সাঈদ খোকনের উদাসীনতায় আলেমদের ক্ষোভ

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-28 08:55:29

'সকাল এগারোটা থেকে বসে আছি। মেয়রের আসার নাম নেই'- রোববার (৪ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরভবনের ডানপাশের বিশাল করিডরে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন একজন ইমাম।

জোহরের নামাযের ওয়াক্তও শুরু হচ্ছে। ইমামের চোখে মুখে তখন স্পষ্ট বিরক্তি।

ঘটনার সূত্রপাত রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরে নগর ভবনে।

কোরবানির বর্জ্য সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও ডেঙ্গু প্রতিরোধের লক্ষ্যে মসজিদের খতিব ও ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় ও অ্যারোসেল স্প্রে বিতরণ সভার আয়োজন করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।

অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দক্ষিণ সিটির প্রতিটি ওয়ার্ডের ইমাম, খতিবদের নগর ভবনে সকাল ১১টায় আমন্ত্রণ জানানে হয়। কয়েকশ খতিব ও ইমাম তাই যথাসময়ে হাজির হন নগরভবনে। কিন্তু এরপর শুরু হয় অপেক্ষার গল্প। ঘড়ির কাটায় সময় বয়ে যায়, মেয়রের দেখা নেই। আমন্ত্রিত অতিথিদের শুধুই অপেক্ষা।

অগোছালো আয়োজন, মেয়রের উদাসীনতা নিয়ে আমন্ত্রিতদের অনেকেই বিরক্ত, অধৈর্য্য। এক পর্যায়ে তাদের কেউ কেউ অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে যেতে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ান। বেইজ্জতির আশঙ্কায় প্রমোদগুনতে থাকেন নগর ভবনের কর্মকর্তারা। অনেকে তখন আলেমদের বুঝিয়ে শান্ত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

এমন পরিবেশে দুপুর পৌনে একটায় অনুষ্ঠানস্থলে হাজির হন নগর দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। ঢিলেঢালা সাদা ট্র্যাকস্যুট, সাদা টি-শার্ট, সাদা ক্যাপ মাথায় দিয়ে মেয়র খোকন মঞ্চে উঠে উপস্থিত ইমামদের হাত তুলে সালাম জানান। এরপর তরঘড়ি করে শুরু হয় অনুষ্ঠান। সঞ্চালক শুরুতেই পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের ঘোষণা দেন। শুরু হয় তেলাওয়াত, বাধে বিপত্তি।

কারণ, অশুদ্ধ উচ্চারণে সেই তেলাওয়াত শুনে মঞ্চের সামনে থেকে আলেমরা হইচই করে ওঠে। আলেমদের হঠাৎ হট্টোগোলে চমকে ওঠে মেয়র খোকন। কয়েকমুহূর্ত  সবাই যেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়।

তারপর আলেমদের বিক্ষোভে যেন নাস্তানাবুদ হতে না হয় সেজন্য মেয়র দ্রুত মাইক টেনে নিয়ে বলেন, 'কি ভুল পড়ছে, ভুল পড়ছে। দাঁড়ান এক্ষুণি পাল্টে দিচ্ছি'।

এরপর আলেমদের একজন প্রতিনিধি গিয়ে নতুন করে কোরআন তেলাওয়াত শুরু করেন। সেই তেলাওয়াতের পর মাশাল্লাহ বলে উচ্ছ্বাস জানান উপস্থিত আলেমরা।

সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১১ টা থেকে আলেমরা নগরভবনে অপেক্ষা করলেও মেয়র সকালে শান্তিনগরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে আওয়ামী লীগের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানের অংশ নিয়েছিলেন। এরপর নগরভবনে ফিরে নিজের কক্ষেই মিটিং ও বিশ্রামে ব্যস্ত ছিলেন। এছাড়া যে ব্যক্তিকে দিয়ে অশুদ্ধ কোরআন তেলাওয়াত করানো হয় তিনি কোন আলেমও নয়, সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী ছিলেন।

কোরআন তেলাওয়াতের পর সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার পরে মেয়র বক্তব্য দেন। এরপর মেয়র দুই তিনজন ইমামকে কথা বলার জন্য ফ্লোর ওপেন করে দিলে অনুষ্ঠানের বিলম্বে শুরু হওয়া, মেয়রের দেরি হওয়া নিয়ে একজন ইমাম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে বলা হয়েছে ১১ টায় আসতে। আপনি এলেন দেড়টায়। আমাদেরকে এরপর ভবিষ্যতে ডাকা হলে যেন সঠিক সময়টাই বলা হয়। তাহলে আমাদের হয়রানি হতে হয় না।

তখন মেয়র বিড়ম্বনার জন্য আলেম সমাজের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে ভবিষ্যতে এমন হবে না বলেও জানান।

এরপর দ্রুতই মোনাজাত করে মেয়র কয়েকজন ইমামের হাতে অ্যারোসোল স্প্রে তুলে দিয়ে দ্রুত অনুষ্ঠানস্থল থেকে বিদায় নেন তিনি।

আর এভাবেই প্রায় ২ ঘণ্টা সবাইকে অপেক্ষায় রাখলেও ৪৫ মিনিটের মধ্যে মেয়রের মতবিনিময় সভা শেষ হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর