বহনকারী বাস চালকের দোষে হাত হারালেন ফিরোজ

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-24 08:26:25

বহনকারী বাস চালকের দোষে হাত হারালেন রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থী ফিরোজ সরদার। শুক্রবার (২৮ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজশাহীর কাটাখালি পৌরসভার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

আহত ফিরোজ সরদার রোববার (৩০ জুন) সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজে (রামেক) হাসপাতালের বিছানাই শুয়ে বার্তা২৪.কমকে বিভীষিকাময় ঘটনার বর্ণনা করছিলেন।

তিনি বলেন, ‘পুঠিয়া পাম্প থেকে বাসে তেল নেওয়ার পর হঠাৎ খুব জোরে বাস চালাচ্ছিলেন ড্রাইভার। আমি বাসের একদম পিছনের সিটে জানালার পাশে বসেছিলাম। গাড়ি জোরে চালানোর ফলে খুব দুলছিল। নিজেকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আমি সামনের সিট দুই হাতে ধরে ছিলাম। কাটাখালি আসার পর বাস সম্ভবত রাস্তার কোনো গর্তে পড়ে প্রচণ্ড জোরে ঝাঁকি খায়। সেসময় আমার হাত ছিটকে জানালা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। বিকট শব্দ হয়। দেখি আমার ডান হাত নেই! প্রচুর রক্ত বের হচ্ছে। ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠি। তারপর আর কিছু মনে নেই!’

আরও পড়ুন  হাত হারানো রাজশাহী কলেজ ছাত্র ফিরোজ শঙ্কামুক্ত

ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও বাসের যাত্রীরা ঘটনা নিয়ে ভিন্ন বর্ণনা দিচ্ছিলেন। ঘটনার দিন শুক্রবার (২৮ জুন) গভীর রাতে ফিরোজের জ্ঞান ফিরলেও সে কথা বলতে পারছিল না। চিকিৎসকের নির্দেশে তার সঙ্গে কাউকে কথা বলার সুযোগ ছিল না। বর্তমানে ফিরোজ একটু সুস্থ।

ফিরোজ সরদার বলেন, ‘শুক্রবার বগুড়ায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আমি গ্রামের বাড়িতে গেছিলাম। ৩০ জুন (আজ রোববার) মাস্টার্সের তৃতীয় নম্বর কোর্সের পরীক্ষা থাকায় দ্রুত রাজশাহীতে ফেরার প্রয়োজন ছিল।’

এদিকে, মাস্টার্সের যে পরীক্ষায় অংশ নিতে তিনি বাড়িতে গিয়েই ফের রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিলেন, সেই কোর্সের পরীক্ষা রোববার (৩০ জুন) সকাল ১০টা থেকে শুরু হলেও তাতে অংশ নিতে পারছেন না ফিরোজ।

আরও পড়ুন,  বাস-ট্রাক সংঘর্ষে হাত হারালেন রাজশাহী কলেজ শিক্ষার্থী

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চাকরির জন্য ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আশা করছিলাম ভালো কিছু হবে। অনার্স শেষ হওয়ার পর বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম। তবে লক্ষ্য ছিল বিসিএস ক্যাডার হওয়া। কিন্তু এখন তো হাত-ই নেই। কীভাবে লিখবো, আর লিখতে না পারলে কীভাবে চাকরি পাবো। মাস্টার্সটাও শেষ করতে পারবো না।’ বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন ফিরোজ।

ফিরোজের বাবা মাহফুজার রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। ভালো ছেলেটা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। পথে এভাবে হাত হারাবে কল্পনায়ও ছিল না। ডান হাত হারিয়ে ফিরোজ এখন কিভাবে কী করবে, আমি নিজেই বুঝে উঠছি না। আমি বাসের চালকদের শাস্তি চাই। আর কেউ এভাবে জীবন, হাত, পা না হারায়।’

রাজশাহী কলেজ প্রিন্সিপাল অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ফিরোজের মাস্টার্স পরীক্ষার ব্যাপারে তাকে যে ধরনের সুযোগ দেওয়া যায়, তার সব আমরা দেব। সে ডান হাতে লিখত, এখন তো লিখতে পারবে না। শ্রুতি লেখকদের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব, তবে এখন ওর যে শারীরিক অবস্থা তাতে সেটিও সম্ভব নয়।’

 

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর