ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। একটি করে পাইল বসছে আর দৃশ্যমান হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প স্বপ্নের পদ্মা সেতু। আবহাওয়া ঠিক থাকলে আগামী ১৩ জুলাই পদ্মা সেতুর শেষ পাইল বসানো হবে।
নদীর তলদেশে নরম মাটির স্তর থাকায় পাইল বসাতে গিয়ে বিপত্তিতে পরে কর্তৃপক্ষ। তাই পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরুর পরপরই মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে সরানো হয় শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে। এরপর ধীর গতিতে পদ্মা সেতুর কাজ চলতে থাকলেও প্রায় অর্ধেকের বেশি পিয়ারের (খুঁটি) নকশা চূড়ান্ত করা যাচ্ছিল না। গত বছরের শেষ দিকে নকশা পুনর্বিন্যাস করার পর দ্রুত গতিতে প্রমত্তা পদ্মার বুকে বসতে থাকে একের পর এক পাইল।
আবহাওয়া ঠিক থাকলে ১৩ জুলাই পদ্মা সেতুর শেষ পাইল অর্থাৎ ২৯৪ নম্বর পাইল বসানো হব। এর মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হবে পদ্মা সেতুর পাইল বসানোর কাজ। সেতু কর্তৃপক্ষের আশা, এ বছর পদ্মা সেতুর ২৯৪টি পাইলের ওপর ৪২টি পিয়ারের সব কটিই তৈরি হয়ে যাবে।
নকশা জটিলতার কারণে এর আগে পদ্মা সেতু কোনো কাজই সময়মত সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। এ সপ্তাহের মধ্যে ২৬ ও ২৭ নম্বর পিয়ারের সপ্তম পাইল বসানোর কাজ শেষ হবে।
২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মাওয়া থেকে শুরু হয় পদ্মার সেতুর নির্মাণকাজ। কাজের শুরুতেই নদীর তলদেশের গভীরে পাওয়া যায় নরম মাটির স্তর। তাই হ্যামার দিয়ে পাইল বসাতে গিয়ে ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬, ২৭, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২ ও ৩৫ নম্বর পিয়ারের কাজে সমস্যা দেখা যায়। এ কারণে ১৪টি পিয়ারের নকশা চূড়ান্ত করা যাচ্ছিল না। সমস্যা সমাধানে কাজ শুরু করে ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউই (সিওডব্লিউআই) ইউকে লিমিটেড। কাউই ইউকের বিশেষজ্ঞরা মাটি পরীক্ষার প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও কয়েকটি বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পদ্মা সেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ দলের কয়েক দফা বৈঠক হয়।
কাদামাটির পরই শক্ত মাটি না পাওয়ায় পদ্মা সেতুর ২২টি পিয়ারে একটি করে পাইলের সংখ্যা বাড়ানো হয়। এসব খুঁটিতে ছয়টি পাইল অন্যান্য পিয়ারের মতোই রেকিং বা কিছুটা বাঁকা করে বসানো হবে। এই ছয়টি পাইলের মধ্যে ৭ নম্বর পাইল ভার্টিক্যাল বা সরাসরি সোজাভাবে বসানো হয়।
পদ্মা সেতুর ৪২টি পিয়ারের ওপর ৪১টি স্প্যানে গড়ে উঠবে পুরো পদ্মা সেতু। মূল নদীতে ৪০টি পিয়ার। নির্মাণকাজের শুরুতে মূল নদীর প্রতিটি পিয়ারে পাইলের সংখ্যা ছিল ছয়। আর দুই প্রান্তে ১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারে ১২টি করে মোট ২৪টি পাইল। সব মিলিয়ে ৪২টি পিয়ারে পাইল ছিল ২৬৪টি। কিন্তু নদীর গভীর তলদেশে কাদামাটির স্তর থাকায় নতুন নকশা করতে হয়। নতুন এই নকশায় ১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারের ১৬টি করে মোট ৩২টি পাইল করা হয়। আর ২২টি পিয়ারে সাতটি করে পাইল ১৫৪টি এবং ১৮টি পিয়ারে ছয়টি করে মোট ১০৮টি পাইল রাখা হয়। সব মিলিয়ে ২৯৪টি পাইলে ৪২টি পিয়ার থাকবে পদ্মা সেতু। ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ১৪টি স্প্যান বসানোর পর পদ্মা সেতুর ২ হাজার ১০০ মিটার এখন দৃশ্যমান।