ভোটে ফের ব্যবহার হচ্ছে 'বিগড়ে' যাওয়া সেই ট্যাব

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 10:30:57

নির্বাচন ব্যবস্থাপনা দ্রুততার সঙ্গে করার জন্য কেনা ৪২ হাজার ট্যাবের সুফল পায়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ফলাফল সরবরাহে এই ট্যাব 'বিগড়ে' যায়। ভুল তথ্যের কারণে সেই ট্যাবের মাধ্যমে পাঠানো তথ্য বাতিল করে পুরনো পদ্ধতিতে ফল সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষামূলকভাবে সর্বশেষ ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) নির্বাচনের সবগুলো কেন্দ্রে এই ট্যাব ব্যহার করা হয়।

ইসি বলছে, সেই নির্বাচনে সফলতার কারণেই পঞ্চম ধাপের ভোটের পাঁচটি উপজেলার ভোটে ট্যাব ব্যবহার হচ্ছে।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৭ জুন) গাজীপুর সদর, নারায়ণগঞ্চ বন্দর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, নোয়াখালী সদর, রাজশাহীর পবায় ট্যাব ব্যবহার করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভোট কেন্দ্রের সার্বিক প্রতিবেদন এবং ফলাফল পাঠানো হবে। প্রিজাইডিং অফিসারদের মাঝে বিতরণ করা ট্যাবে থাকবে সেন্টার রেজাল্ট ডিসক্রিমিনেশন অ্যান্ড রিপুটিং (সিআরডিআর) অ্যাপ্লিকেশন থাকবে।

প্রত্যেক প্রিজাইডিং অফিসারকে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দেওয়া হবে, যা দিয়ে অ্যাপ্লিকেশনে প্রবেশ করা যাবে। এই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে প্রিজাইডিং অফিসার দুই ঘণ্টা পর পর ভোটকেন্দ্রের প্রতিবেদন পাঠাবেন।

পরবর্তীতে ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনার পর প্রাপ্ত ফলাফল ও বিবরণী ফরমে লিপিবদ্ধ করবেন। একই সাথে তিনি ট্যাবের অ্যাপ্লিকেশনে প্রাপ্ত ফল এন্ট্রি করবেন এবং প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষরকৃত ফাল বিবরনী ছবি তুলে ফলাফলের সাথে সংযুক্ত করে পাঠাবেন। কারিগরি সহায়তার জন্য ভোটকেন্দ্রে কম্পিউটার সার্ভিস লিমিটেডের পক্ষ থেকে এক জন করে প্রতিনিধি থাকবেন।

নির্বাচন কমিশনকে ওই ৪২ হাজার ট্যাব সরবরাহ করছে কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেড। দ্রুত ফল পাঠানোর জন্য এ ট্যাবগুলো কেনার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। দরপত্র অনুযায়ী, ট্যাবগুলোর গ্যারান্টি তিন বছর। কিন্তু সরবরাহের সাতদিনের মাথায় ব্যবহার করতে গেলে ট্যাবগুলোয় সমস্যা ধরা পড়ে। গত ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত তৃতীয় ধাপের উপজেলা ভোটে রংপুর সদর, গোপালগঞ্জ সদর, মানিকগঞ্জ সদর ও মেহেরপুর সদর উপজেলার ভোটে ট্যাব ব্যবহার করা হয়। সেখানে ইলেকট্রনিংক ভোটিং মেশিনেও ভোট নেওয়া হয়।

স্বাভাবিকভাবেই ভোটের ফল দ্রুত পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই ট্যাবের মাধ্যমে ফলাফল পাঠাতে গিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। পরে শেষ পর্যন্ত ট্যাবের মাধ্যমে পাঠানো তথ্য বাতিল করে পুরনো পদ্ধতিতে ফল সংগ্রহ করা হয়। যে কারণে এই দু’টি উপজেলার ফল ঘোষণা করতে বিলম্ব হয়। এই ঘটনার পর ইসি ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ট্যাবের ব্যবহার বাতিল করে।

তবে ট্যাবের দায়িত্ব থাকা কর্মকর্তারা বলছেন, আগের সফটওয়্যারে কিছুটা সমস্যা ছিল। ট্যাবটি দুই অঙ্কের হিসাব সঠিকভাবে সরবরাহ করে, তিন অঙ্কের হলেই হিসাব ভুলভাবে আসত। এখন সফটওয়্যার আপডেট করা হয়েছে। ফলে আগামীতে এ ধরনের সমস্যা হবে না। তবে সফটওয়্যারে কী আপডেট করা হয়েছে, তা জানাতে পারেননি তারা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাবেক ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ বার্তা২৪.কমকে জানান, মূলত নির্বাচন ব্যবস্থাকে গতিশীল করার জন্যই আমরা ট্যাবগুলো কিনেছিলাম। শুরুতে এটি ব্যবহারের কিছুটা সফটওয়্যারজনিত সমস্যা দেখা দেয়। আমরা সে সময় এটি ব্যবহার বন্ধ রাখি। পাশাপাশি অনেক জায়গায় ইন্টারনেটের গতি ২জি থাকায় সেখানেও আমরা ট্যাব ব্যবহার করতে পারিনি। তবে এখন সফটওয়্যার আপডেট করা হয়েছে। সুতরাং ভোটে ট্যাব ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।

ম্যাক্সিমাস টি২ ব্র্যান্ডের ট্যাবগুলোতে পাঁচ ধরনের সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো হলো- ক্রেডিনশিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যার, পোলিং পারসোনাল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, ইলেকশন শিডিউল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার, রেজাল্ট কাউন্টিং অ্যান্ড ডিকলেরাশন সিস্টেম ও সিস্টেম ডকুমেন্টশন। আর পুরো প্রক্রিয়াটির জন্য কেনা হয়েছে সার্ভারও।

ইসির সিনিয়র মেইন্টেনেন্স ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ট্যাব প্যারালাল সিস্টেম হিসাবে ইভিএমের কেন্দ্রগুলোতে ব্যবহার হবে। সর্বশেষ ময়মনসিংহ সিটি নির্বাচনে পাইলট হিসাবে সফল হয়েছে। আমরা মঙ্গলবারের (১৮ জুন) ভোটেও ট্যাব ব্যহার করব। যদি ভালো রেজাল্ট আসে তাহলে ভবিষ্যতে আরও অন্যান্য নির্বাচনে ব্যবহার হবে। আর কনভেনশাল সিস্টেম তো আমাদের আছেই। সুতরাং কোনো সমস্যা হওয়ার কারণ নেই। পাইলট হিসাবে এটি ব্যবহার হবে। ময়মনসিংহের ভোটেও পাইলট হিসেবে ব্যবহার হয়েছে। সফলভাবে ব্যবহার করা গেলে পরবর্তীতে নির্বাচনেও ট্যাব কাজে লাগানো হবে।

ইসির জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন বিভাগের উপ-পরিচালক মো. রশিদ মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, শুরুর দিকে ট্যাবের সমস্যার কারণে একটি নির্বাচনে এর ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছিল। কারণ একশতম সেন্টারে গিয়ে হিসাবে গরমিল তৈরি হয়। তারা যে সফওয়্যার তৈরি করেছিল, তাতে কিছুটা সমস্যা হয়েছিল। যার কারণে আমরা ম্যানুয়্যালি ফলাফল দিয়েছিলাম। তখন মেশিনটি সংখ্যার লোডটি নিতে পারছিল না। তবে এরপর আর সমস্যা হয়নি। সর্বশেষ পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল। সফটওয়্যার এখন আপডেট করা হয়েছে। এখন ট্যাব সুপার সার্ভিস দিচ্ছে।

গত ১৮ মার্চ কম্পিউটার সার্ভিসেস লিমিটেডের কাছ থেকে ৪২ হাজার ২০০টি ট্যাব ও সফটওয়্যার গ্রহণের জন্য সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হককে প্রধান করে সাত সদস্য বিশিষ্ট ট্যাব রিসিভিং কমিটি গঠন করে কমিশন। এ বিষয়ে মো. রফিকুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা সফটওয়্যারগুলো আপডেট করেছি। এখন আর তেমন সমস্যা নেই। তবে কী ধরনের আপডেট করা হয়েছে জানতে চাইলে সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তিনি।

উল্লেখ্য, পঞ্চম ধাপে ২০ উপজেলায় ভোট হবে মঙ্গলবার। এরমধ্যে গাজীপুর সদর, নারায়ণগঞ্চ বন্দর, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর, নোয়াখালী সদর, রাজশাহীর পবায় ট্যাব ব্যবহার করে ফলাফল সংগ্রহ করার কথা রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর