১০ বছরে শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাস্তবায়ন কমেছে

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 13:11:07

গত ১০ বছরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বাস্তবায়ন কমে গেছে। অথচ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনা দরকার। বাজেট পর্যালোচনায় এসব কথা জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

শুক্রবার (১৪ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে বাজেট পর্যালোচনায় সংস্থাটি এসব কথা জানায়। সংস্থাটির গবেষণাদলের পক্ষে বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাজেট পর্যালোচনা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘বাজেটে সবচেয়ে বর্ধিত অংশ যাচ্ছে পাবলিক সার্ভিসে। দ্বিতীয় বর্ধিত অংশ গেছে শিক্ষা খাতে। বলা হয়েছিল শিক্ষা খাতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হবে। শিক্ষা বাজেটের মধ্যে মূল ধারার শিক্ষা আছে, আবার ধর্মীয় শিক্ষা ও বিজ্ঞান প্রযুক্তিও আছে। এতো বড় বাজেটের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প আছে। বাজেটের থেকে এই প্রকল্প সরিয়ে নিলে শিক্ষায় ১৫ দশমিক ২ শতাংশ বাজেটের যে বিষয়টি রয়েছে সেখানে বড় পতন ঘটবে। যা পরিবহন খাতেরও নিচে চলে যেতে পারে।’

শিক্ষা-স্বাস্থ্যে ব্যয় মোট জিডিপির অনুপাতে বৃদ্ধি না পাওয়ার বিশ্লেষণ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘যারা ব্যাংকক সিঙ্গাপুরে গিয়ে শিক্ষা নিতে পারেন না ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে পারেন না, তাদের জন্য আপনি কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন? গণপরিবহন সংকটে যারা, তাদের জন্য কী গণপরিবহন তৈরি হচ্ছে কি-না, তাদের শিশুরা কি সে রকম মানের উচ্চ শিক্ষা পাচ্ছে কি-না, এটিই বড় বিষয়।’

‘দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বৈদেশিক অর্থায়নের উপর নির্ভরশীল রয়ে গেছে। এই কর্মসূচির অধীনে পাঁচটি মূল খাত- যোগাযোগ, অবকাঠামো জ্বালানি, শিক্ষা ও বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে ৭০ শতাংশ টাকা দেওয়ায় একটি ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘বাজেট নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী হয়নি। তথ্য ও উপাত্তের গরমিল রয়ে গেছে। বর্তমান সময়ে অর্থনৈতিক যে চাপ চলছে, বাজেটে তার কোনো স্বীকৃতি নেই। বাজেট দেওয়ার সময় যে অভিনব কায়দা ছিল, বাজেটের তথ্য উপাত্তে তা পাওয়া যায়নি। বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা না বাড়িয়ে বিত্তবানদের সম্পদের সারচার্জ সীমা বাড়ানোকে বৈপরীত্য হিসেবে দেখছে সিপিডি। অঘোষিত আয় আর অবৈধ আয়ের মধ্যে পার্থক্য করার সময় এসেছে। এছাড়া সরকারি ধান-চাল সংগ্রহে বরাদ্দ আরও বাড়ানো দরকার ছিল।’

তিনি বলেন, ‘পর্যালোচনা করে দেখেছি, অনেক বিত্তশালী করদাতার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। কিন্তু তারা তেমন কোনো আয় প্রদর্শন করেন না। ফলে প্রদেয় আয়কর কম হওয়ায় তাদের তেমন কোনো সারচার্জও প্রদান করতে হয় না। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ৫০ কোটি বা তার অধিক নিট সম্পদ রয়েছে, এমন করদাতার নিট সম্পদের উপর দশমিক এক শতাংশ অথবা প্রদেয় করের ৩০ শতাংশের মধ্যে যেটি বেশি সে পরিমাণ সারচার্জ আরোপের প্রস্তাব করছি।’

বড় অংকের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা ঋণ নিতে হবে ব্যাংক থেকে। এর ফলে তারল্য সংকটে ভুগতে থাকা ব্যাংক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেয়ার যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা না এলেও চাপে পড়বে ব্যাংকখাত। বাজেট পর্যালোচনায় এমন কথাই জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি।

অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সংলাপ পরিচালক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ, জ্যেষ্ঠ গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সহ গবেষকরা উপস্থিত ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর