রাজধানীতে তিন বিদেশি প্রতারক গ্রেফতার

, জাতীয়

সেন্ট্রাল ডেস্ক ২ | 2023-08-11 13:01:15

প্রলোভন দেখিয়ে রাজধানীর বেসরকারি এক ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তিন বিদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গ্রেফতার হওয়া ক্যামেরুনের নাগরিক কুয়াতে ফুতসু, অ্যামেলি মাওয়াবো ও এমবিদা একানি আন্তর্জাতিক প্রতারকচক্রের সদস্য বলে জানিয়েছে র্যাব। এদের দুইজন বৈধভাবে এবং অপরজন অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল। গ্রেফতার হওয়াদের কাছ থেকে প্রায় ৬২ লাখ টাকার সমপরিমাণ ইউরো, ৩ বোতল বিদেশি মদ, ২০০ পিস ইয়াবা, ১১টি মোবাইল, ১টি ভুয়া আমেরিকান আইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়। এই প্রতারকচক্রটিকে শনাক্ত করতে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামোটর থেকে মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুল আলম বীরপ্রতীককে তার আইএসএন নামের অফিস থেকে আটক করে র্যাব। পরে রাতেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ। তিনি বলেন, বিদেশি নাগরিকদের প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তার নাম জিয়াউর রহমান। তিনি ফার্মার্স ব্যাংকের গুলশান শাখার শাখা ব্যবস্থাপক। ওই শাখার মাধ্যমে বাংলাদেশে ১১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন ক্যামেরুনের নাগরিক কুয়াতে ফুতসু। এরপর বিভিন্ন ব্যবসার কথা বলে জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তিনি। একপর্যায়ে ওই ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে ২.৫ লাখ ইউরো চান সমপরিমাণ ডলারের বিনিময়ে। এজন্য জিয়াকে ২০ লাখ টাকা বেশি দিতে চাইলে তিনিও আগ্রহী হয়ে ইউরো যোগাড় করেন। কিন্তু ফুতসু ডলার না দিয়ে কৌশলে ইউরো নিয়ে চলে যান। এরপর ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। জিয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তাদের উত্তরা ও বসুন্ধারা থেকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাব কর্মকর্তা বলেন, একমাস আগে রজার্স নামে একজন নিজেকে জার্মানির নাগরিক দাবি করে জিয়াকে ফোন করে ১১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার কথা প্রস্তাব দেন। এজন্য একজন খুব শিগগিরই বাংলাদেশে তার সঙ্গে দেখা করবেন। এর কয়েকদিন পর বোস্তাভো স্টিভস পরিচয়ে জিয়াকে ফোন করে গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে দেখা করতে বলেন ফুতসু। তারপর তাদের মধ্যে একাধিকবার বৈঠক হয় এবং কীভাবে টাকা দেশে আনবেন, কোন খাতে বিনিয়োগ করবেন এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কয়েকদিন পর ফুতসু ব্যবসার কাজে সিঙ্গাপুরে যাচ্ছেন বলে জানান। সেখান ফিরে আবার জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন এবং আপাতত থাকা-খাওয়ার জন্য চার হাজার ডলার চান। বড় বিনিয়োগের লোভে জিয়াও তাকে ওই ডলার দেন। বিভিন্ন সময় ফুতসু জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেই গাড়ি দেখিয়ে বলতেন রাষ্ট্রদূত গাড়ি পাঠিয়েছেন, তার সঙ্গে মিটিং আছে। এভাবে বিভিন্ন পন্থায় জিয়ার বিশ্বাস অর্জন করেন ফুতসু। এর কয়েকদিন পর ফুতসু ইউরোপে পাঠানোর জন্য আড়াইলাখ ইউরো চান জিয়ার কাছে। ডলারের বিনিময়ে ইউরো দেবেন এবং ২০ লাখ টাকা বেশি দেবেন বললে জিয়াও ইউরো যোগাড় করেন। ৩১ অক্টোবর রাতে ফুতসুকে নিজ বাসায় দাওয়াত দেন জিয়া। ফুতসু ও তার আরেক সহযোগী বাসায় যান এবং খাওয়া  শেষে জিয়াকে ইউরোগুলো দেখাতে বলেন। জিয়া কাগজের প্যাকেটে মোড়ানো ইউরো দেখান। তখন তাদের মধ্যে একজন একটি তরল পদার্থের বোতল বের করেন এবং জিয়ার সামনে তা ফেলে দেন। এটি বিষাক্ত উল্লেখ করে তাকে ওয়াশ রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে আসতে বলেন। জিয়া ফ্রেস হতে গেলে কাগজের প্যাকেট থেকে ইউরো নিয়ে সেখানে সাদা কাগজ রেখে দেন ফুতসু। জিয়া বের হয়ে এলে এমন ভাব দেখিয়ে বলে যে, আজ তারা ডলার আনতে ভুলে গেছে, পরের দিন এসে ডলার দিয়ে ইউরো নিয়ে যাবে। তখন তাদের ওইদিনের মতো বিদায় জানান জিয়া। এরপর থেকে জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন ফুতসু ও তার সহযোগীরা। র্যাব কর্মকর্তা কমান্ডার মুফতি মাহমুদ জানান, প্রতারকদেও টার্গেটে থাকেন বড় বড় ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী। বিশেষত বিভিন্ন ধরনের  মেলায়,  যেখানে এ ধরনের মানুষদের আনাগোনা বেশি, সেখানেই যাতায়াত করেন প্রতারকরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর