ঈদযাত্রায় সদরঘাট থেকে চলবে দ্বিগুণ লঞ্চ

ঢাকা, জাতীয়

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-24 15:26:41

পবিত্র ঈদুল আজহা আসন্ন। আগামী ১২ আগস্ট পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে ঈদ উদযাপন করবে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায়। শেকড়ের টানে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দে শামিল হতে ইতোমধ্যেই ঘরমুখো হয়েছেন রাজধানীবাসী। নাড়ির টানে তারা ছুটছেন সড়ক, রেল, আকাশ ও নৌ পথে।

ঈদযাত্রা শুরু হলেও এখনও খুব বেশি ভিড় নেই বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন কিংবা লঞ্চঘাটে। তবে দুই-একদিনের মধ্যেই ভিড় বাড়বে ব্যাপক হারে। বিশেষ করে ৮ তারিখ থেকে ঈদযাত্রীদের চাপ বাড়বে বলে মনে করছেন পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টরা।

প্রতিবারের মতো রাজধানীর বিপুলসংখ্যক মানুষ সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে লঞ্চে করে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছেন। সারা দেশ, বিশেষত দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকা শহরের নদী কেন্দ্রিক যোগাযোগের প্রধান কেন্দ্র সদরঘাট।

এবারের ঈদে সদরঘাটে যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ। সদরঘাটের যাত্রীসেবার মনোন্নয়ন ও সুষ্ঠু নিরাপদ নৌপরিবহন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে নৌমন্ত্রণালয়, বিআইডব্লিউটিসি, লঞ্চ মালিক সমিতি, শ্রমিক ফেডারেশন সমন্বয় সভা করেছে ঢাকা নদী বন্দর।

ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক (বন্দর ও যোগাযোগ) আরিফ উদ্দিন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, সদরঘাট থেকে প্রতিদিন সদরঘাট থেকে ৪৩টি রুটে ৬০ থেকে ৭০টি লঞ্চ ছেড়ে যায়। ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় লঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এবারও যাত্রীদের চাহিদা থাকা সাপেক্ষে লঞ্চের সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। এ নিয়ে সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, আজকের (৫ আগস্ট) সভায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সভার শেষ দিকে অননুমোদিত নৌযান ঈদে চলাচলের জন্য নৌ প্রতিমন্ত্রীর অনুমতি চান বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান। তখন প্রতিমন্ত্রী নৌযানের ফিটনেস ও যাত্রীর চাহিদা সাপেক্ষে তা চলাচলের মৌখিক অনুমতি দেন।

এ সময় লঞ্চ মালিক সমিতির একজন সদস্য বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে আপত্তির কথা জানালে নৌমন্ত্রী ঈদ পরবর্তী সময়ে মালিকদের সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন।

সরেজমিনে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, পন্টুনগুলোতে বড় বড় লঞ্চ বাঁধা রয়েছে। বিকেল তিনটা পর্যন্ত যাত্রীদের চাপ ঘাটে নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে বিকট শব্দে হুঁইসেল বাজিয়ে দুয়েকটা লঞ্চ ঘাট ছেড়ে যাচ্ছে কিংবা ঘাটে আসছে।

লঞ্চের শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ভিড় এখনও শুরু হয়নি। তবে আজ থেকে ঘরমুখো যাত্রীরা আসছেন। কিন্তু আরও দুই-তিনদিন না গেলে এই ভিড় বাড়বে না। বিশেষ করে ১০ তারিখে গার্মেন্টস ছুটি হলে লঞ্চে তিল ধারণের ঠাঁই থাকবে না বলে জানান তারা।

এদিকে লঞ্চে ভিড় না থাকলেও যানজট ও ভোগান্তির আশঙ্কায় অনেক যাত্রী আগেভাগেই লঞ্চে উঠে বসেছেন। ফারহান-৯ নামের একটি লঞ্চে করে পিরোজপুর যাচ্ছেন সাইদুল ইসলাম। লঞ্চ ছাড়বে সন্ধ্যা সাতটায়, তিনি এসেছেন দুপুর ২টায়। সাইদুল বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ভিড় ও ভোগান্তি এড়াতে আগেভাগেই বাড়ি যাচ্ছেন। ঘাট ও লঞ্চের পরিবেশও আগের চেয়ে ভালো।

অপরযাত্রী সৈয়দ সাদ আহসান আলিফ জানান, গুলিস্তান থেকে আড়াই ঘণ্টা সময় নিয়ে তিনি ঘাটে এসেছেন। এরপর আগেভাগে জায়গা নিশ্চিত করতে লঞ্চে উঠে বসেছেন।

লঞ্চযাত্রীদের সুযোগ-সুবিধার জন্য সরকারি পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা সব কাগজে কলমে বাস্তবে তার প্রতিফলন ততটা নেই। সবার আগে লঞ্চের শ্রমিক-কর্মচারীদের ব্যবহার ঠিক করতে হবে। যাত্রী হয়রানি করতে তারা যতটা ওস্তাদ, তাদের দৌরাত্ম্য বন্ধ না করা গেলে কোন সুবিধাই কাজে আসবে না।

আলিফের কথার সত্যতা পাওয়া গেলে কিছুক্ষণ পরেই। বিনা অনুমতিতে লঞ্চে উঠে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলায় লঞ্চের কয়েকজন শ্রমিক কর্মচারী পথরোধ করেন এ প্রতিবেদক ও ভিডিওগ্রাফারের। ‘লঞ্চের কোন দোষ নেই’ জানিয়ে নিজেদের মালিকপক্ষের লোক পরিচয় দিয়ে বিনা অনুমতিতে লঞ্চে প্রবেশের জন্য শাসানো শুরু করেন। পরে অন্যযাত্রী ও লঞ্চের কর্মীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

লঞ্চযাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই দৃশ্য প্রায় প্রতিটা লঞ্চেই। ১০/১২ জন গুন্ডা প্রকৃতির লোক থাকেন যারা নিজেদের লঞ্চের শ্রমিক/কর্মচারী/মালিকপক্ষের লোক বলে পরিচয় দেন। সুযোগ পেলেই যাত্রীদের সঙ্গে চূড়ান্ত দুর্ব্যবহার ও হয়রানি করেন। গত বছরের ঈদে এমনি একদল শ্রমিকদের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করায় তারা এক যাত্রীকে লঞ্চ থেকে মাঝ নদীতে ফেলে দিয়ে হত্য করেন বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা।

অভিযোগ করে যাত্রীরা আরও বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীরা একটা সিন্ডিকেট। তারা প্রতিটা লঞ্চের ডেকে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠান, বিছানার চাদর বিছিয়ে জায়গা ভাড়া দেন, লঞ্চে হকার তুলে পান সিগারেট বিক্রির ব্যবস্থা করে দিয়ে পরে চাঁদা তোলেন এবং অবৈধ মালামাল পরিবহনে মদত দেন। লঞ্চ মালিকরা এইসব লোকজনকে প্রশ্রয় দেন, যাত্রীরা থাকেন জিম্মি হয়ে।

ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠু করতে নৌমন্ত্রণালয় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে তিনি বলেন, গতবার ঈদযাত্রা নিরাপদ ও সুষ্ঠু করার জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় প্রশংসিত হয়েছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। ইতোমধ্যেই সমন্বয় সভার মধ্য দিয়ে সবাইকে তাদের দায়িত্ব ভাগ করে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর