মিয়ানমার নাগরিকত্ব আইন না বদলালে সমাধান আসবে না

ঢাকা, জাতীয়

খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-28 01:05:59

মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন না বদলালে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান আসবে না। পর্যায়ক্রমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব নিশ্চিত করাকেই রাখাইন সংকট সমাধানের পথ বলে উল্লেখ করা হয়েছিল কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনে। এর ওপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশেকে এগিয়ে যেতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএম-এর সাবেক কর্মকর্তা আসিফ মুনির।

বুধবার (৩১ জুলাই) বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন আইওএম-এর সাবেক এই কর্মকর্তা।

আসিফ মুনির বলেন, সেপ্টেম্বরে আসন্ন জাতিসংঘ অধিবেশন ও কিছুটা আন্তর্জাতিক চাপের কারণে শুধু লোক দেখানো হিসেবে মিয়ানমার যদি কিছু করে তাহলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন অনেক দূরে। কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনে এ সংকটের সমাধান দেওয়া রয়েছে। এর আলোকেই পরিকল্পনা নিতে হবে।

তিনি বলেন, মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল ২৮ জুলাই কক্সবাজারে এসে বলে গিয়েছে—রোহিঙ্গাদের আমরা নাগরিকত্ব দিতে প্রস্তুত। ১৯৮২ সালের মিয়ানমারের আইন অনুযায়ী প্রত্যেককে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এছাড়াও যারা দাদা, মা ও সন্তান—এই তিনের অবস্থানের প্রমাণ দিতে পারবে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। একইভাবে ন্যাশনাল ভ্যারিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) অনুযায়ী যারা কাগজপত্র দেখাতে পারবে তাদেরও নাগরিকত্ব দেওয়া হবে।

আসিফ মুনির আরও বলেন, ১৯৮২ সালের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব আইনটিই একটি ত্রুটিপূর্ণ আইন। এ আইন অনুসরণ করলে কোনো রোহিঙ্গা নাগরিকত্ব পাবেন না। এটা তো ’৮২ সাল থেকেই বহাল আছে, নাগরিকত্ব পেলে তো স্বাভাবিক নিয়মে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না।

মিয়ানমার আনান কমিশনের অধিকাংশ সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজি থাকলেও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার বিষয়ে তারা আগের অবস্থানেই আছে। নাগরিকত্ব নিশ্চিতের পথে ১৯৮২ সালে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনকে বাধা হিসেবে শনাক্ত করেছিল আনান কমিশন। আইনটি সংশোধনের আবশ্যিকতা তুলে ধরা হয়েছিল কমিশনের প্রতিবেদনে। তবে শর্তসাপেক্ষে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে মিয়ানমার রাজি বলে মন্তব্য করেছেন মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে।

এ প্রসঙ্গে আসিফ মুনির বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ অধিবেশন। সে কারণেই হয়তো মিয়ানমার লোক দেখানোর জন্য কক্সবাজারে প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছে। এটিকে খুব একটা বিশ্বাস করার মতো অবস্থা এখনও তৈরি হয়নি।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে যতদিন পর্যন্ত মিয়ানমার তাদের দেশে নাগরিকত্ব আইন বদল না করছে ততদিন পর্যন্ত তাদের ফেরা কষ্টকর। ফিরলেও আগের বারের মতো রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করতে পারে তারা।

বাংলাদেশকে পরামর্শ দিয়ে আসিফ মুনির আরও বলেন, আসন্ন জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশকে মিয়ানমারের ওপর জোর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরাতে একটি নির্দিষ্ট টাইমফ্রেম দেবার জন্য মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে। প্রয়োজনে চীন ও ভারতের মধ্যস্থতায় বৃহৎ শক্তিগুলোকে দিয়ে এমনভাবে টাইমফ্রেম ও প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা প্রণয়ন করাতে হবে যাতে কংক্রিট সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর