ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা কমাতে পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে 'ভূমি শিক্ষা'

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-09-01 20:19:22

ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা হ্রাস, ব্যবস্থাপনা সহজ করা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভূমিসংক্রান্ত বিষয় পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। আর প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।

জানা গেছে, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ‘জাতীয় পাঠ্যক্রমে ভূমিসংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রয়োজনীয়তা’ শীর্ষক একটি সেমিনার হয়। সেখানে আলোচনায় ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা হ্রাস, ব্যবস্থাপনা সহজতর ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভূমিসংক্রান্ত বিষয় পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে মত উঠে আসে। বিষয়টি নিয়ে ভূমি সচিব বরাবর চিঠি পাঠান ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্রের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মো. আবদুল হাই। সেখানে বলা হয়, সেমিনারের আলোচনা ও সুপারিশকৃত বিষয়গুলো ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগ নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা যেতে পারে।

সুপারিশে বলা হয়, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে ভূমির প্রকৃতি, মুসলিম/হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের প্রাথমিক বিষয়, ভূমি সম্পর্কিত কোন সেবা কোথায় পাওয়া যায় ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। অষ্টম শ্রেণিতে নামজারি, রেজিস্ট্রেশন আইন, ভূমি জরিপে সেবাগ্রহীতার নৈমিত্তিক কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত টার্মিনোলজিগুলো সংজ্ঞা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। অষ্টম-দশম শ্রেণিতে পাটিগণিতে উত্তরাধিকার আইনবিষয়ক একটি অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।

এছাড়াও অষ্টম থেকে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত এবং সমমানের পাঠ্যক্রমে ভূমি ব্যবস্থাপনার ইতিহাস, ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ভূমির শ্রেণি, অর্পিত সম্পত্তি, দেবোত্তর সম্পত্তি ইত্যাদি এবং ভূমি উন্নয়ন কর অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এসব সুপারিশ আমলে নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়ে চিঠিও দিয়েছে।

এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, পাঠ্যবইয়ে ভূমিশিক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভূক্তির প্রস্তাব আসলেও সেখানে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ে ভূমির প্রকৃতি, উত্তরাধিকার আইনের জন্য আলাদা অধ্যায় দেয়া হলেও সেটি শিক্ষার্থীরা কতটুকু গ্রহণ করতে পারবে সেটাও দেখার বিষয়। কারণ ভূমি কিছু বিষয় স্বাভাবিকভাবেই একটু জটিল। তাই শিক্ষার্থীরা যতটুকু গ্রহণ করতে পারবে, সেটুকুই অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইনকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, এটি ভালো উদ্যোগ। তবে যেহেতু পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ এসেছে, সুতরাং সিদ্ধান্তটি এনসিটিবিকেই নিতে হবে।

আর গত ১৩ মার্চ ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোছা. নাজমুন নাহার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়।

ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণকেন্দ্রের পরিচালক মো. আবদুল হাইয়ের চিঠিতে বলা হয়, একজন মানুষের জন্মের পর থেকে ভূমির সঙ্গে সম্পর্ক বিদ্যমান থাকে। কোনো ব্যক্তি যে পেশাতেই থাকুক না কেন, পৈতৃকসূত্রে বা ক্রয়সূত্রে জমির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকেন। স্কুল-কলেজ-বিশ্বদ্যিালয়ে অনেক কিছু শেখানো হয়। কিন্তু ভূমি সম্পর্কে আলাদা কোনো বিভাগ বা পাঠ্যসূচি স্কুল-কলেজের বইগুলোতে নেই। কীভাবে জমির হিসাব, নামজারি, জমাভাগ হয় তা অনেক মানুষই জানেন না। অনেক উচ্চশিক্ষিত ও গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করার পরও শুধু ভূমি সম্পর্কিত জ্ঞান না থাকার কারণে সরকারি বা ব্যক্তিগত জমির মালিকানা রক্ষা করতে ব্যর্থ হন।

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ন চন্দ্র সাহা বার্তাটোয়েন্টাফোর.কমকে জানান, আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি, বিষয়টি ইতিবাচক। তাদের প্রস্তাব আমরা গ্রহণ করেছি। পাঠ্যপুস্তকের কারিক্যুলাম ডেভলপের যে কাজ চলছে, সেখানে এটি উপস্থাপন করা হবে। কোন ক্লাসে কতটুকু দেয়া যায় সেটি আলোচনা হবে। কারিক্যুলাম ডেভলপের জন্য আমাদের স্টেকহোল্ডার যারা আছেন তাদের সঙ্গে ওয়ার্কশপ হয়েছে, আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে আবার বসব। তখন আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাকছুদুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, দেশের আগামী প্রজন্ম ভূমি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করুক সেই বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছি যেন পাঠ্যপুস্তকে ভূমি বিষয়ে পড়াশোনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিশেষ করে ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণিতে এ বিষয়ে পাঠ্যক্রম চালু করলে শিক্ষার্থীরা ভূমি সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। পাঠ্যবইয়ে ভূমি সম্পর্কে পড়াশোনা চালু করলে সাধারণ মানুষও এ বিষয়ে জানার সুযোগ পাবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সব বয়সী নাগরিকদের ভূমি ব্যবস্থাপনার ধারনা দিতে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ 'ভূমি সেবা সপ্তাহ ও ভূমি উন্নয়ন কর মেলা- ২০১৯' এ ভূমি সম্পর্কে সচেতন করতে স্কাউট সদস্য এবং স্থানীয় তরুণদের ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করা হয়। এছাড়া, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বয়স ও শ্রেণি উপযোগী ভূমি শিক্ষা পাঠক্রম সংযুক্ত করারও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে উদ্যোগ নেয়া হয়। আর বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েকজন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইতোমধ্যে নিজ কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ভূমি বিষয়ক মৌলিক জ্ঞান ও সাধারণ জ্ঞানের অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রোগ্রাম আয়োজন করেছেন।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর