তিস্তাপাড়ের আরও এলাকা প্লাবিত হওয়া সম্ভাবনা

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-09-01 21:43:21

ক্ষুধার্ত তিস্তার রাক্ষুসে চোখ। উথালপাতাল ঢেউ আর শো শো পানির তোড়জোড় কড়া নাড়ছে দরজায়। আগ্রাসী শাসনের আভাস মিলছে তিস্তার বুকে ক্রমাগত পানি বাড়ায়। এতে করে আবহাওয়া আরও বিরূপ হলে বেশকিছু নতুন এলাকা প্লাবিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

গত এক সপ্তাহের অবিরাম বৃষ্টির পাশাপাশি উজানের ঢল নেমে আসায় অস্বাভাবিকহারে পানি বৃদ্ধি পয়েছে তিস্তা বেষ্টিত রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলে। এখনো ৫০টি গ্রাম হাঁটু থেকে কোমড় পানিতে তলিয়ে আছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরের দিকে তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। কোথাও কোথাও পানি বৃদ্ধি কম-বেশি হলেও পরিস্থিতি উন্নতির দিকে নয় বলে মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার বিনবিনারচর, শংকরদহ, চর ইছলী বাগেরহাট, নোহালী, বাগডোগড়া, লক্ষীটারি, পূর্ব ইছলি, পশ্চিম ইছলি, কাউনিয়া উপজেলার হরিশ্বর, ঢুষমারা, গোপিডাঙ্গা, পাঞ্চরভাঙ্গা, আরাজি হরিশ্বর, তালুক সাহাবাজ, হয়বৎখাঁ, আজমখাঁ, বিশ্বনাথ, চরটাবু, গনাই, টাপুরচর, চরগনাই ও বিশ্বনাথ ও পীরগাছা উপজেলার রহমতেরচর, জোয়ানের চর, করাতিপাড়া, চর তাম্বুলপুর, চর ছাওলা, শিবদেব চর, দক্ষিণ গাবুড়ার চর, পুর্ব হাগুড়িয়া হাশিম, কান্দিনার চর, রামসিং, কামারেরহাটসহ ৫০টি গ্রাম এখন পানির নিচে।

যতদূর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। নদী তীরবর্তী হওয়ায় এসব গ্রামে নেমে এসেছে তিস্তার অভিশাপ। পানিতে ডুবে আছে বসত-ভিটাসহ ফসলি জমি। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। নদী ভাঙনের কবলে পড়তে পারে অন্তত ১৫টি স্কুল ও মাদরাসা। ইতোমধ্যে গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছার চরাঞ্চলের শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় পানিবন্দি অসহায় মানুষদের হাতে পৌঁছেনি পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা। দিন যতই যাচ্ছে আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ আর তিস্তার স্বভাবসুলভ ভাঙন আতঙ্ক তাড়া করছে নদীপাড়ের এসব মানুষদের। পানিবন্দি মানুষদের জন্য গতকালের মত আজও কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়ার পানিবন্দি বেশ কয়েকটি গ্রামে ৫০ টন চাল, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও স্যালাইন বিতরণ করেছে প্রশাসন।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুমের কর্মকর্তা মোকলেসুর রহমান জানান, গত সাত দিনে রংপুরসহ এর আশপাশে ৫৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে করে গঙ্গাচড়ার পাঁচ, কাউনিয়ায় চার ও পীরগাছার দুই ইউনিয়নের চর, দীপচর ও নিচু এলাকার বসতবাড়ি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বর্তমানে গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদি এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকে তাহলে আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর