রেকর্ড সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী, ঠাঁই নেই হাসপাতালে

ঢাকা, জাতীয়

মনি আচার্য্য, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-23 13:02:33

সাকিল আহমেদ, তিন দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত। চিকিৎসকের কাছে গেলে টেস্ট করতে বলেন। টেস্ট করানো শেষে ধরা পড়ল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত সাকিল।  ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান বড় ভাই সোহাগ। অনেক চেষ্টা পরও সিট না পাওয়ায় সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে নেন। দুই দিন ওই হাসপাতালে থাকার পর প্লাটিলেট ৩০ হাজারে নিচে নামলে হাসপাতালটির চিকিৎসক আইসিইউতে নেওয়ার পরামর্শ দেন। কর্মচারি হাসপাতালে আইসিইউ না থাকা- আবার ছুটে যান ঢামেকে।

গুরুতর অসুস্থ সাকিলকে হাসপাতালের বারান্দায় রেখে ভর্তির জন্য ছোটাছুটি করেন ভাই সোহাগ। ঢামেক কর্তৃপক্ষ জানায়, আইসিইউ‘র সিট পাওয়া তো দূরের কথা বেডও পাওয়া যাবে না। আপনারা ভর্তি করান, ফ্লোরে থাকবে। পরে একজনের তদবিরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিতে বাধ্য হন সাকিলকে।

তেজগাঁও কলেজের শিক্ষার্থী ফারহানা। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে ঢামেক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি হন। তাও জায়গা হয় ফ্লোরে।

সারা দেশ ডেঙ্গু জ্বরের আতঙ্কে ভুগছে। দিন যতই এগোচ্ছে এই আতঙ্কের মাত্রা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। তবে এ আতঙ্কের ছাপ শুধু মানুষের মধ্যেই  নয়, কাগজে কলমেও ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা বিগত যে কোনো বছরের পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে গেছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে সিট সংকটে থাকা হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির বিড়ম্বনা।

রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বিগত বছরগুলোতে যেখানে হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ১০০-৪০০ জন। কিন্তু চলতি বছরের শুধু জুলাই মাসে এর থেকে বেশি রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। আর ভর্তি এই হার প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর হাসপাতালগুলো।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঢামেক ও সেন্ট্রাল হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতাল দুইটিতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী সংখ্যা বিগত যেকোনো বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। ওয়ার্ড এবং কেবিনে ডেঙ্গু জ্বরের রোগী দিয়ে পরিপূর্ণ। তাই ওয়ার্ড ও কেবিনের বাইরে ফ্লোরে রোগীদের জায়গা দিতে হচ্ছে।

ঢামেকের ৫০২ নম্বর ওয়ার্ডের বারান্দার ফ্লোরে দেখা গেল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৫০ জনের বেশি রোগী। স্বজনরা কারে মাথা পানি ঢালছেন। কারো হাতে স্যালাইন লাগানো।

তবে জীবন বাঁচাতে হাসপাতালের ফ্লোরে আশ্রয় নেওয়া এসব রোগী ও তাদের স্বজনদের পোহাতে হচ্ছে নানা ভোগান্তি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন যে পরিমাণে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আসছেন তাতে আর ওয়ার্ড কিংবা কেবিনের বাইরেও জায়গা দেওয়ার সুযোগ নেই।  এছাড়া ধারণ ক্ষমতার বাইরে রোগী আসায় চিকিৎসা সেবাও ব্যহত হচ্ছে।

ঢামেক সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩২১ রোগী ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৫৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া চলতি মাসে ৪ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। আর এখন পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা শেষে ছাড়া পেয়েছেন ৮৬১ জন।

এ বিষয়ে ঢামেকের ক্লিনিক্যাল প্যাথলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা.আজিজ আহমেদ খান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ঢামেক হাসপাতালে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছেন।

বিগত বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন,  গত বছর এ সময় ডেঙ্গু জ্বরের সিবিসি প্লাটিলেট টেস্ট করতে ১০-১৫ জন আসত। কিন্তু এখন প্রতিদিন ১০০-১৫০ জন আসছেন। এছাড়া গত বছরের জুলাই মাসে এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৪০০, কিন্তু এ বছর ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। এতেই বুঝা যায় এ বছর ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অন্য যেকোনো বছরকে ছাড়িয়ে গেছে।

এ দিকে রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী চলতি বছরে এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ৬৮৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৮২ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. একেএম মোজাহের হোসাইন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের আর জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। ওয়ার্ড ও কেবিন তো পরিপূর্ণ হয়েছে সেই সঙ্গে বাইরের ফ্লোরে বেড দিয়েও রোগী জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া জরুরি পর্যবেক্ষণ কক্ষেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতি এর আগে কোনো বছরই হয়নি। আমাদের ধারণ ক্ষমতার বাইরে গিয়ে চিকিৎসা দিচ্ছি। পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়াবহ হচ্ছে।

এছাড়া রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ডেঙ্গু জ্বরের আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর