মাস্টার্স পরীক্ষা নিয়ে শঙ্কায় হাত হারানো ফিরোজ

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-10 07:53:25

বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে ডান হাত হারিয়েছেন রাজশাহী কলেজ ছাত্র ফিরোজ সরদার। বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩১নং ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে তীব্র যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন তিনি। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ফিরোজ সবার দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকছেন। তার চোখে-মুখে এখনো রয়েছে আতঙ্ক।

রোববার (৩০ জুন) সকালে তার মাস্টার্সের দ্বিতীয় কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা। হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরকণ্ঠে ফিরোজ বন্ধুদের কাছে বারবার জানতে চাইছেন, তার মাস্টার্স শেষ করার কি হবে? ডান হাতে লিখতে অভ্যস্ত ফিরোজ, এখন কিভাবে লিখবেন? তার এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না সহপাঠীরা।

ফিরোজের রুমমেট ও বিভাগের সহপাঠী আতিকুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আইসিইউ থেকে ওয়ার্ডে আনার পর থেকেই আমি ওর সঙ্গে ছিলাম। শেষ রাতে জ্ঞান ফিরলেও কথা বলতে পারছিল না ফিরোজ। তবে সকালে ঘুম থেকে জাগার পর প্রথমেই ও আমাকে বলে, আমার তো ডান হাত আর নাই! আমি পরীক্ষায় লিখব কিভাবে? আমার মাস্টার্স শেষ করে বড় চাকরি করার স্বপ্ন আর পূরণ হবে না?’

আতিকুর জানান, ফিরোজ পড়াশোনায় খুব মনোযোগী ছিল। বর্তমানে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতার বিষয়টিও মাথায় ছিল ওর। এজন্য তৃতীয় বর্ষ থেকেই ও চাকরির জন্যও পড়াশোনা শুরু করেছিল।

আরও পড়ুন: হাত হারানো রাজশাহী কলেজ ছাত্র ফিরোজ শঙ্কামুক্ত

পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জোবাইদা আক্তার বলেন, ‘পরীক্ষা তো কাল (রোববার) অনুষ্ঠিত হবে। ফিরোজের ডান হাত কেটে ফেলা হয়েছে। হাসপাতালে বসে ও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না। ফিরোজ আগে ও সুস্থ হোক, আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

জানতে চাইলে রাজশাহী কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ফিরোজের মাস্টার্স পরীক্ষার বিষয়টি আপাতত বড় নয়। ও বেঁচে থাকুক, সুস্থ হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তারপর আমরা এ ব্যাপারে তাকে যে ধরনের সুযোগ দেওয়া যায়, তা দেব। সে ডান হাতে লিখতো, এখন তো লিখতে পারবে না। শ্রুতি লেখকদের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব, তবে এখন ওর যে শারীরিক অবস্থা তাতে সেটিও সম্ভব নয়।’

আরও পড়ুন: বাস-ট্রাক সংঘর্ষে হাত হারালেন রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থী

ফিরোজের সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখা রামেক হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ফিরোজের জ্ঞান ফিরেছে। সে এখন পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত। তার শরীরে প্রয়োজন অনুযায়ী রক্ত দেওয়া হয়েছে। অস্ত্রোপচার সফলভাবে করা হয়েছে। আপাতত তাকে স্বাভাবিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার দেখভালে সার্বক্ষণিক কয়েকজন চিকিৎসক নিয়োজিত রয়েছেন।’

উল্লেখ্য, শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহীর কাটাখালি পৌরসভার সামনে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে ফিরোজের ডান হাত কনুই থেকে কাটা পড়ে। ফিরোজ রাজশাহী কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি বগুড়ার নন্দীগ্রাম এর একডালা গ্রামের মাহফুজুর রহমানের ছেলে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর