ছাওলায় ক্ষুধার্ত তিস্তার চোখ বিদ্যালয়-ক্লিনিকে

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-08-23 03:06:40

টানা কয়েকদিনের অব্যাহত বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরের পীরগাছায় তিস্তা নদী বেষ্টিত চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। হঠাৎ ক্ষুধার্ত তিস্তা নদীর আগ্রাসী ভাঙনে হুমকিতে পড়েছে বিদ্যালয়, মসজিদ, ক্লিনিকসহ পাঁচটি গ্রাম। ভাঙন রোধসহ জরুরি পদক্ষেপ না নেয়ায় আতঙ্কে আছে নদীপাড়ের মানুষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নে টানা কয়েকদিনের বর্ষণে শুকিয়ে যাওয়া তিস্তা নদী এখন পানিতে ভরপুর। নদীর বুকে শো শো করে পানি বয়ে যাচ্ছে গন্তব্যহীন ঠিকানায়। পানির তীব্র তোড়জোড়ে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। এতে করে এই ইউনিয়নের দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন হুমকির মুখে। মাত্র ৪০ ফুট অংশ ভাঙলেই তিস্তার পেটে চলে যাবে বিদ্যালয়টি।

একই অবস্থা পার্শ্ববর্তী শিবদেব কমিউনিটি ক্লিনিকের। তিস্তা নদী বেষ্টিত এই ইউনিয়নে গাবুড়ার চর, শিবদের চর, কিশামত ছাওলা, পূর্ব হাগুরিয়া হাশিম, ছাওলা ও চর কাশিম গ্রামে পানি ঢুকে পড়ায় বেড়েছে ভাঙন ঝুঁকি। এসব গ্রামের বেশির ভাগ ফসলি জমিসহ বসতভিটা ভাঙনের কবলে রয়েছে।

গাবুড়ার চর এলাকার বাসিন্দা রাজু মিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, আর মাত্র ৪০ ফুট অংশ ভাঙলেই তিস্তার বুকে তলিয়ে যাবে দক্ষিণ গাবুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ভাঙন দূরত্ব কমতে কমতে বিদ্যালয়টি এখন নদীর মুখে। দ্রুত ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ না নিলে এই বিদ্যালয়টি রক্ষা করা যাবে না।

একই গ্রামের যুবক রাসেল হোসেন জানান, ওই বিদ্যালয়টি কয়েক বছর আগেও নদী ভাঙনের কবলে পড়েছিল। পরে স্থান পরিবর্তন করে বর্তমান স্থানে নতুন করে ভবন নির্মাণ করা হয়। কয়েক বছরের ব্যবধানে আবারো বিদ্যালয়টি নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে। এখানকার অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন ভয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আকরাম হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, ভাঙন ঠেকাতে না পারলে বিদ্যালয়টি যে কোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। এর আগে ২০১৭ সালে পূর্ব শিবদেব চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির দ্বিতল ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। তারপর থেকেই ভাঙনকৃত স্থান থেকে অনেক দূরের বাজারে একটি টিনশেড ঘর নির্মাণ করে গাদাগাদির মধ্যে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে। ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় এখন তার বিদ্যালয়টিও হুমকির মুখে পড়েছে। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে।

এদিকে আর কয়েকদিন এমন বর্ষণ অব্যাহত থাকলে নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ভাঙন আরও তীব্র আকারে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ছাওলা ইউনিয়নের নদীপাড়ের বাসিন্দারা। তাদের দাবি, ভাঙন অব্যাহত থাকলে শিবদেব কমিউনিটি ক্লিনিকটি নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। এমন ভাঙনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনাকে দুষছে তারা।

তিস্তা নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত সোহরাব আলী, গোলাম হোসেন ও বাবুল মিয়া বলেন, ‘নদী ভাঙন নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রতি বছর নদী ভাঙনে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমাদের ছাওলা ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে ছোট হয়ে আসছে। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙন রোধে নদী শাসন আর বাঁধ নির্মাণের নামে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা করে যাচ্ছে। তাদের অব্যবস্থাপনা ও টেকসই কোনো কার্যক্রম না থাকায় আমাদের এ অবস্থা।’

ছাওলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহ মো. আব্দুল হাকিম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘পানি বৃদ্ধি হওয়াতে ভাঙন আতঙ্ক বেড়েছে। আমরা প্লাবিত এলাকাগুলোর খোঁজখবর রাখছি। প্রশাসনকে ভাঙন রোধ ও সহায়তার বিষয়টি অবগত করেছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর