মাদকাসক্তদের সুস্থতায় কারাগারে কাউন্সিলিংয়ের বিকল্প নেই

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর | 2023-08-29 19:22:40

মাসুদ রানা। বয়স ত্রিশের কাছাকাছি। ২০০২ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার পর বন্ধুদের আড্ডার খপ্পরে নেশার জগতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর থমকে যায় উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির স্বপ্ন। সময়ের পরিক্রমায় মাসুদ রানা মাদকে ডুবে যান। এরপর তার ঠিকানা হয় কারাগারে। সেখান থেকে জামিনে ছাড় পেলেও নেশার মাতম ছাড়েনি। তাই বাধ্য হয়ে পরিবারের সদস্যরা তাকে ভর্তি করান মাদক নিরাময় কেন্দ্রে।

রংপুর মহানগরীর আরকে রোডে অবস্থিত একটি বেসরকারি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসা নিচ্ছেন মাসুদ রানা। সেখানে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব কথা জানান তিনি।

মাসুদ রানার মতো অসংখ্য যুবক সঙ্গ দোষে মাদকে আসক্ত হচ্ছেন। তাদের চোখে আলোর বদলে অন্ধকারের ঝলকানি। যা ধীরে ধীরে তাদেরকে মাদকে আচ্ছন্ন করছে। আর শেষ ঠাঁই হচ্ছে কারাগারে। কিন্তু সেখানে তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতায় নেই তেমন কোনো উদ্যোগ। ফলে কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়েও নেশা করা ছাড়ছে না অনেকেই। এতে প্রতিনিয়ত মাদকের আগুনে পুড়ছে একেকটি পরিবারের স্বপ্ন।

রংপুর বিভাগের কারাগারগুলোতে প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে মাদক মামলার নতুন নতুন আসামি। বর্তমানে এই বিভাগের আট জেলার কারাগারে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার বন্দী রয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেক আসামি মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা ও মাদকাসক্তিতে আসক্ত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় দেড় হাজার বন্দীর মধ্যে অধিকাংশই মাদক সংশ্লিষ্ট মামলার আসামি। কারাগারে এই বন্দীদের জন্য পৃথক ইউনিট থাকলেও সার্বক্ষণিক চিকিৎসক নেই। তাদের আলোর পথ দেখাতে নেই সুচিকিৎসা ও কাউন্সিলিং ব্যবস্থা।

মাদকাসক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে হলে কারাগারে চিকিৎসার বিকল্প নেই। এ কারণে মানবাধিকার কর্মী ও চিকিৎসকরা বলছেন, মাদকসেবীদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে হলে কারাগারগুলোতে সুচিকিৎসার পাশাপাশি মাদক বিরোধী ব্যাপক কাউন্সিলিং করা দরকার।

রংপুরের মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্বপ্নের পরিচালক গুলশান-আরা ইয়াসমীন বার্তা২৪.কমকে জানান, মাদক নিরাময়ের জন্য কারাগারে যে ইউনিট রয়েছে, সেই ইউনিটের জন্য দক্ষ জনবল দরকার। কারাগারে কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা থাকা জরুরি। কাউন্সিলিং ছাড়া মাদকসেবীদের সুস্থ জীবন দেয়া সম্ভব না। এছাড়া মাদক মামলার আসামিদের জামিনে বের হওয়ার পর তাদের ফলোআপ জোরদার করতে হবে।

রংপুরের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডা. অমল চন্দ্র সাহা বার্তা২৪.কমকে জানান, জেলা কারাগারগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগের পাশাপাশি মাদকাসক্তদের জন্য কাউন্সিলিং সেন্টার থাকা উচিত। পাশাপাশি মাদক নিরাময়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসকেরও প্রয়োজন রয়েছে।

রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) সাইফুর রহমান সাইফ বলেন, ‘মাদকাসক্তরা জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো সহজলভ্য নেশার হাতছানিতে ডুব দেয়। আমরা তাদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে চাই। এ কারণে সরকার প্রধানের নির্দেশে পুলিশ বিভাগ মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে।’

তিনি জানান, মাদক নিয়ন্ত্রণে এবং মাদকাসক্তদের সুস্থ জীবনে ফেরাতে হলে তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা, কাউন্সিলিং ও কর্মসংস্থান বাড়ানো দরকার ।

রংপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদ হোসেন বার্তা২৪.কমকে জানান, মাদকাসক্তদের জন্য প্রত্যেকটা কারাগারে সুচিকিৎসার পাশাপাশি কাউন্সিলিং করার ব্যবস্থা করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর