ব্রিজ নির্মাণে ব্যর্থ ঠিকাদার, দুর্ভোগে ১৫ গ্রামের মানুষ

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-08-28 04:21:08

শুধু পানি আর পানি। কোনটি রাস্তা, কোনটি ব্রিজ সেটা বোঝা মুশকিল। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ব্রিজের কাজ শেষ না হওয়াতে নিয়মিত চলাচলের বিকল্প রাস্তাটি ডুবে আছে পানির নিচে। এতে হাঁটু পানিতে নেমেই ছুটতে হচ্ছে গন্তব্যে। ভারী যানবাহন নিয়ে চলাচলে রয়েছে চরম ভোগান্তি। এতে প্রতিদিন ঘটছে ছোট ছোট দুর্ঘটনাও। এটি রংপুর সিটি করপোরেশনের কুকরুল এলাকায় নির্মাণাধীন কুকরুল ব্রিজকে ঘিরে সৃষ্ট ভোগান্তির চিত্র।

২০১৭ সালের ২৩ মে নির্মাণ শুরু হওয়া এ ব্রিজটির কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের জুনে। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি ব্রিজ নির্মাণ। গেল দুই বছরে শুধু খুঁটি বসানো হয়েছে। কাজও করা হয়েছে ওপরের অংশে রডের। বাকি কাজের জন্য দুই দফা সময় বাড়িয়ে নিয়েও কাজ শেষ করেনি ঠিকাদার।

নির্মাণাধীন ওই ব্রিজের পাশে মাটি ও বাঁশ দিয়ে তৈরি করা বিকল্প রাস্তাটি এখন পানির নিচে ডুবে আছে। সেই ডুব রাস্তা দিয়েই কষ্ট করে চলাচল করছেন হাজার হাজার মানুষ। তবে ভারী যানবাহন নিয়ে চলাচলে প্রায়ই ঘটছে ছোটখাটো দুর্ঘটনা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সিটি করপোরেশনের দুটি ওয়ার্ডসহ পার্শ্ববর্তী গঙ্গাচড়ার উপজেলার পাঁচটি গ্রামের সাধারণ মানুষ।

এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে এলাকাবাসী, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

জানা গেছে, ২০১৬ সালে বন্যার সময় পুরনো কুকরুল ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় পরের বছর ওই স্থানে নতুন ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে কাজের মেয়াদ শেষ হয়েও পার হয়েছে আরও দেড় বছর। কিন্তু এখনো শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ।

বর্তমানে গেল কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে বিকল্প রাস্তাটি পানিতে ডুবে থাকায় ১৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে। এই ব্রিজের রাস্তা দিয়ে সিটি করপোরেশনের ২৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডের কুকরুল, আমাশু, বালাকোয়াঁ, কলোনী, জলছত্র, বুরালহাট, হারাটি, ময়নাকুটি, খটখটিয়া, চওরাহাটসহ পাঁচটি গ্রাম এবং গঙ্গাচড়া উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের আরও পাঁচটি গ্রামের মানুষ প্রতিদিন চলাচল করেন।

এ ব্যাপারে কুকরুল এলাকার বাসিন্দা আরশাদ আলী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘ঠিকাদার ঠিক মতো কাজ করেনি। সময় শেষ হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতি আর সিটি মেয়রের অবহেলার কারণে আমরা এখন চরম ভোগান্তিতে আছি।’

হাঁটু পানিতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে এলাকাবাসী, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে স্কুলছাত্র ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, ‘এই বর্ষাকালে আমাদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। প্রতিদিন হাঁটু পানিতে ভিজে যেতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে ভেঙে ফেলা ব্রিজের পাশে জমির মধ্যে তৈরি বিকল্প রাস্তা দিয়ে কষ্ট হলেও স্বাভাবিকভাবে চলাচল করা গেছে। কিন্তু এখন বর্ষা মৌসুমে তো পুরো রাস্তা পানিতে ডুবে আছে। এভাবে তো চলাচল করা ঝুঁকির।’

স্থানীয় সংবাদকর্মী আমাশু এলাকার আল-আমিন সুমন বলেন, ‘এখন বর্ষাকাল। প্রতিদিনই বৃষ্টি হচ্ছে। ব্রিজের পাশের রাস্তাটি এখন চলাচলে উপযোগী নয়। তারপরও সবাই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। এই পথ ধরে যারা যাতায়াত করতে যে কি কষ্ট হচ্ছে তা বোঝানো যাবে না। রাত হলে রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায় না।’

এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সাবেক মেয়র সরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টুর আমলে ২০১৭ সালের ২৩ মে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র অনুযায়ী কুকরুল ব্রিজসহ খটখটিয়া এলাকায় আরও একটি ব্রিজের নির্মাণ কাজ একসঙ্গে শুরু হয়। এ দুটি ব্রিজের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৮৭ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শহীদ ব্রাদার্স এই ব্রিজ দুটির নির্মাণ কাজ পায়। গত বছর ২ জুন ব্রিজ দুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। কাজের ধীরগতি ও কিছু সময় কাজ বন্ধ থাকায় এই বিলম্ব তৈরি হয়। পরবর্তীতে এ বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু তাতেও পূর্ণতা পায়নি ব্রিজটি।

পানির কারণে রাতের অন্ধকারে রাস্তা খুঁজে পায় না পথচারীরা, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

এ ব্যাপারে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘এটি আগের মেয়রের আমলে দরপত্র হওয়া কাজ। তবে তা শেষ না হওয়ায় লোকজনের দুর্ভোগ হচ্ছে। ঠিকাদারকে তাগাদা দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি আগামী ৩-৪ মাসের মধ্যে এই ব্রিজ ও রাস্তার কাজ শেষ হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর