ময়মনসিংহের নারী ক্রিকেট

ময়মনসিংহ, জাতীয়

উবায়দুল হক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ | 2023-09-01 04:07:28

কলসিন্দুর, নামটা উচ্চারণ করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক ঝাঁক নারী ফুটবলারের মুখ! গারো পাহাড়ের পাদদেশে নিভৃত একটি গ্রামের নাম কলসিন্দুর। যাকে বলা হয় বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের আঁতুরঘর।


ময়মনসিংহ জেলার এই এলাকা থেকে উঠে এসেছেন মারিয়া, তহুরা, মার্জিয়া, সানজিদাসহ একদল নারী ফুটবলার। যারা জাতীয় দলের হয়ে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

ব্রহ্মপুত্র পাড়ের এ জেলায় ফুটবলে নারীরা যতটা এগিয়ে, ঠিক ততটাই পিছিয়ে ক্রিকেটে। পর্যাপ্ত সুযোগ ‍সুবিধার অভাব আর লোকলজ্জার ভয়ে তৃণমূল থেকে উঠে আসছে না নারী ক্রিকেটার।

পাশাপাশি খেলার মাঠের অভাব, নিরাপত্তাহীনতা আর আর্থিক দৈনতার কারণে বাড়ছে না নারী ক্রিকেটারের সংখ্যা- বললেন ময়মনসিংহের নারী ক্রিকেটার তৈরির কারিগর শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের নারী দলের কোচ এস এম মুখলেছুর রহমান।

অনুশীলন করছে কিশোরী ক্রিকেটাররা, ছবি: বার্তা২৪.কম

 

তিনি বলেন, মেয়েদের ক্রিকেটে আসার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হচ্ছে পরিবার। আবার সামাজিক প্রতিবন্ধকতা তো রয়েছেই। যারা আসে তাদের জন্য নেই পর্যাপ্ত সুব্যবস্থা। রয়েছে খেলার মাঠের অভাব৷ আলাদাভাবে অনুশীলন করার জন্য কোনো মাঠই নেই ময়মনসিংহে। মহিলা ক্রীড়া সংস্থার একটি মাঠ আছে, কিন্তু সেটি অনুশীলনের জন্য উপযুক্ত না। জেলা প্রশাসক যদি সেখানে সুব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে মেয়েরা প্রতিবন্ধকতা দূর করে অনুশীলন করতে পারবে। কারণ বাইরে অনেকেই বিরক্ত করে তাদের। অনেক কষ্ট করে আমরা অভিভাবকদের কাছ থেকে মেয়েদের নিয়ে আসি। এরপর যদি রাস্তাঘাটে তাদের কটূক্তি শুনতে হয়, তাহলে তো মেয়েরা আসবে না।

মুখলেছুর রহমান বলেন, ময়মনসিংহে অনেক সম্ভবনাময় নারী ক্রিকেটার আছে। তাদের ঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে এখান থেকেই অনেক মেয়ে বড় জায়গায় যেতে পারবে এবং তাদের দেখে অনেক মেয়েই অনুপ্রাণিত হবে। এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে।

অনুশীলন করছে কিশোরী ক্রিকেটাররা, ছবি: বার্তা২৪.কম

পাশাপাশি নারী ক্রিকেটারের সঙ্কট কাটাতে বিসিবির কাছে মেয়েদের প্রতি সু-নজর দেওয়ার তাগিদ কোচ মুখলেছুর রহমানের।

সম্প্রতি জেলার রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়াম মাঠে দেখা মেলে অনুশীলনে ব্যস্ত স্বর্ণ, লাকী, লাবিবাসহ একদল কিশোরী। তাদের চোখে-মুখে স্বপ্ন লাল-সবুজের জার্সি গায়ে একদিন জাতীয় দলের হয়ে মাঠ মাতাবে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলে জায়গা করে নিতে নিজেদের প্রস্তুত করছে তারা।

স্বর্ণলতা স্বর্ণ নামে এক কিশোরী ক্রিকেটারের মতে, প্রতিটি জেলাতেই একটি নারী একাডেমি থাকা দরকার, যেটি নেই। বিভিন্ন সরঞ্জামাদি সরকারিভাবে দেওয়া উচিত আগ্রহী নারীদের। একই সঙ্গে যারা অনুশীলন করবে তাদের জন্য জেলা ভিত্তিক নিয়মিত বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন করতে পারলে অনেক খেলোয়াড় বের হয়ে আসবে।

অনুশীলন করছে কিশোরী ক্রিকেটাররা, ছবি: বার্তা২৪.কম

 

সব প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে মেয়েদের ক্রিকেটে আসা উচিত বলে মনে করে আরেক কিশোরী ক্রিকেটার সাবিহা লাবিবা। তার ভাষায়, কে কি বলল সেটা কানে না নিয়ে নিজের আগ্রহ ও ইচ্ছা শক্তিকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

জাতীয় দলের সালমা-জাহানারাদের হাত ধরে এসেছে টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নারী ক্রিকেটকে আরো এগিয়ে নিতে সাকিব-তামিমদের মতো যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে উদীয়মান নারী ক্রিকেটারদের।

এ সম্পর্কিত আরও খবর