রাজশাহীতে প্রায় ৫০ হাজার কোরবানির পশু ঘাটতি!

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 04:28:22

রাজশাহীতে কোরবানির মৌসুমে প্রায় ৪ লাখ ১৫ হাজার পশুর চাহিদা রয়েছে। তবে জেলার বিভিন্ন খামারে লালন-পালন করা হচ্ছে ৩ লাখ ৬৯ হাজার কোরবানির পশু। ফলে অঞ্চলভিত্তিক চাহিদা ও উৎপাদন অনুযায়ী প্রায় ৪৬ হাজার কোরবানির পশু ঘাটতি রয়েছে। রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র এই তথ্য জানিয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তা ডা. অন্তিম কুমার সরকার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সাধারণত দুই শতাংশ বৃদ্ধি ধরে প্রতি বছর কোরবানির পশুর চাহিদা নিরুপণ করে থাকে। তবে এটি সম্ভাব্য হিসাব। সেই হিসাবে ঈদে রাজশাহীতে ৪৫ হাজার ৪২৬টি পশুর ঘাটতি রয়েছে। তবে এখনও ১২/১৫ দিন সময় বাকি আছে। এর মধ্যে অনেকের পশু কোরবানির উপযুক্ত হবে। ফলে অঞ্চলভিত্তিক উৎপাদিত গরুতেই জেলার কোরবানির চাহিদা পূরণ হতে পারে।’

তিনি জানান, রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলায় ১৭ হাজার ৭০০ খামার রয়েছে। যেখানে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৫৭৪ টি কোরবানির পশু লালন-পালন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ষাঁড় ৭১ হাজার ৮৩১, বকনা গরু ৬ হাজার ১৮, মহিষ ২ হাজার ৬৭৫, ছাগল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৭৫ ও ভেড়া ১৩ হাজার ৬৭৫ এবং অন্যান্য পশু রয়েছে  এক হাজার ১৩৬টি।

এদিকে, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজশাহীর বিভিন্ন খামারে ভেটেরিনারি সার্জনদের দিয়ে পশুর সংক্রামক রোগ পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঈদের আগ পর্যন্ত এই কার্যক্রম চলবে। তবে এবার গবাদি পশুর মারাত্মক সংক্রামক রোগ অ্যানথ্রাক্স বা অন্য কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব নেই বলে জানান রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) কল্যাণ কুমার ফৌজদার।

তিনি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘ভেটেরিনারি সার্জনদের নিয়ে মেডিক্যাল টিম গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে টিম পশু হাটগুলোর মনিটরিং এবং প্রয়োজনীয় সেবা দেবে। কোনোভাবেই যেন অসুস্থ পশু হাটে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে নজর রাখা হবে।’

এদিকে, রাজশাহীর পবা, পুঠিয়া, দুর্গাপুরে ঘুরে দেখা গেছে খামারিরা কোরবানির পশুর শেষ সময়ের যত্ন নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পবার হারুপুর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশ কিছু খামারে কোরবানিকে সামনে লালন-পালন করা হয়েছে গবাদি পশু। প্রতিটি খামারে পাঁচ থেকে ১০ টি গরু রয়েছে। এছাড়া প্রায় বাড়িতে দুই থেকে চারটি গরু রয়েছে।

পুঠিয়ার খামারি মুরাদ হোসেন জানান, ছয়মাস আগে গরুগুলো কিনেছেন তিনি। এর মধ্যে একটি গরুর ৭২ হাজার টাকায় কেনা হয়। সেই গরুটি ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দাম বলছে। ১ লাখ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা হলে বিক্রি করবেন তিনি। পবার রবিউল ইসলামের ১২টি গরু রয়েছে। পাঁচমাস আগে গরুগুলো কিনেছিলেন তিনি। বর্তমানে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দাম উঠছে। আর কিছু বেশি হলে তিনি গরু বিক্রি করে দিবেন।

পশু চিকিৎসক সেলিনা ও শাহিন জানায়, পবার গ্রামগুলোতে অনেক পশুর খামার রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ থেকে ছয় মাস পশু লালন-পালন করা খামারি বেশি। পশুর রোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বছর গবাদি পশুর অ্যানথ্রাক্সসহ অন্য রোগ বালায় নেই।

রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান বলেন, ‘হাটে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের নিরাপাত্তায় বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হাটে একজন পশু চিকিৎসক রয়েছেন। কোরবানির পশুর সংখ্যা নিরূপণ, হাটে স্বাস্থ্যসম্মত পশুর ক্রয়-বিক্রির ব্যাপারে তিনি তদারকি করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাটে জাল টাকা শনাক্তের জন্যও মেশিনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

চাঁদ দেখা সাপক্ষে ১২ আগস্ট ঈদুল আজহার সম্ভাব্য দিন ধার্য রয়েছে। তাই এখনও দু’ সপ্তাহেরও বেশি সময় হাতে রয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী সপ্তাহ থেকে হাটে কোরবানির পশু কেনাবেচা জমজমাট হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর