বুথ থাকলেও চালু নেই জাল নোট শনাক্তের মেশিন

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী | 2023-08-29 23:18:33

রাজশাহী অঞ্চলের সবচেয়ে বড় কোরবানির পশুর হাট বসে মহানগরীর সিটি বাইপাস হাটে। সপ্তাহের রোববার এই হাট বসলেও কোরবানি ঈদকে কেন্দ্র করে চলতি সপ্তাহে প্রতিদিনই হাটে দেখা যাচ্ছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনোগোনা। ফলে প্রতিদিন কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে এই পশুরহাটে। পশু কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে মৌসুম এলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে জাল টাকার কারবারিরা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী- এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় এ হাটে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে বুথ বসিয়ে মেশিনে জাল নোট শনাক্তকরণের ব্যবস্থা থাকার কথা। তবে সিটি হাটে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের বুথ থাকলেও নেই মেশিনে জাল নোট শনাক্তকরণের ব্যবস্থা। ব্যাংক কর্মকর্তারা বিদ্যুৎ লাইন না পাওয়ার ‘অজুহাত’ তুলে ব্যাগবন্দি করে রেখেছেন মেশিন। অথচ তা জানেন না হাট কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা হাটে বুথ ও মেশিন দিয়ে নোট  শনাক্তের জন্য সরকারি ও বাণিজ্যিক কয়েকটি ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছেন।

ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে- জাল টাকা কারবারিদের অপতৎপরতা ঠেকাতে রাজশাহীর সিটি হাটে ১০টি অস্থায়ী জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন নিয়ে বসবে দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। প্রতিটি হাটে থাকবে জাল নোট শনাক্তকরণ বুথ। এই বুথগুলো থেকে হাট শুরুর দিন থেকে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে পশু ব্যবসায়ীদের বিনা খরচে নোট যাচাই সংক্রান্ত সেবা দেওয়া হবে।

সরজমিনে সিটি হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটের বিভিন্ন স্থানে জাল নোট শনাক্তকরণ বুথ স্থাপন করেছে ইসলামী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এনআরবিসি ব্যাংক। তবে ব্যাংকগুলোর কোনো কর্মকর্তারাই মেশিন নিয়ে বুথে আসেন নি। এমনকি কাউকে নোট চেক করতেও দেখা যায় নি। ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সেখানে বসে খোশ গল্পে সময় পার করতে দেখা যায়।

তবে সিটি হাট ইজারাদার কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে দু’টি জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন রাখা হয়েছে। একটি হাটের মূল ফটকে ও অপরটি হাট ঘরে। তবে দুটির মধ্যে মূল ফটকের মেশিনটি বিকল। ফলে হাটে জাল টাকা শনাক্তকরণ করতে না পেরে বাধ্য হয়েই অনেকে নিজ দায়িত্বে নিরাপত্তাহীনভাবেই লেনদেন করছেন।

কুষ্টিয়ার মিরপুর থেকে ১২টি গরু নিয়ে এসেছিলেন বেলাল মাহমুদ। ৪টি গরু তিনি বিক্রি করেছেন ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ টাকায়। তিনি নিজে যাচাই করে টাকা নিয়েছেন। তিনি বলেন, হাটে জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন থাকার কথা। নেই তাই বলে তো আর বেচাকেনা থেমে থাকবে না। আমরা নিজেরাই জাল নোট পরীক্ষা করছি। আল্লাহ ভরসা, যা হয় হবে।

জানতে চাইলে ওয়ান ব্যাংকের কর্মকর্তা শাকিল জানান, ‘আমরা মেশিন নিয়ে এসেছি। হাট কর্তৃপক্ষ আমাদের কোন রকম টেবিল বা ইলেক্ট্রিনিক লাইনের ব্যবস্থা করে দেয় নি। এজন্য আমরা জাল নোট শনাক্তকারণ মেশিন চালাতে পারছি না। তবে হাতে চেক করে দিচ্ছি। হাট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা করে দিলে আমাদের অবশ্যই মেশিন দিয়েই চেক করে দেয়া হতো বলে জানান এই কর্মকর্তা।’

জানতে চাইলে রাজশাহীর সিটি হাট ইজারাদার আতিকুর রহমান কালু বলেন, ‘ব্যাংকের কর্মকর্তারা যে বিদ্যুৎ পাননি, সে বিষয়টি আমি জানিনা। আমার দু’টি মেশিন আছে। একটি চলছে আর একটি নষ্ট হয়েছে। আমি সেটিকে ঠিক করিয়ে নিবো। তা ছাড়া আমরা বারবার মাইকিং করে সবাইকে নোট চেক করা মেশিন দিয়েই টাকা নিতে বলছি।’

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর