ঈদে ১০ দিন ফেরিতে ট্রাক-লরি পারাপার বন্ধের প্রস্তাব

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-27 23:55:25

পবিত্র ঈদুল আজহার আগের পাঁচ দিন ও পরের পাঁচ দিন মোট ১০ দিন ফেরিতে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও লরি পারাপার বন্ধ রাখার প্রস্তাব করবে বিআইডব্লিউটিসি। তবে পণ্য ও কোরবানির পশুবাহী ট্রাক এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত রাখার সুপারিশ করা হবে।

জানা গেছে, রোববার নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে লঞ্চ, ফেরি, স্টিমার চলাচল ও যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত সংক্রান্ত ঈদ ব্যবস্থাপনা সভা হবে। সভায় ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান ও লরি চলাচল ১০ দিন বন্ধ রাখার প্রস্তাব করবে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। বন্যার কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি বেড়ে যাওয়ায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এর ওপর ঈদে বাড়তি গাড়ির চাপ পড়লে দীর্ঘ যানজট হতে পারে। তাই ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে এ প্রস্তাব দেবে সংস্থাটি। তবে প্রতিবারের মতো কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ও নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্য, পচনশীল পণ্য, গার্মেন্টস সামগ্রী, ওষুধ, কাঁচা চামড়া এবং জ্বালানিবাহী যানবাহন এর আওতামুক্ত থাকবে।

এছাড়াও বন্যার কারণে নদীতে পানি বৃদ্ধি ও স্রোতে ফেরি চলাচল বিঘ্নিত হওয়ায় যাত্রীদের যানজটের দুর্ভোগ কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি। ঘাটে দীর্ঘ যানজট এড়াতে যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যাওয়ার আগে ঘাটের সার্বিক অবস্থা জানার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে যানবাহনগুলো ছেড়ে যাওয়ার স্থানে ঘাট ব্যবস্থাপকদের ফোন নম্বর দেওয়া থাকবে, ফলে গাড়িগুলো ছেড়ে যাওয়ার আগে জেনে নেওয়া যাবে ঘাটে যানজটের সর্বশেষ অবস্থা। সে অনুযায়ী যাত্রীবাহী পরিবহন যাত্রা করবে। এ বিষয়টিও বৈঠকে আলোচনা হবে।

বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানিয়েছে, নদীতে পানি বৃদ্ধি ও প্রবল স্রোতের কারণে নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বহরে থাকা বেশির ভাগ ফেরি তীব্র স্রোতের বিপরীতে চলতে গিয়ে দফায় দফায় বিকল হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থাকলে ঈদের সময়ে স্বাভাবিক অবস্থা ব্যাহত হতে পারে। আর এ সমস্যা স্থায়ী হলে ফেরিগুলোর যানবাহন পারাপার করতেও বাড়তি সময় লাগবে, সেক্ষেত্রে ঘাটে দীর্ঘ জট হবে। ফলে সেই সময়ে ট্রাক-লরি পারাপার বন্ধ করলে সমস্যা কিছুটা কমবে। তাতে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের ভোগন্তিও কম হবে।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান প্রণয় কান্তি বিশ্বাস বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘নদীতে পানি বৃদ্ধি ও প্রবল স্রোতের কারণে বর্তমানে নৌ-রুটে ফেরি চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। স্রোতের কারণে পারাপারে দ্বিগুণ সময় লাগায় ফেরিগুলোর ট্রিপ সংখ্যাও কমে গেছে। এ অবস্থা থাকলে ঈদে কিছুটা সমস্যা হবে। তাই আমরা ঈদের আগে ও পরে মিলিয়ে মোট ১০ দিন ফেরিতে পশুবাহী ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য সব ট্রাক-লরি পারাপার বন্ধ রাখার প্রস্তাব করব। এতে ফেরিগুলো যাত্রীদের জন্য প্রস্তুত রাখা যাবে। আর ঘাটের সর্বশেষ অবস্থা জানাতে বাস টার্মিনালগুলোতে থাকবে ঘাট ব্যবস্থাপকদের ফোন নম্বর।

এদিকে ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বেশ কিছু প্রস্তাবনা দেবে। বন্যায় জাহাজ ও লঞ্চ চলচলে বাড়তি সতর্কতাসহ ঘাট ব্যবস্থাপনায় পুলিশের কঠোর অবস্থান চাইবে সংস্থাটি।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, বন্যার কারণে পানি বেড়ে যাওয়ায় কিছু ফেরিঘাটের পন্টুন ডুবে গেছে। সেগুলো সংস্কার করে উঁচু করা হয়েছে। তবে এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলেও নতুন করে ব্যবস্থা নেবে সংস্থাটি। পাশাপাশি বিকল ফেরিগুলো মেরামতেরও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে ঘাটে যানজটের বিষয়টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। ফলে রোববারের বৈঠকে তাদের বিশেষ সহযোগিতা চাইবে বিআইডব্লিউটিএ।

এছাড়াও ৯ জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত রাতে সব পণ্যবাহী জাহাজ ও বালুবাহী বাল্কহেড বন্ধ রাখা, নৌপথে চাঁদাবাজি ও ডাকাতি প্রতিরোধে পুলিশের টহল জোরদার, ঘাট ইজারাদার দ্বারা যাত্রী হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশ কিছু বিষয়েও আলোচনা হবে।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমোরেড এম মাহবুব-উল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘ফেরি চলাচলের ক্ষেত্রে আমরা শুধুমাত্র ঘাটের বিষয়টি দেখি। বন্যার কারণে পানি বেড়ে যাওয়ায় পন্টুন ডুবে গিয়েছিল, সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিসিকে তাদের ফেরিগুলোতে কোনো সমস্যা থাকলে তা মেরামত করার অনুরোধ জানাই। তবে ঘাটের সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে রয়েছে, আর যানজটের বিষয়ে পুলিশের তদারকি বেশি থাকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঈদ ব্যবস্থাপনা সভায় লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী না ওঠানো, বাড়তি ভাড়া না নেওয়া, যাত্রীদের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের ভিজিলেন্স টিম গঠনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর