অ্যান্টিবায়োটিক মিশ্রিত দুধ কিনছে অনেক কোম্পানি

ঢাকা, জাতীয়

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-27 01:13:02

তরল দুধে ক্ষতিকর মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতির ঘটনায় কোম্পানিগুলোর অতি মুনাফার লোভ ও জালিয়াতিকে দায়ী করছেন রংপুর ডেইরির প্রতিষ্ঠাতা এস এম ফখর-উজ-জামান।

দুধে অ্যান্টিবায়োটিক ইস্যুতে প্রাণ, আড়ংয়ের মতো নামিদামি ব্র্যান্ডের চোখের জল নাকের জলে যখন একাকার অবস্থা, চরম আতঙ্কে অনেক ক্রেতা তরল দুধ কেনাই বন্ধ করে দিয়েছেন তখন নির্বিঘ্নে ব্যবসা করে যাচ্ছে রংপুর ডেইরির আরডি মিল্ক।

রংপুর ডেইরির প্রতিষ্ঠাতা এসএম ফখর-উজ-জামানের কাছে প্রশ্ন ছিল—আপনারা কিভাবে নিরাপদ দুধ সরবরাহ করতে সক্ষম হচ্ছেন? অন্যরাই বা পারছে না কেন? জবাবে তিনি বলেন, অন্যরা পারছে না তাদের মুনাফালোভী মানসিকতার কারণে। আমরা যে দুধ না কিনে ফেরত দিচ্ছি, অনেক কোম্পানি সেই দুধ কিনে বাজারে ছাড়ছে।

তিনি বলেন, দুধের মান নিশ্চিত করার জন্য আমরা মিল্ক এনালাইজার ব্যবহার করি। এই মেশিনটি দিয়ে তিন সেকেন্ডের মধ্যে নিশ্চিত হওয়া যায় দুধে অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে কিনা। আমাদের প্রতিটা ক্রয় কেন্দ্রে এই মেশিন রয়েছে। প্রতি লিটার দুধ টেস্ট করে তবেই কেনা হয়। দুধ অ্যান্টিবায়োটিক পজেটিভ হলে আমরা ফেরত দেই।

ফখর-উজ-জামান বলেন, সেই বিক্রেতারা অন্য কোম্পানির কাছে গিয়ে ঠিকই বিক্রি করছে। আবার আমাদের কাছে এসে বলেও যায় আপনারা তো নিলেন না তারা তো ঠিকই নিল। তবে এসব ক্ষেত্রে দুধের দামও কিছুটা কম দেওয়া হয়। এতে আমরা অনেক বিক্রেতাকে হারিয়ে ফেলি। ওরা পরে অন্য কোম্পানির সঙ্গে স্থায়ীভাবে থেকে যায়।

দূষিত দুধ কেনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা হয়তো জড়িত থাকতে পারে। কোম্পানিগুলো যদি প্রত্যেক ক্রয় সেন্টারে মিল্ক এনালাইজার স্থাপন করে কঠোর মনিটরিং করে তাহলে এই পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব। কিন্তু আমরা যেটা জানি অনেক কোম্পানির ক্রয় সেন্টারে মিল্ক এনালাইজার নেই, যোগ করেন ফখর-উজ-জামান।

মেশিনটির দাম কত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যখন ডেনমার্কের এই মেশিনগুলো কিনেছি তখন এর দাম ছিল দেড় লাখ টাকার মতো। এখন এই মেশিন সত্তর-আশি হাজার টাকায় পাওয়া যায়।

ফখর-উজ-জামানের এ কথায় প্রমাণ হয় সামান্য বিনিয়োগ এড়াতে কোম্পানিগুলো কোটি কোটি ভোক্তার সঙ্গে জালিয়াতি করছে। ভোক্তাদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে তাদের কোন আগ্রহই নেই।

তিনি বলেন, দুধের ব্যবস্থাপনা খুবই জটিল একটি বিষয়। পাস্তুরিত দুধ ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রার উপরে গেলে মান নষ্ট হয়ে যায়। আবার ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার নিচে এর খাদ্যমান নষ্ট হয়ে যায়। আর প্যাকেটে যদি ম্যাইক্রো আকারের ছিদ্রও থাকে তাহলেও দুধ দূষিত হয়ে পড়তে পারে। দুধের প্রসেস মেশিনের দাম আড়াই কোটি টাকা। আর এর প্যাকেটিং মেশিনের দাম সাড়ে ৪ কোটি টাকা।

দুধ অনেকে ডিপ ফ্রিজে রেখে পান করেন তাদের ক্ষেত্রে সচেতনতা প্রয়োজন বলে মনে করেন ফখর-উজ-জামান। তিনি বলেন, ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার নিচে দুধের খাদ্যমান নষ্ট হয়ে যায়।

দুধের অ্যান্টিবায়োটিক থেকে নিরাপদ থাকার উপায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানিগুলোকে মুনাফালোভী মানসিকতা ছাড়তে হবে। ক্রয় কেন্দ্রগুলোতে এনালাইজার সরবরাহ করতে হবে। আর খামারিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। তারা যেন গরুর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া অথবা খাওয়ানোর নির্দিষ্ট সময়ের পর দুধ সংগ্রহ করে।

রংপুর ডেইরির মালিকের কথায় একটি বিষয় উঠে আসে। তা হলো—কোম্পানিগুলোর অসাধু কর্মকর্তাদের কারসাজি, একইসঙ্গে অভিযুক্ত কোম্পানির আগাগোড়া এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত। দুধ সংগ্রহের সময় না হলেও কোম্পানির কেন্দ্রীয় ট্যাংকে প্রবেশের আগে এ বিষয়ে নিশ্চিত করা সম্ভব। কিন্তু সেটা যথাযথ হচ্ছে না বলে মনে করেন ভোক্তারা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর