বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, সচেতনতা বাড়াতে তৎপর দুই সিটি 

ঢাকা, জাতীয়

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 11:59:44

শুরু হয়েছে বর্ষা মৌসুম। বর্ষার সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ছয় মাসে ৪৩৯ জন ডেঙ্গু রোগীর সন্ধান মিলেছে। যাদের মধ্যে দুইজন এরইমধ্যে মারা গেছে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বলছে ডেঙ্গু এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে, কোনোভাবেই মহামারির পর্যায়ে পৌঁছেনি।

বর্ষা মৌসুমের সঙ্গে এডিস মশার একটা আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। কেননা বর্ষায় ফুলের টব, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ডাবের খোসা, বাসার ছাদসহ বিভিন্ন জায়গায় পানি জমে থাকে। আর এই জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতেই জন্ম নেয় এডিস ইজিপটাস ও এডিস এ্যালবোপিটাস মশা। এই দুই ধরণের মশাই ডেঙ্গু ভাইরাস বহন করে।

বছরে তিনবার মশার ওপর জরিপ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এবারও মার্চের ৩ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ডে সার্ভে করা হয়। সেই জরিপে উত্তরের ৭টি ওয়ার্ড এবং দক্ষিণের ১৫টি ওয়ার্ডকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

জরিপ শেষে দুই সিটি করপোরেশনে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। সবশেষ ১৩ জুন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোল রুমের রিপোর্ট অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৪৩৯ জন।

গত বছর ১২টি হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট দিলেও এবার ২০টি হাসপাতাল থেকে কন্ট্রোল রুমে রিপোর্ট দিয়েছে ডেঙ্গুর রোগীর সংখ্যা জানিয়ে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওই সার্ভেতে উল্লেখ করা হয় দক্ষিণের গ্রোথ অব ইনডেক্স অনেক বেশি। দেখা গেছে ১০০টি জায়গার মধ্যে ৮০টিতেই ডেঙ্গুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তাও আবার অভিজাত এলাকাতেই বেশি। বিশেষ করে মিন্টু রোড এবং বেইলি রোডের মন্ত্রিপাড়ার বাসাগুলোতে।

এছাড়া দুই সিটির অধিক ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে রয়েছে-বনানী, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, গাবতলী, মগবাজার, মালিবাগ চৌধুরী পাড়া, মিরপুর-১, মহাখালী ডিওএইচএস, নাখালপাড়া, পূর্ব শেওড়াপাড়া, টোলারবাগ, উত্তরা-৯ নং সেক্টর, বাংলাবাজার, ধানমন্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, গুলবাগ, কলাবাগান, মেরাদিয়া, মিন্টু রোড এন্ড বেইলি রোড ও শান্তিনগর। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গুর প্রকোপ মন্ত্রিপড়া খ্যাত মিন্টু রোড ও বেইলি রোডে রয়েছে। এখানে ৪০ শতাংশ ডেঙ্গুর বংশ বিস্তারের সম্ভাবনা দেখা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৮ সালে সারাদেশে ১০ হাজার ১৪৮ জন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। এবছর এখন পর্যন্ত ৪৩৯ জন রোগীর সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (ম্যালেরিয়া এন্ড রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগ) ডা. এম এম আখতারুজ্জামান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘সাধারণত মে মাসের শেষে বা জুনের প্রথম দিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। এই সময় বর্ষা মৌসুমের সঙ্গে ডেঙ্গুরও মৌসুম। আমরা মার্চ মাসে অ্যান্টোমলোজিক্যাল সার্ভে অনুযায়ী দুই সিটিকে জানিয়ে দিয়েছি কী করতে হবে। মশা মারার কাজ সিটি করপোরেশনের। এখনো মহামারি আকারে না পৌঁছালে মানুষকে সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।’

নিজেদের করণীয় সম্পর্কে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. মোমিনুর রহমান মামুন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত কাজ আমরা করছি। এর বাইরে আগামী ২৯ জুন একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে নগরবাসীর সচেতনতা বাড়াতে কাজ করব। এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। তবে ডেঙ্গু যেহেতু স্বচ্ছ পানিতে জন্মায় তাই মানুষকে আগে সচেতন হতে হবে।’

ডিএসসিসি প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (ডা.) মো. শরীফ আহমেদ বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমাদের যেসব এলাকায় এডিস মশার বিস্তার বেশি সেসকল এলাকায় বাড়তি কাজ করা হচ্ছে। এই মাসেই আমরা বিশেষ ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নেব। যেহেতু ডেঙ্গু স্বচ্ছ পানিতে জন্মায় তাই সচেতন করা ছাড়া আমাদের করণীয় খুব বেশি নেই। তারপরেও আমরা ফগিং ও লার্বিসাইডিং করছি। শুধু আমাদের দেশে নয় থাইল্যান্ড, ভারতেও ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। আমাদের দেশের মানুষ ভারত যাচ্ছে, থাইল্যান্ড যাচ্ছে কাজেই কেউ ডেঙ্গুর ভাইরাস বহন করে আনলেও কিছু করার থাকছে না। তারপরেও আমরা সর্তক আছি। এখনো এলার্মিং পর্যায়ে পৌঁছেনি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর