বাঁধ না দিলে জামালপুরবাসীকে প্রতি বছর ডু্বতে হবে

ঢাকা, জাতীয়

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, সরিষাবাড়ী থেকে | 2023-08-19 00:11:03

বেলা পড়ে যাচ্ছে। সারিবদ্ধভাবে বসা নারী ও পুরুষের ভিড়। অসহায় চোখ আর মুখের চেহারা বলে দেয় ভালো নেই মানুষগুলো। বানভাসি অসহায় মানুষগুলো বসে আছেন ত্রাণের আশায়।

বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় নেতারা তালিকা করে হাতে স্লিপ ধরিয়ে দিয়েছেন। সেই স্লিপ নিয়ে বসে আছেন তারা। মেলান্দহ আমবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কথা হচ্ছিল তাদের কয়েকজনের সঙ্গে।

ছমিরন বিবি ও হুকুম আলি। দুজনই সত্তরোর্ধ্ব। তাদের বাড়ির আঙিনায় মাথা ছুঁই ছুঁই পানি। বলছিলেন, দীর্ঘ অপেক্ষার পর যে পরিমাণ শুকনো খাবার তারা পাবেন তা দিয়ে বড়জোর পরিবার-পরিজন নিয়ে তিন বেলার খাবার জুটবে।

ভবিষ্যতের দিনগুলোর অনিশ্চয়তা ছায়া ফেলেছে তাদের চোখেমুখে। পরিস্থিতি এমন যে, কারো কাছে হাত পাতার মতো অবস্থায়ও নেই তারা।

রোজগার না থাকায় হয় ধার-দেনা করে কিংবা স্বল্প দামে গরু-বাছুর বিক্রি করে বানভাসি দিনগুলো পার করতে হবে বেশির ভাগ বন্যা দুর্গতদের।

“আমাদের দ্রুত বাঁধ করে দিয়ে বাঁচান। এভাবে ত্রাণের জন্য লাইনে যাতে বসে থাকতে না হয়”, বলছিলেন আমবাগ এলাকার গৃহস্থ আব্দুল কুদ্দুস।

তার মতো অনেকেই গরু-বাছুর, হাঁস-মুরগি নিয়ে বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জামালপুর জেলার অর্ধেকের বেশি বাসিন্দা বন্যা কবলিত।

পানি কমে যাওয়ার ধারাবাহিকতায় ছন্দপতন ঘটেছে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টিতে। ফের বন্যা পরিস্থিতিকে অবনতির পথে ঠেলে দিয়েছে।

মিরাজ মিয়া, সোলেমান মন্ডলসহ অনেকেই বলছিলেন পানি কমে যাবার লক্ষণ দেখে ধারণা ছিল দিন সাতেকের মধ্যেই বাড়ি ফিরতে পারবেন। কিন্তু না। মধ্যমেয়াদী বন্যার আশঙ্কায় এখন কপালে ভাঁজ তাদের মত হাজারো বন্যা দুর্গতের।

জামালপুর জেলার সদর, মেলান্দহ, দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, সরিষাবাড়ীসহ যেখানেই ত্রাণ বিতরণের কর্মসূচি ছিল সেখানেই দেখা গেছে সম্মিলিতভাবে অসহায় মানুষদের অভিন্ন চেহারা।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে শুক্রবার (২৬ জুলাই) দিনভর জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে আয়োজন করা হয় ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচির।

প্রধান অতিথি হিসেবে এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, সাবেক পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি, অসীম কুমার উকিল এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, শিক্ষা ও মানবসেবা বিষয়ক সম্পাদক বেগম শামসুন্নাহার চাপা প্রমুখ।

বানভাসি মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা তুলে ধরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ফি বছর আমাদের কেন ত্রাণ দিতে এখানে আসতে হবে? এই এলাকার মানুষের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন বাঁধ। পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ করা হলে বন্যার কবলে আর মানুষদের পড়তে হবে না, ত্রাণেরও প্রয়োজন হবে না।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, আমি যেখানে গিয়েছি সেখানে দেখেছি এ অঞ্চলের মানুষ ত্রাণ নয়, তারা চায় বাঁধ। নদী শাসন। ঢাকায় ফিরে আমি প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাব, চেষ্টা করব এ অঞ্চলের মানুষের পাশে থাকার।

পরিকল্পিতভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হলে এ অঞ্চলের মানুষে দুর্যোগের ঝুঁকি অনেক কমে যাবে। এভাবে আমরা গোটা বাংলাদেশকে দুর্যোগ সহনশীলতার দিকে নিয়ে যেতে চাই, বলেন ডা. এনামুর রহমান।

আগামী তিন মাস অসহায় বানভাসি মানুষের প্রয়োজনে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় আনার কথাও বলেন তিনি।

মির্জা আজম এমপি বলেন, জামালপুর থেকে টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণ হলে বেঁচে যেত এ অঞ্চলের মানুষ। বন্যায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয় সেই অর্থ দিয়েই ১ বছরে বাঁধ নির্মাণের ব্যয় উঠে আসবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর