রাজশাহীতে কলেজে চলছে পরীক্ষা, মাঠে বসছে গরুর হাট!

রাজশাহী, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-27 05:40:43

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বানেশ্বর সরকারি কলেজে চলছে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চূড়ান্ত পরীক্ষা। উপজেলার ৫টি কলেজের তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর পরীক্ষার কেন্দ্র এটি। অথচ কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কলেজের মাঠে সপ্তাহে দুই দিন করে বসছে গরুর হাট।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষের আনাগোনা। গরুর ডাকাডাকির সঙ্গে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের হাকডাকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

তবে এই বিষয়ে নিরুপায় কলেজ অধ্যক্ষ এসএম একরামুল হক। আর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ওলিউজ্জামান বলছেন, হাট ইজারা দেওয়া হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ইজারার সময় শর্ত দেওয়া হয়- পরীক্ষার দিনে কোনো হাট বসানো যাবে না। তবে ইজারাদাররা যদি পরীক্ষার দিনে হাট বসায় তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শনিবার (০৩ আগস্ট) দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সকাল ১০টা থেকে বানেশ্বর সরকারি কলেজে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ডিগ্রী ২য় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা। আর দুপুর ২টা থেকে শুরু হয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষা। বানেশ্বর কলেজ ছাড়াও এই কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয় চারঘাট এমএ হাদী ডিগ্রী কলেজ, সরদহ সরকারি কলেজ, কাটাখালী আদর্শ কলেজ ও বেলপুকুর আইডিয়াল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা।

জানা যায়, প্রতি সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার বানেশ্বর বাজারের হাট বার। বানেশ্বর বাজারে গরু-ছাগলের হাট বসানোর নির্দিষ্ট জায়গা থাকলেও কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাওয়ায় হাট ইজারাদাররা ইচ্ছামত এই কলেজ মাঠে দীর্ঘদিন ধরে গরু-ছাগলের হাট বসায়। যার ফলে পরীক্ষা দিতে আসা ছাত্র-ছাত্রী, কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদেরকে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বেশ কয়েক জন ছাত্র-ছাত্রী জানান, বানেশ্বর ট্রাফিক মোড় থেকে কলেজে পরীক্ষা কক্ষে আসতে তাদের সময় লেগেছে প্রায় ৩০ মিনিট। তাও আবার খুব কষ্টে। গরুর লাথি ও সিংগের আঘাতের ভয়, বখাটে যুবক ও ব্যবসায়ীদের ঠেলাঠেলি, গরুর মল-মূত্রে পোশাক নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার কক্ষে প্রবেশ নিয়ে তাদের সংশয়ে পড়তে হয়।

কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কলেজের ভবনে প্রবেশের মূল রাস্তা এই মাঠ দিয়ে। এই মাঠ দিয়ে কলেজে যাতায়াত করতে হয়। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা ক্লাসের অবসরে মাঠটিতে ক্রিকেটসহ অন্যান্য খেলাধুলা করে থাকে। কিন্তু কলেজ সরকারি হলেও প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার মাঠে গরু ও পানের হাট বসানোর ফলে মাঠটি নষ্ট হতে চলেছে। বিশেষ করে গরুর মল-মূত্রে এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মাঠটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

পাশা-পাশি গরুর পায়ের আঘাতে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই ওই গর্তে পানি জমে যায়। এতে এই সরকারি কলেজে যাওয়ার একটি মাত্র রাস্তা দিয়ে আর চলা-ফেরা করা যায় না। ফলে এ সময় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিকল্প রাস্তায় কলেজে যাতায়াতের জন্য তাদেরকে পোহাতে হয় অনেক কষ্ট।

বানেশ্বর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এসএম একরামুল হক জানান, প্রতি বছর কোরবানির হাট বসে। এবার পরীক্ষার মধ্যে আমরা এই মাঠে গরুর ও পানের হাট না বসানোর জন্য বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পুঠিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর চিঠি দিয়েছি। তারপরও হাট বসেছে। এখানে আমার কিছু করার নেই।

জানতে চাইলে বানেশ্বর হাটের ঠিকাদার ওসমান আলী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওলিউজ্জামান এসে দেখে গেছেন। তারপর আমরা ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকদের যাওযার পথে দুই ধারে বাঁশ দিয়ে ঘিরে রয়েছে। এতে কারো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর