রাজধানীর গণপরিবহন: থামার আগে নামে, উঠার আগে ছাড়ে

ঢাকা, জাতীয়

কামরুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-12-15 14:37:11

আট বছরের সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যাবেন রেজাউল করিম। ছেলেকে স্কুলের জন্য তৈরি করে নিয়ে এসে দাঁড়িয়েছেন রাজধানীর রামপুরা ব্রিজ বাস স্টপেজে। আসলে ঠিক নির্ধারিত স্টপেজে নয়, স্টপেজের অনেকটা আগে।

প্রায় ২৫ মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারেননি এ বাবা-ছেলে। এর মধ্যে তুলনামূলক ভিড় কম দেখে চার থেকে পাঁচটি বাসে উঠার চেষ্টা করেও শেষ পর্যন্ত পেরে উঠেননি। যাত্রীদের ধাক্কাধাক্কির মধ্যে ছেলেকে এক হাতে ধরে বাসের দরজা পর্যন্তও পৌঁছাতে পারেননি।

 

কাছে গিয়ে কথা বলতে চাইলে ভোগান্তির ক্ষোভ ঝারেন ছেলেকে নিয়ে বাসে উঠতে ব্যর্থ হওয়া এই বাবা। নির্ধারিত স্টপেজে না দাঁড়ানোর কারণ জানতে চাইলে স্টপেজ দেখিয়ে বলেন, ‘ওখানে তো কেউ নেই। বাসও ওখানে থামে না। তাই চলন্ত বাসে উঠা ছাড়া উপায় নেই। কষ্ট হলেও বাধ্য হয়েই ছেলেকে নিয়ে বাসে উঠার চেষ্টা করছি।’

অপেক্ষার আরও পাঁচ মিনিট পর ধাক্কাধাক্কি করেই তুরাগ পরিবহনের একটি বাসে উঠতে সমর্থ হন এই বাবা-ছেলে। বাসে উঠার পরে আর এই বাবা-ছেলের অভিব্যক্তি জানা যায়নি।

রাজধানী ঢাকার যে কয়েকটি সড়কে নগর পরিবহনের পাশাপাশি নিয়মিত দূর পাল্লার পরিবহন চলাচল করে তার মধ্যে অন্যতম প্রগতি স্বরণি। যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ থেকে মানিকনগর, কমলাপুর, মালিবাগ হয়ে রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, উত্তরা, টঙ্গী- এই সড়কে যানবাহনের ভিড় থাকে নিয়মিত।

 

এই সড়কে নির্দিষ্ট দূরত্বে স্টপেজ থাকলেও সেখানে বাস থামে না, যাত্রীরাও সেখানে দাঁড়ান না। নিজেদের সুবিধা মতো স্থানে বাস দেখলেই হাত বাড়াতে দেখা যায় যাত্রীদের। বাসগুলোও যেখানে সেখানে গতিরোধ করে যাত্রীদের উঠিয়ে নিচ্ছেন। বাস থামার আগেই যাত্রীরা নামতে শুরু করছেন। আবার যাত্রীরা উঠার আগেই বাসগুলো চলতে শুরু করে, বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে দৌড়ে বাসে উঠতে হয় তাদের।

কিন্তু এই চলন্ত বাসে উঠতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হন নারী, বৃদ্ধ ও শিশুরা। তাদের ক্ষেত্রে অনির্দিষ্ট সময় অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকে না। নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তাসমিয়া খানম। স্কুল ড্রেস পরিহিত এই ছাত্রীকে দেখা যায়, এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে। ক্লাস ধরার তাড়া আছে তাই বাস আসলেই সেটিতে উঠার চেষ্টা করছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উঠতে না পেরে চোখেমুখে বিরক্তি।

 

পঞ্চাশোর্ধ্ব আব্দুল হক, রাজধানীর দক্ষিণ বাড্ডায় মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। সায়েদাবাদ হয়ে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর যাবেন। রামপুরা ব্রিজ বাস স্টপেজে প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারেননি। চোখেমুখে আতঙ্ক নিয়ে বলেন, ‘বাস না থামলে উঠব কিভাবে? এমনিতেই ভিড়, তাও আবার বাসগুলো চলতে চলতে লোক উঠাচ্ছে।’

সরেজমিনে দেখা যায়, রামপুরা ব্রিজসহ কয়েকটি স্টপেজে বাস থামার জন্য আলাদা লেন করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই লেনে প্রবেশ করছে না বাসগুলো। পাশেই বাসের চালকরা এলোমেলোভাবে বাস থামিয়ে চালাচ্ছেন যাত্রী উঠানো-নামানোর প্রতিযোগিতা। যাত্রীরাও বাধ্য হয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত বাসে উঠতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

 

যাত্রী উঠাতে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় বাসচালকরা। পেছন থেকে এসে এমনভাবে বাসগুলো দাঁড় করাবেন যেন, অপর বাসটি তার আগে যেতে না পারে। এই প্রতিযোগিতা ও নির্ধারিত স্টপেজে না থামার কারণ জানতে চাইলে রাইদা পরিবহনের এক বাসচালক বলেন, ‘যাত্রীরা তো স্টপেজে দাঁড়ান না। আর নামার সময় জোর করে স্টপেজ ছাড়া নামতে চান। সব ড্রাইভাররা যেভাবে চালায়, আমার সেভাবে চলতে হবে।’ এটুকু বলেই সামনের দিকে এগোতে থাকেন এই চালক।

রামপুরা পুলিশ বক্সে কর্তব্যরত এক পরিদর্শকের সাথে স্টপেজের বিশৃঙ্খল অবস্থা নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি রাজি হননি। সড়কে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাজ্জাদ বলেন, ‘বাসচালক, যাত্রী কেউ আইন মানতে চান না। চালকদের যেমন দোষ আছে, তেমনি যাত্রীরাও এর জন্য দায়ী।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর