অর্থ সংকটে ফের বন্ধ নারী ক্রিকেটার চামেলীর চিকিৎসা

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 11:02:50

বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক অলরাউন্ডার চামেলী খাতুন। জাতীয় দলের হয়ে ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মাঠ মাতিয়ে বেড়িয়েছেন। খেলতে গিয়ে লিগামেন্ট ছিড়ে ও মেরুদণ্ডে আঘাত পেয়ে তিনি গুরুতর ইনজুরিতে পড়েন। এরপর থেকে চিকিৎসার অভাবে প্রায় ৮ বছর ধরে পড়ে ছিলেন বিছানায়। ধীরে ধীরে শরীরের নিচের অংশ অবশ হয়ে যাচ্ছিল।

গত বছর তার করুণ পরিস্থিতির বিষয়টি গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছড়িয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রী তাকে চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করেন। ওই সময় আরও অনেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেন। আর্থিক সহায়তা পেয়ে তিনি ভারতের বেঙ্গালুরুতে পায়ের লিগামেন্ট অপারেশন করেন। তখন প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেন তিনি। চলতি বছরের মার্চে তার পুনরায় ফলোআপের জন্য ভারতে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে তিনি চিকিৎসার জন্য যেতে পারছেন না।

এদিকে, তার শারীরিক অবস্থার আবারও অবনতি হয়েছে জানিয়ে আর্থিক সহায়তা চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন চামেলী। ফেসবুক স্ট্যাটাসে চামেলী লিখেন, ‘আমি চামেলী খাতুন। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের সাবেক একজন খেলোয়াড়। আমি ২০০৮ থেকে ২০১১ পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলেছি। খেলাকালীন সময়ে আমি ইনজুরিতে আক্রান্ত হই। তাই ক্রিকেট ক্যারিয়ার দীর্ঘ করা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। খেলাকালীন সময়েই আমি আনসার-ভিডিপিতে চাকরিতে যোগদান করি। এখনো সেখানে আমি চাকরিরত আছি। ২০১১ এর পর আমি খেলা ছেড়ে চাকরিতে মনোনিবেশ করি।’

তিনি আরও লেখেন, ‘গত বছর এর মাঝামাঝিতে আমার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। আমার দুই পা প্যারালাইজড হওয়ার পর্যায়ে চলে গিয়েছিলো। তখন আমার ফেসবুক পোস্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও ক্রিকেটবোর্ডের নজরে আসলে তারা আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। আমি বেংগালুরুতে পায়ের লিগামেন্ট সার্জারি করে আসি। তখন মোটামুটি সুস্থ হয়েছিলাম। ওখানকার ডাক্তার আমাকে এ বছরের মার্চে ফলোআপ করার জন্য ডেকেছিলো। আমার অল্প টাকার চাকরি। আর পরিবারের বৃদ্ধ মা বাবা আর স্বামী হারা বোন।’

চালেমী লিখেছেন, ‘চাকরির টাকায় সংসারই চলেনা ভিনদেশে চিকিৎসা করা তো বহুদূরের কথা। ফলোআপ এ না যাওয়ার কারণে হোক বা সেখানে চিকিৎসা তে ঘাটতির কারণেই হোক আমার অবস্থা ইদানীং আরো খারাপ হচ্ছে। আমার দুই পা ফুলে গেছে। আমার মেরুদণ্ড এর হাড় ৪ ডিগ্রী বাঁকা। আমি ঠিকমতো নড়াচড়াও করতে পারিনা। এজন্য আমি ঠিকমতো ডিউটি করতে পারছিনা। আমার ডিপার্টমেন্ট আমাকে যথেষ্ট সুযোগ দিচ্ছে। আমি ঠিকমতো যেতে পারিনা এবং অসুস্থ হলে তারা আমাকে বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেন।’

‘কিন্তু এভাবে আর কত! কাউকে বসিয়ে তো বেতন দেয়া যায়না। এই চাকরি চলে গেলে আমার পরিবার না খেয়ে মারা যাওয়ার উপক্রম হবে। এমতাবস্থায় আমি কি করবো বুঝে উঠতে পারছিনা। ক্রিকেট অনুরাগী, ক্রিকেট বোর্ড, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এর কাছে আমার আর্জি আমাকে চিকিৎসা করে সুস্থ হওয়ার জন্য একটু সহযোগিতা করুন। আমি ঠিকমতো হাঁটতে পারিনা। বেশিক্ষণ বসে থাকলে কোমড় পা ব্যথা করে এবং পায়ে পানি আসে। দিন দিন অবস্থা আরো অবনতি হচ্ছে। যথাসময়ে চিকিৎসা না করালে হয়তো পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারি। এখনই শারীরিক কষ্টে আমি ঠিকমতো ডিউটি করতে পারিনা।’

‘আমি এখন আমার ও আমার পরিবার নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত। আমরা এক রুমে চারজন থাকি। তার অবস্থা কি তা ছবিতেই দেখতে পাচ্ছেন। আমি খুব বেশি অসহায় হয়েই মানুষের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়েছি। আপনারা যদি এগিয়ে না আসেন একটা পরিবার ধ্বংস এর মুখে পড়বে। দয়া করে আমার চিকিৎসা এর জন্য আপনারা কিছু করুন। খুব বেশি কষ্ট, অসহায় অবস্থা নিয়ে আমি এই আর্জি করছি’।

এদিকে, তার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে জানতে চামেলীর ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার বড় বোন চম্পা খাতুন ফোন রিসিভ করেন। চামেলী অসুস্থার কারণে কথা বলতে পারছেন না বলে জানান তিনি।

চম্পা খাতুন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘ভারতে অপারেশনের পর চামেলী মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠেছিলো। হাঁটাচলা করতে পারছিলেন তখন। মার্চে ফলোআপের জন্য আবারও ভারতে যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু অর্থাভাবে যেতে পারেনি। এখন শারীরিক অবস্থার আবারও অবনতি হয়েছে। তার দুই পা ফুলে গেছে। বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে সে।’

আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তাকে আর্থিক সাহায্যের জন্য এর আগে অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাদের সবাই সহায়তা করেনি। চিকিৎসার জন্য ছয় লাখ টাকা পেয়েছিলাম তখন। তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে দিন দিন। দ্রুত চিকিৎসার জন্য টাকার প্রয়োজন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর