ভাইরাস জ্বরের প্রাদুর্ভাবে নাকাল রাজধানীবাসী

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-27 09:34:29

চার বছরের শিশু জোয়ানা ঋনিত। তিনদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলো। কোনোভাবেই জ্বর কমে না। ছোট্ট জোয়ানার সে কি কষ্ট। বাধ্য হয়ে তীব্র জ্বর নিয়ে জোয়ানাকে ভর্তি করা হয় রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানায়, ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত সে।

শিশু জোয়ানার এ চিত্র গোটা রাজধানী জুড়েই। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সীরা আক্রান্ত হচ্ছে জ্বরে। আর এতে করে হাসপাতালগুলোতে বেড়ে গেছে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এ জ্বর শুধু গা-গরম করেই সীমাবদ্ধ নয়, গা ব্যথা, মাথাব্যথা, বমি, ডায়রিয়াসহ এমন নানা উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। আর তা নিয়ে রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন হাসাপাতালে।

জোয়ানার মা আফরিন নুসরাত বার্তা২৪.কমকে বলেন, রোববার রাত থেকে জোয়ানার জ্বর আসে। মনে হয় প্রচন্ড জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। স্পন্জ, ওষুধ, সাপোজিটর কোনো কিছুতেই জ্বর কমছিলো না। তারপরই হাসপাতালে ভর্তি করলাম।

কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জ্বর যখন আসে তখন ১০১ থেকে ১০৩ ডিগ্রী পর্যন্ত উঠে যায় তাপমাত্রা। সেই সঙ্গে তীব্র মাথা ব্যথা, নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, সারা শরীর ম্যাজম্যাজ করা, বমি বমি ভাব। অনেকে জ্বরের সঙ্গে পেটের পীড়াতেও আক্রান্ত হচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) মিরপুরে অবস্থিত আইসিডিডিআরবি'র ফিল্ড হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদের পর থেকেই সেখানে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন রোগী ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিতে আসছেন।

সেখানে কর্তব্যরত সহকারী চিকিৎসক শাহিন আহমদে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ডায়রিয়ার সঙ্গে অনেক রোগীর শরীরে জ্বর দেখতে পাওয়া যায়। অনেকে আবার বমির কারণে সৃষ্ট পানিশূন্যতা নিয়েও ভর্তি হচ্ছেন।

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহ ধরে ভ্যাপসা গরম, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, দমকা বাতাসসহ ঝড়ো বৃষ্টিতে রাজধানীর আবহাওয়া এখন বৈরী। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনজনিত কারণে অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকে সময় বৈরী আবহাওয়া প্রাণির দেহে অসহনীয় পড়ে। তখন নানান রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।

ভাইরাস জ্বরের লক্ষণগুলোর কথা বলতে গিয়ে ডেল্টা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. রেফায়েত উল্লাহ বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রথমে প্রচন্ড জ্বর দেখা যায়। সঙ্গে মাথাব্যথা কারো কারো বমি কিংবা ডায়রিয়াও দেখা যায় যা খাবারে বিষক্রিয়ার কারণেও হতে পারে।

গেল সপ্তাহে এই ভাইরাস জ্বরে ভুগেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জয়নাল আবেদিন। তার মতে, এই জ্বরে বিশ্রাম নেওয়াটাই মূলকথা। তবে হলে সেবা করার মানুষ না থাকায় হাসপাতাল কিংবা আত্মীয় স্বজনের বাসা বিশ্রামের উপযুক্ত জায়গা। এছাড়া জ্বরের পর শরীর একদম দুর্বল হয়ে পড়ে বলে খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করতে হবে।

ভাইরাস জ্বরের চিকিৎসা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলেও জানান  ডা. রেফায়েত।  তিনি বলেন, অনেকে জ্বর বেশি দেখে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করেন। যা আসলে ভুল। এই জ্বরে আক্রান্তদের প্যারাসিটামল জাতীয় নন অ্যন্টিবায়োটিক ট্যাবলেট দিতে হবে। সেই সঙ্গে জ্বরের মাত্রা ১০২ ডিগ্রীর বেশি হলে সাপোজিটর দেওয়া যেতে পারে। অন্যথায় ঠান্ডা পরিষ্কার পানি দিয়ে নিয়মিত রোগীর শরীর ভালকরে মুছে দিতে হবে। সাধারণত ৫ থেকে ৭দিন পরে জ্বর এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর