ডেঙ্গুর প্রভাবে রক্তের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-21 21:19:15

ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে রক্তের চাহিদা। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রক্তে প্রায়ই প্লাটিলেটের (অণুচক্রিকা, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে) মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যায় বলে তাদের শরীরে বাইরে থেকে প্লাটিলেট দেওয়ার প্রয়োজন হয়।

রোগীর জীবন বাঁচাতে তাই রোগীর স্বজনরা দ্বারস্থ হচ্ছেন ব্লাড ব্যাংকগুলোতে। ন্যূনতম মূল্যে রোগীদেরকে চাহিদা মতো রক্ত কিংবা রক্তদাতা সরবরাহের চেষ্টা করছে ব্লাড ব্যাংকগুলো। তবে হঠাৎ করে রক্তের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় তা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ব্লাড ব্যাংক ছাড়াও ব্যক্তিগত যোগাযোগ, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমেও অনেকে রক্ত সংগ্রহ করছেন।

রাজধানীর একাধিক ব্লাড ব্যাংক ও ট্রান্সফিউশন সেন্টার ঘুরে রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের চেয়ে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় গুণ রক্তের চাহিদা বেড়েছে। সকারি হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক হোক কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, বেসরকারি ব্লাড ব্যাংক সবখানেই একই অবস্থা।

স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের একটি বড় সংগঠন বাঁধন। বাঁধনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই ডোনার হিসেবে রক্ত দেন। বাঁধনের ঢাবি শাখার সভাপতি আহসান উল্যাহ পাঠান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘রক্তের প্রয়োজন হলে সবসময় চাহিদা অনুসারে ডোনার জোগার করে দিই। কিন্তু গত একমাসে রক্তের চাহিদা এত বেড়েছে যে এখন ডোনার জোগার করতে হিমশিম খাচ্ছি।’

কোয়ান্টাম ব্লাড ব্যাংক রক্ত সংরক্ষণ করে। রক্ত সংগ্রহের জন্য প্রতিনিয়ত সেখানে ভীর লেগেই আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেখানকার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক রোগীর স্বজন ডোনার না পেয়ে জরুরি প্রয়োজন মেটাতে সংরক্ষণ করা কিছুটা পুরনো রক্তও এখান থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুস্থ মানুষের রক্তে প্লাটিলেটের হার প্রতি ১০০ মিলি লিটারে দেড় লাখ থেকে চার লাখ। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে প্লাটিলেট এক লাখের নিচে চলে আসে। প্লাটিলেট ২০ হাজারের নিচে নেমে এলে কোনো ধরনের আঘাত ছাড়াই শরীর থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে, যেমন- নাক বা দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্তপাত, মলের সঙ্গে রক্ত আসা ইত্যাদি।

সংগৃহীত রক্ত থেকে প্লাটিলেট পৃথক করতে তা নিতে হয় ট্রান্সফিউশন সেন্টারে। প্লাটিলেট যেহেতু যথাসম্ভব দ্রুত সময়ে রোগীর শরীরে প্রবেশ করাতে হয় তাই স্বজনদের দ্বারা সরবরাহকৃত রক্তের প্রয়োজনীয় পরীক্ষণ শেষে প্লাটিলেট সংগ্রহ করে স্বজনদের হাতে দিচ্ছে ট্রান্সফিউশন সেন্টারগুলো।

বুধবার (৩১ জুলাই) সকালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, রোগীর স্বজনদের ভিড় লেগে রয়েছে। যাদের অনেকেই প্লাটিলেট সংগ্রহের জন্য এসেছেন।

রক্ত সংগ্রহে আসা মনিরুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'মেয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। ডোনার নিয়ে এসে ক্রস ম্যচিং করিয়ে রক্ত দেওয়া হয়েছিল। রক্ত থেকে প্লাটিলেট পৃথক করা হয়েছে সেটাই নিতে এসেছি। খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকার মতো।'

দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় সেখানে ভিড় কিছুটা কম। একই চিত্র মিরপুরের ডেল্টা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন সেন্টারেরও। তবে রক্তের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।

রক্ত থেকে প্লাটিলেট সংগ্রহে বেশ কয়েকটি পদ্ধতি প্রচলিত আছে। এর মধ্যে প্লাটিলেট অ্যাপহেরেসিস, র‌্যানডম ডোনার প্লাটিলেট ও সিঙ্গেল ডোনার প্লাটিলেট পদ্ধতি বহুল ব্যবহৃত। পদ্ধতি ও হাসপাতাল ভেদে প্লাটিলেট পৃথকীকরণ খরচও ভিন্ন ভিন্ন।

জানতে চাইলে রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড ব্যাংকের মোহাম্মদপুর শাখার ইনচার্জ ডা. জাহিদুর রহমান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘২০০ মিলি লিটার প্লাটিলেটকে এক ইউনিট বলা হয়। আমরা দুটি পদ্ধতিতে এক ইউনিট রক্তের প্লাটিলেট সংগ্রহ করে থাকি। এর একটি হল অ্যাপহেরেসিস পদ্ধতি, যেটা অনেকটা ডায়ালাইসিসের মতো। এতে খরচ হয় ১৫ হাজার ৮০০ টাকা।’

‘আরেক পদ্ধতিতে চারজন ডোনারের থেকে এক ইউনিট প্লাটিলেট সংগ্রহ করা যায়। এতে সময় লাগে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। খরচ হয় চার হজার ৭০০ টাকা।’

ডা. জাহিদ বলেন, 'রক্ত সংগ্রহের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। স্বাভাবিক সময়ে যে চাহিদা থাকে তার সঙ্গে গত এক মাসের পরিস্থিতির তুলনা করলে সেটি প্রায় পাঁচগুণ। মঙ্গলবার রাতে প্রায় ৭৫ ইউনিট রক্ত সরবরাহ করেছি।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর