চলছে মানব পাচার, মামলাতেও সমাধান নেই!

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-27 17:53:09

মৃত্যু ঝুঁকি জেনেও ভাগ্য বদলাতে মানব পাচারকারীদের প্রলোভনের শিকার হচ্ছে মানুষ। স্বচ্ছল জীবনের আশায় তারা ঝুঁকিপূর্ণ পথ ব্যবহার করে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসতে হচ্ছে এসব আশাহত মানুষকে। মানব পাচারের শিকার হওয়া এমন মানুষের মধ্যে বাংলাদেশিদের নাম বারবারই উঠে আসে।

সর্বশেষ মে মাসে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। সেখানে নিখোঁজ ৩৯ বাংলাদেশির নাম-পরিচয় পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ২২ জন ছিলেন বৃহত্তর সিলেটের অধিবাসী।

এ সকল ঘটনায় র‍্যাব পুলিশ, দালাল চক্রের একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। কিন্তু মামলার দীর্ঘসূত্রিতা আর বাদীর মামলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় শেষ পর্যন্ত তারাও আইনের ফাঁক গলে বের হয়ে যায়।  আবার কোন কোন ক্ষেত্রে পাচারকারীদের সঙ্গে ভুক্তভোগীদের আপস-মীমাংসাও হয়।

জানা যায়, ২০১২ সালে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন প্রণয়নের পর থেকে এই আইনে অনেক মামলার হলেও নিষ্পত্তির হার কম।

পুলিশ সদর দফতরের মানব পাচার মনিটিরিং সেল সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মানব পাচার আইন কার্যকরের পর থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত সারা দেশে ৫ হাজার ৭১৬টি মামলা হয়েছে।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর মধ্যে মাত্র ২৪৭টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আদালত স্থানান্তর করা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৫টি মামলার। এখনো বিচারাধীন আছে প্রায় ৪ হাজার ৯৪টি মামলা। এমন বিচারহীনতার কারণে জামিনে বের হয়ে আবারো পাচার কাজে জড়িয়ে পড়ে আসামিরা।

এদিকে ২০১৮ সালের অক্টোবরে মেক্সিকোর দুর্গম পথে প্রায় ২০০ বাংলাদেশি আটক হন। তাঁদের গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র পৌঁছাতে আগ্রহী অবৈধ অভিবাসীদের দুবাই থেকে ব্রাজিলে নেওয়া হয়। এরপর বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর, পানামা সিটি আর গুয়াতেমালা হয়ে নেওয়া হয় মেক্সিকোতে।

চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে আটক করা হয় ১৯২ জন বাংলাদেশিকে। তাঁদের গন্তব্য ছিল মালয়েশিয়া।

এত অঘটনের পরও কেন মানবপাচার থামছে না? এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রাণালয় সূত্র বলছে, মানব পাচার সমস্যার সমাধান খুঁজতে পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান এবং বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকেই এই সংকটের সমাধানের পথ আসবে।

তবে অনেকেই বলছেন, মানবপাচারকারী চক্রের সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে এ সমস্যার সমাধান হবে।

র‍্যাবের মুখপাত্র এমরানুল হাসান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, যাদের মাধ্যমে মানুষ পাচার হচ্ছে। সেই গ্রুপ বা সিন্ডিকেটের প্রায় শতাধিক সদস্যকে আটক করেছি আমরা। এ সিন্ডিকেটের সক্রিয়তাকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে র‍্যাব।

অন্যদিকে মানব পাচার কমিয়ে আনার সমাধান কী জানতে চাইলে, মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সালমা সুলতানা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে অনেকে আদালত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। আবার অনেক সময় পুলিশও মানব পাচার মামলার আসামিদের ধরতে অনীহা দেখায়। সবকিছু মিলে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা সুযোগ পেয়ে যায়। এ বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, মানবপাচার আইনটি চমৎকার একটি আইন। তদন্ত, শাস্তিসহ বেশ কিছু বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। মামলাগুলো নিষ্পত্তি যদি একটু দ্রুত হত। সেক্ষেত্রে অপরাধীরা শাস্তি পেলে মানব পাচারের ঘটনাগুলো কমে আসতো।

এ সম্পর্কিত আরও খবর