রাজশাহীর হাটে বাড়ছে ভারতীয় গরু, শঙ্কায় খামারিরা

রাজশাহী, জাতীয়

হাসান আদিব, স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-31 06:22:01

কোরবানির ঈদের বাকি আর মাত্র পাঁচ দিন। ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে রাজশাহীর পশুর হাটগুলো। রাজশাহীতে সবচেয়ে বড় পশুর হাট বসে মহানগরীর সিটি হাটে। নগরীর বাইরে বাগমারার তাহেরপুর, পুঠিয়ার বানেশ্বর, কাকনহাট, মচমইল, কেশরহাট, মহিষালবাড়ির পশুহাটেও ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যাপক আনাগোনা দেখা যায়। গত সপ্তাহ থেকে এসব হাটে খামারিরা তাদের গরু তুললেও কেনাবেচা জমেছে গত দুই/তিন দিন ধরে।

এদিকে, প্রশাসনের কড়া নজরদারিতে প্রথম দিকে হাটে দেখা যায়নি ভারতীয় গরু। তবে হঠাৎ গত দুই দিনে সিটি হাটসহ বিভিন্ন হাটে ভারতীয় গরুর আমদানি বেড়েছে। ভারতীয় গরু দামে সস্তা হওয়ায় ক্রেতাও বেশি। ফলে লোকসানের শঙ্কা মাথায় নিয়ে হাটে হাটে গরু নিয়ে ঘুরছেন স্থানীয় খামারিরা।

রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বছর রাজশাহীতে কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা চার লাখ চার হাজার ৫১৯টি। আর জেলার ৯টি উপজেলায় ১৭ হাজার ৭০০ খামারে তিন লাখ ৬৯ হাজার ৫৭৪টি কোরবানির পশু লালন-পালন করা হয়েছে। এছাড়া বসতবাড়িতে আরও প্রায় ৫০ হাজার পশু রয়েছে। ফলে অঞ্চলভিত্তিক উৎপাদিত পশু দিয়ে কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। অথচ এরই মধ্যে হাটে ঢুকেছে কয়েক হাজার ভারতীয় গরু।

জানা যায়, রাজশাহী সীমান্তে অনুমোদিত ছয়টি বিট খাটাল রয়েছে। যা দিয়ে সীমান্ত হয়ে ভারতীয় গরু রাজশাহী ঢোকে। এছাড়া পার্শ্ববর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁর আরও কয়েকটি সীমান্ত খাটাল হয়ে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করে। দেশি গরুর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে গত ১৬ জুলাই থেকে সবগুলো খাটাল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। খাটালগুলো দিয়ে যাতে ভারতীয় গরু প্রবেশ না করতে পারে সেই বিষয়ে সীমান্তে বিজিবি, কোস্ট গার্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তবে সীমান্তে বিভিন্ন পক্ষকে ম্যানেজ করে গত দুই সপ্তাহে দেদারসে ভারতীয় গরু রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্ত খাটাল হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারতে বন্যার কারণে ঐ সময়ে ব্যাপকহারে গরু বাংলাদেশে পার করেছে ওপারের বাসিন্দারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দু’জন খাটাল ইজারাদার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, ১৬ জুলাই খাটাল বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পর তা চার থেকে পাঁচ দিন বন্ধ ছিল। পরে ২০-২২ জুলাই থেকে বিজিবি, কোস্টগার্ড সদস্যসহ বিভিন্ন পক্ষকে ম্যানেজ করে গরু ঢোকাতে হয়েছে। ৩০ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত দিনে এক একটি খাটাল দিয়ে ১২০০ থেকে ১৫০০ গরু ঢুকেছে।

তারা বলেন, হাটে স্থানীয় খামারিরা তিন থেকে চার মণের গরু ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা বিক্রির জন্য দাম তোলে। তবে একই ওজনের ভারতীয় গরু ৫৫ থেকে ৬০ হাজারে ছেড়ে দিলেও সব খরচা বাদ দিয়ে গরুপ্রতি ১০ হাজার টাকা লাভ থাকবে।

রোববার (৪ আগস্ট) রাজশাহী সিটি হাটে গিয়ে ভারতীয় গরু বিক্রি করতে দেখা যায় মেহের আলী ও হাসিবুল ইসলাম নামে দুই ব্যবসায়ীকে। তারা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে জানান, গত ২৬ জুলাই তারা দুই জন ৯ জোড়া গরু পার করতে পেরেছেন। খাটালে জোড়াপ্রতি ছয় থেকে সাত হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে গরু দেশে ঢোকাতে হয়েছে। তারপর গোপনে চারজনের বসতবাড়ির গোয়ালঘরে রেখে আটটি গরু হাটে নিয়ে এসেছেন। তার মধ্যে তিনটি বিক্রিও করেছেন।

পবার খামারি আমজাদ হোসেন বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আমি চারটি গরু গত ৯/১০ মাস ধরে লালন-পালন করেছি। গরুর খাবারের দাম অনেক। দুই ছেলে ও আমি মিলে গরুগুলো হাটে নিয়ে এসেছি। ৭৫ থেকে ৯০ হাজারের মধ্যে দাম পেলে গরুগুলো বিক্রি করব। কেউ এখনো ৬২ থেকে ৬৫ হাজারের বেশি দাম বলেনি।’

বাগমারা তরুণ উদ্যোক্তা খামারি আহসান উল্লাহ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘ভারতের গরুতে বাজার ভরে গেছে। তাহলে স্থানীয় খামারিরা কীভাবে বাঁচবে?’

রাজশাহী সিটি হাটের ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, ‘ভারতীয় গরুর চেয়ে দেশি গরুই হাটে বেশি। তবে ভারতীয় গরু যে নেই, তা বললে মিথ্যা বলা হবে।’

জানতে চাইলে রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের উপ-পরিচালক (ডিডি) কল্যাণ কুমার ফৌজদার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘গত ১৬ জুলাইয়ের পর থেকে ভারতীয় গরু যাতে না ঢোকে সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছি। তারা সীমান্তে ভারতীয় গরুর প্রবেশ ঠেকাতে তৎপর রয়েছে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর