নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ নিয়ে নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (নোয়াব) বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করেছে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)। একই সাথে অষ্টম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ বাস্তবায়ন খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) দুপুরে সংগঠনটির সভাপতি নাজিমউদ্দীন শ্যামল ও সাধারণ সম্পাদক হাসান ফেরদৌস এক বিৃবতিতে বলেন, গণমাধ্যম কর্মীদের দীর্ঘ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার যখন নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ডের সুপারিশ বাস্তবায়নে চূড়ান্ত গ্রহণ করছে, সেই মুহূর্তে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াবের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতি দিয়ে নবম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড বাস্তবায়ন বাধা তৈরি ষড়যন্ত্র।
নোয়াবের বিবৃতি অবাস্তব ও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করে তারা বলেন, নোয়াব বিবৃতিতে যে পরিসংখ্যান দিয়েছে সে অনুযায়ী দেশের কোনো সংবাদপত্রই এখনও অষ্টম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করেনি। বরং নোয়াবের সদস্যরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভুয়া সার্কুলেশন দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে বিজ্ঞাপনের বাড়তি মূল্যসহ বিভিন্নর সুযোগ সুবিধা আদায় করছে। শুধু তাই নয়, অষ্টম বোর্ড অনুযায়ী স্নাতক স্বাতকোত্তর ডিগ্রধারী গ্রেড-৩ পর্যায়ে একজন সংবাদিকদের বেতন ৩৮ হাজার ৭৩ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কোনো সংবাদপত্রে তা দেওয়া হচ্ছে না। গুটি কয়েকজনকে ওয়েজবোর্ড রোয়েদাদ অনুযায়ী বেতন ভাতা দিয়ে অধিকাংশ সাংবাদিককে কম বেতন প্রদান করেছে, যা বেআইনি এবং শ্রম আইনের সুস্পষ্ট লংঘন।
অষ্টম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদের সুপারিশ অনুযায়ী সাংবাদিকদের যে সব সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে সংবাদপত্র মালিকরা দীর্ঘদিন ধরে সেসব সুযোগ সুবিধা না দিয়ে সরকারের কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শুল্ক মুক্ত কোটায় নিউজ প্রিন্ট আমদানী সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে আসছে। শুধু তাই নয়, নোয়াবের সদস্যভুক্ত পত্রিকা মলিকরা সরকারের কাছে পত্রিকায়-ব্যয় সংক্রান্ত যেসব তথ্য আয়কর বিভাগে জমা দিয়ে থাকেন তাতেও জালিয়াতির আশ্রয় নেন বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়।
নেতৃবৃন্দ নোয়াব মালিকদের আয়কর সংক্রান্ত তথ্য এবং ডিএফপি’র কাছে দেয়া তথ্য মিলিয়ে দেখার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
সিইউজে নেতৃবৃন্দ বলেন, ইতিপূর্বে সরকার সংবাদপত্রকে শিল্প হিসাবে ঘোষণা দেওয়ার পর নোয়াবের সদস্যরা শিল্প মালিক হিসাবে সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করছে। নোয়াব তাদের বিবৃতিতে বলেছে, অষ্টম সংবাদপত্র মজুরি বোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণার পর থেকে দেশে মুদ্রাস্ফীতি ৩৬.৩৪ শংতাশ ঘটেছে বলে করেছে। অথচ সংবাদপত্র মালিকরা সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধের ক্ষেত্রে তা কোনো দিনই অনুধাবন না করে নিজেদের তৈরি বেতন কাঠামো অনুযায়ী অনিয়মিতভাবে বেতন ভাতা পরিশোধ করে আসছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অবৈধ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সংবাদপত্র মালিকরা ভালোভাবেই জানেন, গণমাধ্যমকর্মীদের চাকরি আর সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের চাকরির ধরন এক রকম নয়। অথচ বেতন-ভাতা পরিশোধের ক্ষেত্রে সংবাদপত্র মালিকরা নতুন অজুহাত তুলে ধরেছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাপ্তাহে দুই দিন বন্ধ ভোগ করেন কর্মচারীরা। অতিরিক্ত কাজের জন্য শ্রম আইন অনুযায়ী ওভারটাইম দেওয়া হয়। সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু সংবাদপত্রে এর কোনোটাই দেওয়া হয় না। অধিকাংশ সংবাদপত্রে পরিচয়পত্র, নিয়োগপত্র, বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট, গ্রুপ ইন্স্যুরেন্সসহ শ্রম আইন অনুযায়ী অনান্য সুযোগ সুবিধা থেকে গণমাধ্যম কর্মিদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
‘নোয়াব তাদের বিবৃতিতে আয়কর গণমাধ্যমকর্মীদের দেওয়ার কথা বলেছে। এ প্রসঙ্গে সিইউজে পরিষ্কার করে বলতে চায়, গণমাধ্যম কর্মীরা আয়কর দিবে কিনা এ সম্পর্কে সিইউজের সাবেক সভাপতি বাবু অঞ্জন কুমার সেন বনাম রাষ্ট্র মামলায় এ সম্পর্কে মহামান্য হাইকোর্ট সুনিদিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন। সুতরায় এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলা মানে হচ্ছে আদালত অবমাননার শামিল।’
নেতৃবৃন্দ জানান, ২০১৩ সালের ৯ সেপ্টেম্বর সরকার অষ্টম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণা করে গেজেট প্রজ্ঞাপন জারি করে ওই দিন থেকে কার্যকর করা হয়। অথচ সংবাদপত্র মালিকরা নানা তালবাহানা করে দীর্ঘদিন তা ঝুলিয়ে রাখে। এমনকি তারা গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য ঘোষিত মহার্ঘ্য ভাতাও পরিশোধ করেনি। একইভাবে ২০১৮ সালে সরকার নবম ওয়েজ বোর্ড কমিটি গঠনের পর প্রথম সভায় ৪৫ শতাংশ হারে মহার্ঘ্যভাত প্রদানের প্রজ্ঞাপন জারি করে।সংবাদপত্র মালিকরা সরকারের এই প্রজ্ঞাপনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে প্রায় এক সোয়া এক বছর ধরে গণমাধ্যম কর্মীদের মহার্ঘ্যভাতা পরিশোধ না করে বঞ্চিত করা হয়েছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সাংবাদিক-কর্মচারী সংবাদপত্রে প্রাণ। সাংবাদিক-কর্মচারীদের বাদ দিয়ে সংবাদপত্র প্রকাশিত হতে পারে না। পবিত্র ইসলামেও শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে শ্রমের পাওনা পরিশোধের কথা বলা হলেও সংবাদপত্র মালিকরা যুগ যুগ ধরে গণমাধ্যম কর্মীদের যথাযথ বেতন ভাতা পরিশোধ না করে শ্রম শোষণ-নির্যাতন, কথায় কথায় চাকরিচ্যুতিসহ অমানবিক বিভিন্ন নির্যাতন করে আসছে। এমনকি এক্ষেত্রে তারা কোনো আইনও মানছে না। সংবাদপত্র শিল্পে অস্থিরতা তৈরি না করে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য বর্তমান সরকার নবম ওয়েজ বোর্ড রোয়েদাদ ঘোষণারর যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সংবাদপত্র মালিক তাদের সংগঠন নোয়বকে সহায়তার আহবান জানিয়েছে সিইউজে।
বিবৃতিতে গণমাধ্যমকর্মীদের ন্যায্য অধিকার বাস্তবায়নের পথ রুদ্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র থেকে সংবাদপত্র মালিকদের সরে আসারও আহবান জানানো হয়। অন্যথায় বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীরা দাবি আদায়ে রাজপথে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে বলেও হুঁশিয়ার করে দেওয়া হয়।