ঢাকার মাদক সাম্রাজ্য শতাধিক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে!

, জাতীয়

সিনিয়র ও স্টাফ করেসপন্ডেন্টস | 2023-08-23 13:23:39

ঢাকা: রাজধানীর মাদকের সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী। প্রশাসনের নাকের ডগায় বসেই বছরের পর বছর ধরে নিজেদের সাম্রাজ্যের পরিধি বাড়িয়ে চলেছেন তারা। এমনটিই উঠে এসেছে পুলিশের দেওয়া তথ্যে।

প্রতিদিন শহরের ৫ শতাধিক স্পটে মাদকের কেনাবেচা চলছে অনেকটা খোলামেলাভাবেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাদক দমনের নির্দেশনার পরই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ইতিমধ্যে তৈরি করেছে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা। এসব মাদক ব্যবসায়ীদের কেউবা হোটেল ব্যবসা কেউবা আবার জড়িত মানি এক্সেচেঞ্জ ব্যবসায়ের সাথে। মূলত এসব হোটেল ও মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ের আড়ালেই তারা সম্প্রসারিত করে চলেছে নিজেদের মাদকের সাম্রাজ্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ের নিয়ন্ত্রণকারীরা মূলত স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় তাদের কাযর্ক্রম পরিচালনা করে। পুলিশের সূত্র মতে, বর্তমানে মোহাম্মদপুরের মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করছে নাদিম ওরফে পচিশ, আবদুল্লাহপুর নিয়ন্ত্রণ করছে ফজলুর রহমান, কাওলায় আধিপত্য বিস্তার করছে মহুয়া হোটেলের মালিক তৈমুর। এমন শতাধিক গডফাদার রয়েছে ঢাকাতেই। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা।

মোহাম্মদপুরের মাদক ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণকারী নাদিম ওরফে পচিশ সম্পর্কে র্যাব-২ এর কমান্ডিং অফিসার (সিও) লে. কর্নেল আনোয়ারুজ্জামান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমাদের কাছে মাদক ব্যবসায়ীর যে তালিকা আছে, সেই তালিকা উপর ভিত্তি করেই বিশেষ অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। এই তালিকার যে মাদক ব্যবসায়ীদের নাম আছে, তাদের একজনও অভিযান থেকে বাদ যাবে না। সেটা যে কেউ হোক না কেন।

তবে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি এখনো শেষ হয়নি বলে জানান পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের হাতে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা রয়েছে। তবে এই তালিকা দিনে দিনে আরো দীর্ঘ হচ্ছে। আর এসব মাদক ব্যবসায়ীদের যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন তারাও রেহাই পাবেন না। তাদেরকেও এই তালিকায় আনা হবে।

র্যাব-পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযাান শুরু হয় চলতি মাসের চার তারিখে। তারপর থেকে এ পর্যন্ত আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে ২৫ জনের বেশী মাদক ব্যবসায়ী। ২ হাজার ৪৭১ জন গ্রেফতারের পাশাপাশি ২৮ কোটি টাকার মাদক দ্রব্য জব্দ করেছে র্যাব। অন্যদিকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ৬৩ লাখ ৯ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করেছে। একই সময়ে ফেনসিডিল আটক করা হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ২২৬ বোতল। অভিযান শুরুর পর থেকে অনেক মাদক ব্যবসায়ি ইতিমধ্যে গা-ঢাকা দিয়েছে। তাদের খুঁজে বের করতে কাজ করছে র্যাব-পুলিশ।

এদিকে সারাদেশে চলমান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের সময় সোমবার (২১ মে) রাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ১১ জন মাদক ব্যবসায়ীসহ গত ৫ দিনে ২৮ জন নিহত হয়েছেন।

বন্ধুকযুদ্ধে নিহতের বিষয়ে র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, সারদেশে একযোগে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। এত বড় একটা ঘটনা, এখানে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে ১০/১১ জন নিহত হতেই পারে, এটা স্বাভাবিক ঘটনা।

অন্যদিকে হযরত শাহজলাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে মাদক পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন মাদক ব্যবসায়িরা। এই বিমানবন্দরটির মতো দেশের সীমান্তের ৬৭টি পয়েন্টকে মাদকের বিষয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এই বিষয়ে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন শিমুল বার্তা২৪কমকে বলেন, বিমানবন্দরকে মাদক পাচারের রুট হিসেবে ব্যবহার করার সাহস মাদক ব্যবসায়ী আর পাচ্ছে না। এই এলাকায় কোন অপরাধী, একচুলও ছাড় পাবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর