পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে খুশি শিমুলিয়া ঘাটের লঞ্চ চালকেরাও

ঢাকা, জাতীয়

খন্দকার সুজন হোসেন, সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-21 01:23:42

মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া লঞ্চ ঘাট থেকে: ‘পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার, গর্ব। জাতীয় সম্পদ। এই স্বপ্নের সেতু বাস্তবায়ন হলে বহু মানুষের উপকার হবে। দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য বিশাল ব্যাপার। তবে আমাদের কাজের সাময়িক সমস্যা হবে। কিন্তু, যে সেতুতে এত মানুষের খুশি, সেখানে আমাদের সমস্যা কিছু না। আমরা খুব আনন্দিত’।

কথাগুলো এমভি হানজা লঞ্চের মাস্টার সৈয়দ সুজন আলীর। কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া ঘাটের এই লঞ্চ চালক নিজের স্বার্থের কথা না ভেবে পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞ নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। সুজন আলীর মতো পদ্মা সেতু নির্মাণ হওয়ায় খুশি মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে চলাচলকারী লঞ্চের অন্য চালকরাও। তারা জানায়, সেতু চালু হলে তাদের পেশাগত কাজের কিছুটা বিঘ্ন ঘটবে । তবে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের বৃহৎ স্বার্থে এ ক্ষতি মেনে নিতে সমস্যা নেই তাদের।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর এই নৌরুটে চলাচলরত ফেরি, লঞ্চ ও স্পীডবোর্ডগুলো কোথায় স্থানান্তর করা হবে তা বলতে রাজি হচ্ছে না ঘাট সংশ্লিষ্টরা। তবে যেখানেই স্থানান্তর হোক না কেনো পদ্মা সেতুর নির্মাণযজ্ঞ নিয়ে এখন বিভোর সবাই। কেননা, এটা যে সবার স্বপ্নের সেতু।

১০ বছর ধরে কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে লঞ্চের মাস্টার হিসেবে আছেন আবুল বাসার। মেসার্স জননী শিপিং লাইন্স লঞ্চের মাস্টার তিনি।

বাসার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, চোখের সামনে পদ্মা সেতু নির্মাণ হচ্ছে। খুব ভালো লাগে সেতুটির নির্মাণ কাজ দেখলে। আমরা চাই পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা হোক। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর এই নৌরুটের যে সকল শ্রমিক অবসরে যাবে  সরকার তাদের একটি  তালিকা করে কিছু ভর্তুকি দিক। তাহলে এখানকার শ্রমিকরা ক্ষুদ্র ব্যবসা-বাণিজ্য করে জীবন-জীবিকা চালাতে পারবে।

শিমুলিয়া কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে ১৫ টি ফেরির পাশাপাশি যাত্রী পারাপারে চলাচল করে ৮৭ টি লঞ্চ ও সাড়ে তিনশো স্পীড বোট। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী পারাপার হয় এই নৌরুট দিয়ে। নদী পারাপারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় নৌরুটে পারাপার হতে আসা যাত্রীদের। স্পীড বোটে করে নদী পার হতে গেলে গুণতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের লাখো মানুষ। পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে এরইমধ্যে সেতুর আশাপাশের এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন দেখা গেছে। সবাই এখন দ্রুত কাজ শেষে স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।

এদিকে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। প্রায় দুই কিলোমিটার সেতু দৃশ্যমান হয়েছে।

বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ওই বছরের ২৮ আগস্ট ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছিল। পরে আওয়ামী লীগ সরকার এসে রেলপথ সংযুক্ত করে ২০১১ সালের ১১ জানুয়ারি প্রথম দফায় সেতুর ব্যয় সংশোধন করে। বর্তমান ব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি। মূল সেতু নির্মাণে কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনের আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর