১৪ বছরেই কাঁচ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ

, জাতীয়

বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম | 2023-09-01 09:29:35

১৪ বছর আগেও চাহিদা পূরণ করতে কাঁচ আমদানি করতে হতো বিদেশ থেকে। ২০০৫ সালে চট্টগ্রামের বাড়বকুন্ড ও ময়মনসিংহের ভালুকায় পর পর দুটি কাঁচ কারখানা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশই উৎপাদিত হচ্ছে বাংলাদেশে। দেশে উৎপাদিত কাঁচে প্রতি বছর লেনদেন হচ্ছে ৮২০ কোটি টাকার মতো।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর ২০০৫ সালের জুন পর্যন্ত কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে কাঁচ আমদানি করতে হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে। এখন দেশে প্রতি বছর কাঁচের ব্যবহার বাড়ছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ হারে। স্বচ্ছ, লুকিং ও টেম্পার্ড গ্লাস তৈরিতে সক্ষম দেশের নামকরা পিএইচপি ফ্যামিলি ও নাসির গ্রুপের মালিকানাধীন দুটি কাঁচ কারখানা। বহুতল ভবন, আসবাবপত্র ও ইন্টেরিয়র ডিজাইনে ব্যবহৃত হচ্ছে উন্নতমানের এসব কাঁচ।

কাঁচের ব্যবহার সম্পর্কে বলতে গিয়ে পিএইচপি ফ্লোট ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমির হোসেন সোহেল বলেন, ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি কাঁচ উৎপাদিত হয় চীনে। ২৫০টি কারখানার প্রতিটিতেই প্রতিদিনই ৬০০ টনের কাছাকাছি। এর পর কাঁচ উৎপাদনকারীর তালিকায় রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কাঁচ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হলো জাপানের আশাহী। সারা পৃথিবীতে তাদের ৪৩টি কারখানা রয়েছে। ব্যাংককের একটি কারখানার একটি পরিদর্শনে গেলে আশাহীর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বাংলাদেশের কাঁচ ব্যবহারের আগাম ধারণা দেন। ২০ বছর পর থাইল্যান্ডের মতোই কাঁচের ব্যবহার বাড়বে বাংলাদেশের। বর্তমানে থাইল্যান্ডে কাঁচের প্রতিদিনের উৎপাদন ৫ হাজার টন। অর্থাৎ বাংলাদেশের চেয়ে ১০ গুণ বেশি।’

ছবি: পিএইচপির কারখানায় কাঁচ উৎপাদন

দেশীয় উৎপাদিত প্রতিদিনের ৪৫০ টনের পর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় প্রতিদিন ৫০ টনের মতো। উচ্চমূল্যের এসব কাঁচের মধ্যে রয়েছে রঙিন ও বাঁকানো। বাড়বকুন্ডের পিএইচপির কাঁচ কারখানায় প্রতিদিন ১৫০ টন ও ভালুকায় নাসির গ্রুপের কাঁচ কারখানায় ৩০০ টন উৎপাদিত হচ্ছে। এ খাত থেকে ভ্যাট, আয়কর ও কাঁচামালের আমদানি শুল্ক বাবদ সরকার প্রায় ২০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় করে।

দেশের উৎপাদিত ৪৫০ টন কাঁচের মধ্যে ১৫০ টন লুকিং ও টেম্পার্ড। দেশে কাঁচ ব্যবহারের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, ‘আধুনিক ভবনের নান্দনিক সৌন্দর্য বাড়ানো ছাড়াও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এখন ভবন তৈরিতে কাঁচের ব্যবহার বাড়ছে। তাপ নিরোধক কাঁচ এমনকি কাঁচের সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রযুক্তিও এখন বাজারে এসে গেছে। নান্দনিক সৌন্দর্য্যরে পাশাপাশি গ্রিন বিল্ডিং নির্মাণ করতে হলে ভবিষ্যতে কাঁচের ব্যবহার বাড়তেই থাকবে’।

এর মধ্যে কাঁচ কারখানা আধুনিকায়নে হাত দিয়েছে পিএইচপি ফ্যামিলি। ১৫০ টন থেকে ৩০০ টনে উন্নীত হবে আগামী এক বছরের মধ্যে। এই কাঁচ কারখানায় দেশে প্রথম উৎপাদিত হবে তাপ নিরোধক (লয়ি), সাউন্ড প্রুপ ও স্যান্ড ব্লাস্টিং। লয়ি হলো সূর্যের আলো ঘরে ঢুকবে কিন্তু তাপ ঢুকবে না। সাউন্ড প্রুপ হলো বাইরের শব্দ ঢুকবে না ঘরের ভেতর। আর স্যান্ড ব্লাস্টিং ব্যবহার করা হবে টয়লেটে কিংবা ব্যক্তিগত ও গোপনীয় কোনো ঘরে, যেখানে বাইরে থেকে মানবদেহের অস্তিত্ব বোঝা যাবে না। এ তিন ধরনের কাঁচের ব্যবহার এখনো রয়েছে বাংলাদেশে। তবে সেগুলো আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। আগামী এক বছর পর সব ধরনের কাঁচ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ। অর্থাৎ আমদানিনির্ভর বিশেষায়িত এ শিল্পে বাংলাদেশও এগিয়ে যাবে।

কাঁচ উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হলো এক ধরনের বালি, যা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ও পাহাড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ রয়েছে। এরপর লাগে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল।

এ সম্পর্কিত আরও খবর