বন্যা দুর্গতদের ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে ৬ মাস 

রংপুর, জাতীয়

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রংপুর | 2023-08-22 16:35:53

গাইবান্ধা থেকে ফিরে: গাইবান্ধা জেলার চারভাগের তিন ভাগ জুড়েই দুর্গম চরাঞ্চল আর নিচু এলাকা। এবারের বন্যায় নদী কেন্দ্রিক এ জেলায় প্রায় এক লাখ পরিবারের সাড়ে তিন লাখ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এসব মানুষের বছরে চার মাস চলে যায় শুধু উঠে দাঁড়াতেই। কিন্তু এবার ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে কমপক্ষে ছয় মাস।

প্রতিবছরই এ জেলার মানুষ বন্যা আর নদী ভাঙনের কবলে পড়ে। যুদ্ধ করতে হয় ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে বেঁচে থাকার জন্য। এবারও বন্যা ও নদী ভাঙন দেখেছে গাইবান্ধাবাসী। কিন্তু এমন ভয়াবহতার কথা ভাবেনি। এবারের বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ গত ত্রিশ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে।

উজানের ঢল আর বন্যার পানির তোড়জোড়ে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। বিলীন হয়েছে ঘরবাড়ি। মারা গেছে গবাদি পশু। পানির নিচে নষ্ট হয়েছে ১১ হাজার হাজার হেক্টর আবাদি জমি। পুকুর ডুবে ভেসে গেছে মাছও। ভেঙে গেছে কাঁচা-পাকা রাস্তা, কালভার্টসহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রতিরক্ষা বাঁধ। বন্যার পানি দুর্গম চরাঞ্চল উপচে ঢুকেছে শহরের বুকে। যেন চারিদিকে শুধু পানি আর পানি।

এখন বন্যার পানি কমতে শুরু হলেও, কমছে না পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ। অশান্ত ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, যমুনা, করতোয়া আর তিস্তায় ধীর গতিতে বিপদসীমার নিচের দিকে যাচ্ছে বন্যার পানি। এখন ঘরে ফেরার অপেক্ষায় বানভাসি মানুষরা। নতুন করে ঘুরে দাড়াতে প্রতিবছর যেখানে সময় লেগেছে তিন থেকে চার মাস, এবার সেখানে ছয়মাসের হিসেব গুণতে হবে বন্যা দুর্গতদের।

জেলার সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, সদর, সাঘাটা, ফুলছড়ি, পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ৫১ ইউনিয়ন এবারের বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এক লাখ ৪ হাজার পরিবারের প্রায় ৪ লাখ মানুষ। এগারো হাজার হেক্টর আবাদি জমির বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পানির তোড়ে ভেঙে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে ৫১৭ কিলোমিটার কাঁচা ও পাকা রাস্তা। সাড়ে ৫৭ কিলোমিটার বাঁধের সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৮ টি কালভার্ট।

এতো ক্ষতির মধ্যে সাধারণ মানুষের বাঁচার জন্য ফসলি জমি আর মাথা গোঁজাবার ঠাঁই টুকু ঠিকঠাক করতেই কেটে যাবে কয়েক মাস। তারপরও ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা নদী বেষ্টিত গাইবান্ধার ক্ষতিগ্রস্ত বন্যার্তরা। তা নিয়েও চলছে হিসেব-নিকেষ।

এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সোলায়মান মিয়া। ফুলছড়ি উপজেলার উদাখালি ইউনিয়নের আনন্দবাজারে তার সাথে কথা হয়। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি জানান, ‘বন্যায় ভেসে গেছে তার ঘরবাড়ি। পানিতে ডুবে মারা গেছে দুটি ছাগল ও একটি গরু। সব সহায় সম্বল হারিয়ে নিঃশ্ব। এখন কোমর পানিতে ডুবে আছে প্রায় ১০ বিঘা আবাদি জমি।’

সোলায়মান জানান, ‘পানি কমলে সে বাড়ি ফিরবে। আগেও এমন ভাঙন আর বন্যা দেখেছে। প্রতিবছর বন্যার সঙ্গে যুদ্ধ করে ঘুরে দাড়াতে তিন চার সময় লাগে। কিন্তু এবার ছয় মাসেও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে কিনা সন্দেহ। অনেক ক্ষতি হয়েছে। এসব ক্ষতি পুষিয়ে উঠা হঠাৎ করে সম্ভব নয়।’

এই কৃষকের মত গাইবান্ধার হাজারো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের সবার আহাজারি আর হাহাকারে এখন ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন। রবি মৌসুমে এসব জমিতে ফসল উৎপাদন করতে না পারলে পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসার ভয়ে আতঙ্কে উঠছেন তারা।

এদিকে গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘বন্যা পরবর্তী সময়ে কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এবারের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কৃষকদের একটু বেশি সময় লাগতে পারে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর