বৃষ্টিতে মাথায় হাত রাজশাহী রথমেলার ব্যবসায়ীদের

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী | 2023-08-27 12:41:32

খুলনার ডুমুরিয়া থেকে মাটির তৈরি তৈজসপত্র নিয়ে রাজশাহীর রথের মেলায় এসেছেন শহিদুল আলম। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন স্ত্রী, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে ও ছয় বছর বয়সী ছেলেকেও। তাদের থাকার কোনো স্থান নেই, মেলায় বেচাবিক্রি হলে তা দিয়ে কোথাও খাবেন।

অথচ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রথযাত্রার উদ্বোধনের পর থেকেই শুরু হয় বৃষ্টি। বৃষ্টিতে রথযাত্রার উৎসবে বাড়তি উন্মাদনা ছড়ালেও মেলায় নেই মানুষের প্রত্যাশিত ভিড়। ফলে বেচাকেনাও খুব কম। শহিদুল বলছেন, ‘বেচাবিক্রি এত কম যে রাতে ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে নিম্নমানের হোটেলে খাওয়াও দায় হবে তার!’

সন্ধ্যায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে নগরীর সাগরপাড়ায় বসা ঐতিহ্যবাহী এই রথমেলায় গিয়ে দেখা যায়, মানুষের আনাগোনা একেবারেই কম। মেলার ঠিক মাঝামাঝি স্থানে শহিদুলের দোকান। সামানে পানি জমেছে। সেই পানি স্টিলের বাটি দিয়ে দোকানের সামনে থেকে ‘সেচে’ রাস্তার উপর ফেলছেন শহিদুলের ছয় বছর বয়সী ছেলে শামীম। পেছনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন শহিদুল। পাশেই পা ছড়িয়ে বসে আছে তার স্ত্রী। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েটি ঘুরতে গেছে অন্য দোকানে।

শহিদুল বলেন, ‘১৩ বছর ধরে এই মেলায় আসি। ৮/৯ দিন থাকে মেলা। তাই বউ-বাচ্চাদের সঙ্গে নিয়ে আসি। কোনোমতে রাত কাটাই দোকানের মধ্যেই। দিনে বেচাবিক্রি করি। এখানে এক সপ্তাহ ব্যবসা করলে যা আয় হয় তা দিয়ে তিন/চার মাস কেটে যায়। তবে এবার পরিস্থিতি খুব খারাপ হবে বলে মনে হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রথাযাত্রা শুরুর পর মেলা শুরু হয়। প্রথমদিনে প্রতি বছর ৫/৭ হাজার টাকার ব্যবসা করতাম। এবার ৫০০ টাকাও বিক্রি হয়নি। রাতে বউ, ছেলে-মেয়ে নিয়ে খাবো কী সেই চিন্তায় পড়েছি।’

পাশ থেকে শহিদুলের স্ত্রী বলে ওঠেন, ‘আমার লাগবে না, ছাওয়াল-মেয়ের জন্য কিনে আনো যাও।’

শুধু শহিদুল নয়, শেষ বিকেলের এক পশলা বৃষ্টিতে রাজশাহীর রথমেলায় সব দোকানির মাথায় হাত পড়েছে। খুলনা থেকে আসা ব্যবসায়ী মামুন হোসেন, মিনার, রবিউল, সানির কণ্ঠেও হাহাকার, মেলায় আসার খরচও বোধহয় এবার উঠবে না।

বগুড়ার গাবতলী থেকে আসা সিরাজুল বলেন, ‘শুনছি আগামীকালও রাজশাহীতে ‍বৃষ্টি হবে। আজ তো গেল, কাল যদি বৃষ্টি হয়, তবে দোকান গুটিয়ে বাড়ি চলে যাব।’

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরীর কল্পনা হলের মোড় থেকে সাগরপাড়া বটতলা মোড় পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটারেরও বেশি জায়গাজুড়ে বসেছে মেলা। রাস্তার দু’ধারে মাটির তৈজসপত্র, মিষ্টি, খাবারের দোকান, কাঠের ফার্নিচার, কাপড়, স্টিলের তৈজসপত্র, মাটি ও স্টিলের হাড়ি-পাতিল নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে ব্যবসায়ীরা। প্রায় ৫০০ দোকানি বিভিন্ন জেলা থেকে এখানে দোকান বসিয়েছেন।

মেলার দোকানিদের অধিকাংশই খুলনা, নওগাঁ, বগুড়া, পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, মাদারিপুর থেকে এসেছেন। উল্টোরথ আসা পর্যন্ত চলবে এই মেলা। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন- প্রথম দুই/তিন দিন জমজমাট হয় রথমেলা। তাই আগামী দুই দিন বৃষ্টি হলে বন্ধই হয়ে যাবে মেলা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর