'প্রবাসীদের রক্ষায় মিশনের প্রো-একটিভ ভূমিকা জরুরি'

, জাতীয়

খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | 2023-08-26 01:23:34

প্রবাসী কর্মীদের অধিকার রক্ষায় বিদেশে বাংলাদেশি মিশনকে প্রো-একটিভ ভূমিকা রাখতে হবে। শুধু তাই নয় দেশে ফেরা শ্রমিকদের যথাযথ নিরাপত্তা ও সম্মান দিতে হবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ন কবীর চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে একান্ত সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, প্রবাসী কর্মীদের অধিকার নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। আমরা আন্তর্জাতিক অধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘের যেসকল কনভেনশন বা প্রটোকল রয়েছে তা সই করেছি। কিন্তু এগুলো বাস্তবায়নের জন্য যে পরিমাণ উদ্যোগ দরকার সেটা এখনও নেওয়া হয়নি বা নেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি এমনিতোও জটিল। কারণ অধিকারের বিভিন্ন ধাপ আছে। যেমন একটা হচ্ছে বেতনের বা মজুরির অধিকার, নিরাপত্তার অধিকার, আইনি অধিকার। এসবকে সম্মন্বিতভাবে রক্ষা করার জন্য বিদেশে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। অন্য যে কোন দেশের জন্যও চ্যালেঞ্জ।

রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর বলেন, প্রবাসে বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিটা হল তারা বাংলাদেশে টাকা পাঠাক নির্ধিদায় বা নির্বিঘ্নে। এটাই আমাদের প্রায়ারোটি। তারই অংশ হিসেবে আমাদের যে মিশনগুলো আছে আমরা তাদের যেটুকু কনস্যুলার সহায়তা দেওয়া যায় তার চেষ্টা করি। কিন্ত অধিকার রক্ষাটার বিষয়টি প্রো-একটিভ কাজ। সে প্রো- একটিভ কাজ করার জন্য মিশনগুলোর জনশক্তি নেই, এমনকী আমাদের মানুষিকতাও নেই। সেটা আমাদের প্রশাসনিক সংস্কৃতির অংশ হিসেবে মনে করতে পারি।

হুমায়ুন কবীর বলেন, যেমন আমি একটা উদাহরণ দিতে পারি – ধরুন বিদেশ একটা কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করে। সেখানে কতজন মিশনকর্মী গিয়ে আমরা দেখি তারা কী অবস্থায় রয়েছেন। কী কাজ করেন, কী তাদের সমস্যা। এরকম প্রো- একটিভ মুভমেন্ট আমাদের মধ্যে কম। এক্ষেত্রে কিছু ফিজিক্যাল সাপোর্টের বিষয়ও রয়েছে। আমাদের বিদেশে যে মিশনগুলো আছে সেখানে যথেষ্ট জনবল নেই।

মিশনে আমরা যে জনবল পাঠাই তারা মুলত প্রশাসনিক সংস্কৃতির মানুষ। তারা সেখানে গিয়ে নিজ থেকে স্বপ্রনোদিত হয় উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে সেটা সবাই করতে পারে না। সেটার জন্য তারা যে সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত সেটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংস্কৃতির অংশ। বিদেশে বেশকিছু কাজ করতে গিয়ে যে দক্ষতার প্রয়োজন হয় সেটাও সব সময় থাকে না। ফলে যেটা হয় অধিকার রক্ষার বিষয়টা একটা বড় বিষয়। সেটায় আইনি প্রক্রিয়া আছে, তারা যেখানে কাজ করে সেখানকার সঙ্গে সংযুক্ত হবার বিষয় আছে। কর্মীরা যারা ঘরের বাইরে কাজ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার চেয়ে গৃহে যারা কাজ করেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলা কঠিন। সেখানেও আমাদের যে পরিমাণ উদ্যেগ প্রয়োজন সেখানে আমরা পৌছাতে পারিনি। কিন্তু এটার দরকার পড়বে। যতই মানুষ যেতে থাকবে ততই প্রতিযোগীতামূলক বাজারে সম্মুখীন হবেন এবং ততই এ বিষয়গুলোতে মনযোগী হতে হবে। বিশ্ব শ্রমবাজার বাংলাদেশ নিয়ন্ত্রণ করে না। এটি অনেকটা লোকাল কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করে। জনশক্তি রফতানিকারক অন্যান্য দেশও আছে। প্রতিযোগীতামূলক বাজারে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশের যেটি শক্তি, দক্ষতা সেটার ওপর জোর দিতে হবে। আমি মনে করি যেটুকু পটেনশিয়ালিটি আমাদের পাওয়া উচিত ছিল সে জায়গায় পৌছাতে আরো কাজ করতে হবে।

রাষ্ট্রদূত কবীর আবারও উদাহরণ দিয়ে বলেন, ফিলিপাইন কর্মীদের বিশ্ববাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। কারণ তারা শিক্ষিত ও দক্ষ। তারা গত বছর ৩০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। বাংলাদেশ করেছে ১৪ বিলিয়ন। যদিও তাদের কর্মী বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু তারা টাকা ও সম্মান দুটোয় পায়। কারণ তাদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষায় দেশটি সরকার সোচ্চার। তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিছুদিন আগে কুয়েতে ফিলিপাইনের এক গৃহকর্মীর লাশ ফ্রিজে পাওয়া যায়। এ ঘটনার পর ফিলিপাইন তাদের সমস্থ কর্মী কুয়েত থেকে ফিরিয়ে নিয়েছে। এ যে শক্তিশালী সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং বিষয়টির প্রতি সংবেদনশীল থাকা তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শুধু একটি শ্রমিককে হত্যা করল তা একটা শ্রমিকের বিষয় নয়, গোটা জাতীয় সম্মানের বিষয়। সে দৃষ্টিভঙ্গিটা থাকা দরকার। সেটা না থাকলে আপনি মানুষকে শুধু টাকার অংকে বিচার করবেন। লক্ষ্য করুণ আমরা অনেক বড় বড় কথা বলি জনশক্তি নিয়ে, বক্তুতা বিবৃতি চলে- কিন্তু এখানে এয়ারপোর্টে যখন একজন শ্রমিক নামেন, তাকে যেভাবে হেনস্থা করা হয় সেটা দেখার কেউ নেই এবং এটা না থাকার কোনোও কারণ আমি দেখি না।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর