চামড়া শিল্পের জন্য টাস্কফোর্স গঠন করা হবে

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-27 19:55:22

রফতানি বাজারে বাংলাদেশি চামড়া শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।

তিনি বলেন, ‘শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এটি গঠন করা হবে। এ টাস্কফোর্স প্রতি সপ্তাহে চামড়া শিল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।’

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে ‘চামড়া শিল্পনগরী, ঢাকায় ট্যানারি কারখানার চামড়া উৎপাদন পরিস্থিতি ও টেকসই উন্নয়নে প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিল্পমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) এবং লেদার সেক্টর বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এলএসবিপিসি) যৌথভাবে এর আয়োজন করে।

শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘সম্পূর্ণ দেশীয় কাঁচামালনির্ভর চামড়া শিল্পের অপার সম্ভাবনা থাকলেও এখনও তা পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ইতোমধ্যে হাজারীবাগ থেকে সাভারের পরিবেশবান্ধব শিল্পনগরীতে ট্যানারি স্থানান্তরে সক্ষম হয়েছে।’

চামড়া শিল্পনগরিতে সিইটিপি স্থাপন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্তের আলোকে অবশিষ্ট কাজগুলোও বাস্তবায়ন করা হবে। এ লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে টিমওয়ার্কের ভিত্তিতে কাজ করছে। অচিরেই চামড়া শিল্পখাতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

চামড়া শিল্পখাতে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমম্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এ অগ্রগতির ধারাকে আরও অনেক দূর এগিয়ে নিতে হবে। বিশেষ করে, পাদুকা ও চামড়াজাত পণ্য রফতানির বিশাল সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এজন্য টাস্কফোর্স গঠনের পাশাপাশি দেশীয় চামড়া কাজে লাগাতে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে দু‘টি চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনের বিষয়ে সরকার কাজ করছে।’

তিনি চামড়া শিল্পখাতে বহুমুখী পণ্য উৎপাদন এবং রফতানি প্রবৃদ্ধির জন্য দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন।

বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন (বিটিএ) ও লেদার সেক্টর বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল (এলএসবিপিবি) আয়োজিত সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন শিল্প সচিব আব্দুল হালিম, বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিকুল আহমেদ, সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম, এনবিআর এর সদস্য সুলতান আহমেদ ইকবাল, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম এবং চামড়া শিল্প উদ্যোক্তা ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আবু তাহের ও টিপু সুলতান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ।

বক্তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের চামড়া শিল্পখাতে শতকরা ৬০ ভাগ মূল্য সংযোজনের সুযোগ থাকলেও দেশীয় চামড়াজাত পণ্যের অনুকূলে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের ছাড়পত্র না থাকায় রফতানি প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। তারা এ সনদ অর্জনের জন্য আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী সিইটিপি পূর্ণমাত্রায় সচলকরণের তাগিদ দেন।’

একই সঙ্গে তারা ট্যানারি মালিকদের অনুকূলে বরাদ্দকৃত প্লট রেজিস্ট্রেশন, ট্যানারি সংশ্লিষ্ট কেমিক্যাল আমদানিতে কর অবকাশ সুবিধা প্রদান, কৃষিভিত্তিক শিল্প হিসেবে ট্যানারি মালিকদের ৫ শতাংশ সুদে ঋণ প্রদান, ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য আবাসন ও পরিবহণ সুবিধা নিশ্চিতকরণ, বর্জ্য পরিশোধন এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের সুপারিশ করেন। তারা পরিবেশগত কমপ্লায়েন্ট মেনে চলা ট্যানারি মালিকদের প্রণোদনার পাশাপাশি দূষণকারী ট্যানারির ওপর পল্যুশন ট্যাক্স ধার্য করার পরামর্শ দেন।

বক্তারা আরও বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববাজারে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার থাকলেও বাংলাদেশ এখান থেকে মাত্র ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করে। বাংলাদেশ এ শিল্পের কাঁচামালে সমৃদ্ধ উল্লেখ করে তারা রফতানি বাড়াতে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী চামড়া শিল্পের উন্নয়নের তাগিদ দেন। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যেই চামড়া শিল্পখাতে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানির পাশাপাশি এ শিল্পখাতে ৫০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান তৈরি হবে বলে তারা মন্তব্য করেন।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর