প্রকৃত মৎস্যজীবীরা হাওর লিজ নিতে পারছে না

ঢাকা, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-24 08:50:45

পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেছেন, রামদাশ-হরিদাশ নাম দিয়ে আমাদের কাছে আসে, আমরা সুপারিশ দেই, দিতে হয়। ডিসিরা অনুমোদন দেন তারা হাওর লিজ পান। কিন্ত পর্দার পেছনে থাকে বড়রা। পুরো পরিকল্পিত যে কারণে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা হাওর লিজ পাচ্ছে না।

রোববার (১৬ জুন) কেআইবি মিলনায়তনে ‘হাওর ও চর উন্নয়নে আপনার জানা আপনার ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, হাওরের জন্য প্রকল্প নিয়ে আসেন আমি অনুমোদন দিবো। তবে সেই প্রকল্প হতে হবে বাস্তবতা ও জনকল্যাণে নিবেদিত। হাওরে বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করার জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সংকট থাকবে না।

গবেষণার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক আক্ষেপ করেন কেনো গবেষণা হচ্ছে না। গবেষণা বাড়াতে হবে।

পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সাহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, হাওর অঞ্চলের বেশিরভাগ লোক মৎস্যজীবী। জলাশয় তারা পাচ্ছে না। সরকার তাদের সমিতির নামেই দিচ্ছে। কিন্তু পেছেনে রয়েছে বিত্তশালীরা। এক সময় যে হাওর ২ লাখ টাকায় লিজ হতো সেটি এখন ২ কোটি টাকায় লিজ হচ্ছে। মৎস্যজীবীদের আওতার বাইরে চলে গেছে। চিন্তা করতে হবে কিভাবে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের হাতে দেওয়া যায়।

মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেন, হাওরে একটি দ্বন্দ্ব রয়েছে কেউ চায় দ্রুত পানি নেমে যাক চাষাবাদ করব। আরেক গ্রুপ চান পানি থাকুক মাছ চাষ করব। হাওরের ক্ষুদ্র কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর বড় কৃষকরা কিন্তু জমি কন্ট্রাক্ট দিয়ে নিজের টাকা ঠিকই বুঝে নয়।  হাওরের  যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন হওয়ায় চিত্র বদলে যাচ্ছে। গ্রামে গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। বর্তমান সরকার ব্যবস্থা সে উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. রকিবুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ৭ জেলার ৫৭ উপজেলায় হাওরের বিস্তৃতি রয়েছে। প্রায় ৮ হাজার বর্গকিলোমিটার হাওরাঞ্চলে ১ হাজার ৯৩৭ মিলিয়ন লোক বাস করে। জলের নিচে থাকে ৮ লাখ ৫৮ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমি।

আকস্মিক ও দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, ভারি বৃষ্টিপাতে দুর্বল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, অনুন্নত হাট-বাজার ব্যবস্থাপনা, স্যানিটেশনের অভাব, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাব, সামাজিক অবক্ষয়, খারাপ যোগাযোগ ব্যবস্থা, বর্ষা মৌসুমে কৃষকের বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া, অপ্রতুল শিক্ষা ব্যবস্থা, ঝরে পড়া শিক্ষার্থী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তুলনামুলক কম উপস্থিতিকে সমস্যা বলে চিহ্নিত করেন।

প্রবন্ধে বলেন, হাওরে দেশের ১০ শতাংশ ধান উৎপাদিত হয়। সে কারণে জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন, মাছ রফতানি, আগাম বন্যা থেকে ফসল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ, স্কুল ফিডিং, পরিবেশ বান্ধব পর্যটন গড়ে তোলাসহ বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।

বাংলাদেশে ৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৪৮ হেক্টর চরাঞ্চল রয়েছে। বহ্মপুত্র,  যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা নদীর ৫ শতাধিক শাখা প্রশাখা রয়েছে। এসব নদী বছরে ১ থেকে আড়াই মিলিয়ন টন পলি বহন করে। এই পলির ৩০ শতাংশ তলানি পড়ে চরের সৃষ্টি হচ্ছে।

চরাঞ্চলে ফসল উৎপাদনে লাগসই প্রযুক্তির অভাব, কৃষকের জ্ঞানের অভাব, মানসম্মত বীজের অভাব, যাতায়াত ও অনুন্নত বাজার ব্যবস্থাপনা, কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত না করা, ফড়িয়াদের দৌরাত্ব্যসহ বেশ কিছু সমস্যা তুলে ধরা হয় প্রবন্ধে।

নদীর পলি বহন ক্ষমতা বৃদ্ধি, সেচ ব্যবস্থার আধুনিকায়নের সুপারিশ তুলে ধরেন রকিবুল ইসলাম খান।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাওর ও চর উন্নয়ন ইনস্টিটিউট আয়োজিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর লুৎফুল হাসান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর