মিন্নিকে অভিযুক্ত করে কাকে আড়াল করা হচ্ছে!

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-31 18:58:41

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার রহস্যের কূল-কিনারা পাচ্ছে না পুলিশ। গত ২ জুলাই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহমেদ ওরফে নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এর একদিন পর গ্রেফতার হন মামলার দ্বিতীয় আসামি রিফাত ফরাজী। তার ১৫ দিন পর গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) মামলার প্রধান সাক্ষী রিফাতের স্ত্রী মিন্নিকে গ্রেফতার করেছে বরগুনা জেলা ও সদর থানা পুলিশ।

গ্রেফতার আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। পুলিশ বলছে, রিফাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিন্নির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এ জন্যই রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।

এদিকে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলছেন, মিন্নিকে গ্রেফতার করে হত্যাকাণ্ডের মূল ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হচ্ছে। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি বলেন, মিন্নিকে আলোচনায় এনে এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে যারা আছেন তাদের আড়াল করা হচ্ছে।

বিশেষ করে কোন একজন ব্যক্তিকে বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন মিন্নির বাবা। তার ধারণা, এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে খোদ রিফাতের বাবা দুলাল শরিফ ও নয়ন বন্ডের মা সাহিদা বেগমকে।

মোজাম্মেল হোসেন কিশোর আরও বলেন, রিফাতের বাবা কয়েকদিন আগে পর্যন্তও আমার মেয়ের নামে প্রসংশা করে বেড়িয়েছেন। মিন্নিই একমাত্র মানুষ যে শেষ পর্যন্ত তার ছেলেকে বাঁচাতে চেয়েছে। হঠাৎ কী এমন হলো যার কারণে প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে মিন্নিকে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি। তার পরই পুলিশ মিন্নিকে ডেকে নিয়ে গিয়ে গ্রেফতার করল।

মিন্নির বাবা আরও বলেন, মিন্নিকে গ্রেফতারের ৩ দিন আগে বন্দুকযুদ্ধের পর উধাও হয়ে যাওয়া নয়ন বন্ডের মা বাড়ি ফিরে আসেন। তিনি বাড়িতে ফিরলে সেই রাতে বরগুনা সদর থানা পুলিশ তাদের বাড়িতে অভিযান চালায়। সে সময় নয়ন বন্ডের মা মিন্নি সম্পর্কে পুলিশকে নানারকম মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, নয়নের মা পুলিশকে বলেছেন— তাদের বাড়িতে মিন্নির যাতায়াত ছিল। এমনকি মিন্নির ব্যবহারের অনেক কিছুই তার ঘরে রয়েছে।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রিফাতের বাবার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের পরের দিন ১৪ জুলাই হঠাৎ মিন্নিকে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন হয় বরগুনায়। সেখানে প্ল্যাকার্ড হাতে ‘মিন্নির ফাঁসি চাই’ দাবিতে রাজনৈতিক লোকের আনাগোনা দেখা যায়।

তবে সূত্র বলছে, নয়নের মায়ের হঠাৎ করে মিন্নি সম্পর্কে অভিযোগ দেওয়া, প্রেসক্লাবে রিফাতের বাবার সংবাদ সম্মেলন, মিন্নির ফাঁসির দাবিতে বরগুনায় মানববন্ধনের নেপথ্যে রয়েছেন স্থানীয় এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ। এমনকি তিনি নিজেই ওই মানববন্ধনে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

বিষয়টি অবশ্য অস্বীকার করেননি সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর পুত্র সুনাম দেবনাথ। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি বলেন, এমন হত্যাকাণ্ড যেন আর না ঘটে। সে জন্য প্রকৃত দোষীদের শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। কেউ যেন দোষী হওয়ার পরও আইনের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচতে না পারে। তাই আমরা সঠিক বিচারের দাবিতে সোচ্চার।

সারাসরি হত্যায় অংশ না নেওয়ার পরও শুধু মিন্নির ফাঁসির দাবিতে তিনি সোচ্চার কেন? এমন প্রশ্নে কোন জবাব দেননি এমপিপুত্র সুনাম দেবনাথ।

অন্যদিকে মিন্নির গ্রেফতার ও রিমান্ডের অনুমতির পর নতুন করে মামলার মোড় নিয়েছে। তাতে প্রকাশ্যে যারা রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সেই সন্ত্রাসীদের গডফাদারের নাম আড়াল হয়ে পড়ছে। আর এই সুযোগটা নিচ্ছেন ক্ষমতাশালী গডফাদাররা, অভিযোগ তুলছেন মিন্নির বাবা।

মিন্নিকে গ্রেফতার করে নয়ন বন্ড-রিফাত ফরাজীর মত সন্ত্রাসীদের গডফাদার সম্পর্কে জানা যাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে, বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজীর গডফাদারদের তথ্য মিন্নির কাছে না পাওয়া গেলেও ঘটনার সঙ্গে মিন্নির সংশ্লিষ্টতা জানা যাবে। যেটা এই হত্যা মামলার তদন্ত্যের জন্য জরুরি।

মামলার এজাহারভুক্ত ছয় আসামিসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ১০ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজীসহ বাকি তিন আসামি এখনো রিমান্ডে আছেন। মামলার এজাহারভুক্ত ৫ আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি। পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলছেন, তাদের গ্রেফতারের চেষ্টাও চলছে।

তবে এখন পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ খুঁজে বের করতে পারেনি পুলিশ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর